ক্রুণালের পর করোনা আক্রান্ত ভারতের দুই স্পিনার, তিনজনই থাকছেন শ্রীলঙ্কায়
ক্রুণাল পাণ্ডিয়া করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর আইসোলেশনে চলে গিয়েছিলেন আরও ৮ ক্রিকেটার। তাঁদের মধ্যেই এবার দুই স্পিনারের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এল। ভারতীয় দল আজ কলম্বো থেকে দেশে ফিরলেও ক্রুণালের সঙ্গে তাই যুজবেন্দ্র চাহাল ও কৃষ্ণাপ্পা গৌতম থেকে গেলেন শ্রীলঙ্কাতেই। শ্রীলঙ্কায় দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট ভারতীয় কোচ রাহুল দ্রাবিড় শেষ ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরও তরুণ ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তরুণ ক্রিকেটারদের পাশে
শেষ ম্যাচে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরেও ব্যাটসম্যানদের পাশেই রয়েছেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তাঁর কথায়, তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়েই শ্রীলঙ্কা সফরের দল গড়া হয়েছিল। ভালো বোলিং, তা স্পিন বা পেস যা-ই হোক না কেন, মোকাবিলার জন্য প্রতিকূলতার মধ্যেও কঠিন লড়াই করতে হয়। আমাদের কেরিয়ারের প্রথম দিকেও এমন পরিস্থিতি সামলেই আমরা এগিয়েছি। শুরুর সময় কেউই আমরা পারফেক্ট ছিলাম না। সে আমাদের প্রজন্মই হোক, বা যে কোনও, তবে এর থেকেই অভিজ্ঞতা বাড়ে। সময় দিতে হবে, অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সঙ্গে থাকতে থাকতেই তরুণরা সমৃদ্ধ হয়। শিখর ধাওয়ান ছাড়া যাঁরাই খেলেছেন, সকলেই তরুণ। তবে এমন পরিস্থিতি সব সময় আসেও না। শ্রীলঙ্কা দলে কয়েকজন ব্যাটসম্যান নানা কারণে না থাকলেও তাঁদের বোলিং আন্তর্জাতিক মানেরই ছিল। তরুণ ক্রিকেটাররা অভিজ্ঞতা বাড়িয়েই নিজেদের উন্নত করবেন। তাঁদের আরও সুযোগ দিলেই সেটা সম্ভব হবে।
বিকল্প কৌশলের সন্ধান
শেষ ম্যাচটি খেলা হয়েছিল ফ্রেশ পিচে। তবে উপমহাদেশের পিচের মতোই তা স্পিন সহায়ক ছিল। ব্যাটিং করা যে সহজ ছিল না, সেটা শ্রীলঙ্কার ইনিংসেও দেখা গিয়েছে। লো স্কোরিং ম্যাচ জিতে সিরিজের দখল নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। দ্রাবিড় বলেন, আমরা যখন ক্রিকেট শুরু করি তখন ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশি ঘূর্ণি পিচ হতো। বল বেশি ঘুরতো। কিছু ক্ষেত্রে আন্ডার প্রিপেয়ার্ড পিচেও খেলেছি। কিন্তু আমাদের এই দলে প্রতিভার অভাব নেই, তা স্পিন বোলিংই হোক বা ব্যাটিং। তবে অন্যরকম পিচে কী ধরনের বৈচিত্র্যময় শট নিতে হবে সে ব্যাপারে ক্রিকেটারদের আরও অভিজ্ঞতা জরুরি। আমাদেরই আরও কিছু বিকল্প ভাবতে হবে।
সফর থেকে শিক্ষা
ক্রুণাল পাণ্ডিয়ার করোনা আক্রান্ত হওয়া এবং তার জন্য আরও আট ক্রিকেটার, যাঁদের মধ্যে প্রায় সকলেই ব্যাটসম্যান, আইসোলেশনে চলে যান। ভারতের হাতে মাত্র পাঁচ ব্যাটসম্যানই ছিল। পাঁচ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা যে সহজ নয় সেটা বুঝিয়ে দ্রাবিড় বলেন, এই পরিস্থিতিতে দল যেভাবে দ্বিতীয় ম্যাচে লড়াই করেছে সেটাই ইতিবাচক দিক। খেলার গতিপ্রকৃতি একটু এদিক-ওদিক হলেই ওই ম্যাচটা আমরা জিততেও পারতাম। আমাদের ক্রিকেটাররা ১৬০, ১৮০ বা ২০০ রান তুলে জিততে অভ্যস্ত। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতে ১৩০-১৪০ রানের পুঁজি নিয়েও জেতার বিষয়টি রপ্ত করতে শ্রীলঙ্কা সফরের অভিজ্ঞতা শেখার কাজে সহায়ক হবে।
সন্তুষ্ট কোচ
শ্রীলঙ্কা সফরে তিনটি করে একদিনের আন্তর্জাতিক জন্য মাস দেড়েক জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। এটা যে সহজ নয় তা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দ্রাবিড় এই নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, হোটেল আর মাঠ ছাড়া এই সময়কালে সকলেই আমরা আর কিছু দেখতে পারিনি। এমনকী হোটেলেও কিছু নির্দিষ্ট অংশেই আমাদের গতিবিধি নির্দিষ্ট করা ছিল। এই পরিস্থিতিতে যে স্পিরিট বজায় রেখে সকলে খেলেছেন, যে উদ্যম, কঠোর পরিশ্রম দেখেছি তাতে আমি কারও প্রয়াসেই কোনও খামতি দেখিনি। শিখর, ভুবনেশ্বর কুমার ও লিডারশিপ গ্রুপ মিলে যে আবহ তৈরি করেছিলেন তা অনবদ্য ছিবল। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও ক্রিকেট খেলতে পারায় সকলেই ভাগ্যবান। বিগত দেড় বছরে বহু মানুষ কঠিন সময়ে বহু কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। সেই নিরিখে আমরা ভাগ্যবান যা করতে চাই, তা করতে পারায়। গত ৪৫ দিনে আমাদের দলের ক্রিকেটাররা ৬টি ম্যাচ খেলার জন্য যা করেছেন সেজন্য আমি গর্বিত।
ফের করোনার থাবা
গত ২৭ জুলাই ক্রুণাল পাণ্ডিয়ার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। তাঁর সংস্পর্শে আসা ৮ ক্রিকেটারকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়। বুধ ও বৃহস্পতিবার শেষ দুটি ম্যাচ তাঁরা খেলতে পারেননি। আজ জানা গিয়েছে, আইসোলেশনে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল ও স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার কৃষ্ণাপ্পা গৌতমের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। অথচ গতকালই তাঁদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। আজ করোনা পজিটিভ আসায় তাঁরা শ্রীলঙ্কাতেই থাকবেন ক্রুণাল পাণ্ডিয়ার সঙ্গে। শ্রীলঙ্কা সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, করোনা আক্রান্তকে অন্তত ১০ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে। তারপর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে তবেই নিভৃতবাস থেকে মুক্তি মিলবে। এই পরিস্থিতিতে আইসোলেশনে থাকা সূর্যকুমার যাদব ও পৃথ্বী শ কবে ইংল্যান্ডে টেস্ট দলের সঙ্গে যোগ দেবেন তা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। জানা গিয়েছে, হার্দিক, পৃথ্বী, সূর্য, মণীশ পাণ্ডে, দীপক চাহার ও ঈশান কিষাণ আলাদা বিমানে দেশে ফিরবেন।