ঋদ্ধিমানের কাছে অভিযুক্ত সাংবাদিকের নাম জানতে চাইল বিসিসিআই, সৌরভ কি অস্বস্তিতে পড়ছেন?
ঋদ্ধিমান সাহার চাঞ্চল্যকর দাবিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে। আর তারই জেরে সাংবাদিক তথা সংবাদমাধ্যমের জন্য নয়া বিধিনিষেধ চালু করতে চাইছে বিসিসিআই। ঋদ্ধিমানের কাছে হুমকি দেওয়া সাংবাদিকের নামও বিসিসিআইয়ের তরফে চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলে খবর। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সাংবাদিকের নাম নিয়ে চর্চা চলছে তিনি আবার বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরও ঘনিষ্ঠ।
সাহসী ঋদ্ধি নড়ালেন ভারতের ভিত
ঋদ্ধিমান সাহা ভারতীয় টেস্ট দল থেকে বাদ যাওয়ার পরই একের পর এক বোমা ফাটিয়েছেন। যা নড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের ভিত। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিসিসিআইয়ের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই তাঁর ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে অনেকে যেভাবে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন বা প্রভাব ফলানোর চেষ্টা করছেন তাকে বোর্ডের অনেকেই ভালোভাবে নিচ্ছেন না। ঋদ্ধি দল থেকে বাদ পড়ার পর প্রোটোকল মেনেই মুখ খুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে কথা দিয়েছিলেন তিনি যতদিন বোর্ডে আছেন ঋদ্ধির চিন্তার কিছু নেই। কানপুরে ঘাড়ে ব্যথা নিয়েও লড়াকু অপরাজিত ৬১ রানের ইনিংস খেলে ভারতের পরাজয় রুখতে বড় ভূমিকা নেন ঋদ্ধি। মুম্বই টেস্ট খেলার পর তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলানো হয়নি।
অবাক করছে সিএবি!
ভারতীয় কোচ রাহুল দ্রাবিড় যতই দাবি করুন না কেন ঋষভ পন্থ দেশের ১ নম্বর উইকেটকিপার, সেখানে ঋদ্ধিকে বাদ দেওয়ার কারণই জানাতে পারেননি নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মা। বয়স বা ফিটনেস বাধা নয় বলেও দাবি তাঁর। তবে কী কারণে বাদ? তার সদুত্তর এখনও নেই। তার চেয়েও অবাক করার মতো বিষয় হলো, ঋদ্ধিমানের পাশে নেই সিএবি। চেতনকে দিয়ে ইডেন বেল বাজিয়েছে সিএবি, যার পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে সিএবি কর্তাদের। সৌরভের সঙ্গে কথোপকথন ঋদ্ধির ফাঁস করা উচিত হয়নি বলে সিএবি সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন। সৌরভের দাদা চেতনের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন গালভরা হাসি নিয়ে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যখন অন্যায়ভাবে ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিলেন তখন জগমোহন ডালমিয়ার সিএবি-সহ বাংলার ক্রিকেট মহল গর্জে উঠেছিল। তাহলে কীসের জন্য ঋদ্ধিমানের পাশে দাঁড়াচ্ছে না ডালমিয়া-পুত্র অভিষেকের নেতৃত্বাধীন সিএবি?
সৌরভ কথা রাখেননি?
সিএবির অন্দরে কান পাতলে সৌরভকে নিয়ে অসন্তোষের কথাও শোনা যাচ্ছে। সৌরভ সিএবিতে থাকার সময় যে ক্রিকেটারদের চাকরি থেকে ছাড়িয়ে তিনি বাংলা কিংবা নিজের ক্লাবে খেলিয়েছেন, এমন অনেককেই প্রতিশ্রুতিমতো বর্তমান বিসিসিআই সভাপতি চাকরির ব্যবস্থা করেননি বলে অভিযোগ। বাংলার ক্রিকেটারদের আইপিএলে সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সিএবির ভূমিকায় হতাশ সবাই। এই ক্রিকেটাররা স্বাভাবিকভাবেই সৌরভের ভূমিকায় বিরক্ত। তবে বাংলার ক্রিকেটে সৌরভের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস কেউ পাচ্ছেন না। ঋদ্ধিমানের পাশে দাঁড়িয়েছেন ভারতীয় দলের প্রাক্তনরা। ভারতীয় ক্রিকেটে এমন ঘটনা বারবার কেন ঘটছে সেই প্রশ্ন তুলে ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়াতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের এগিয়ে আসার পক্ষে সওয়াল করেছেন প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রী। বিরাট কোহলিকে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরানো নিয়ে সৌরভের ভূমিকা নিয়ে যেমন অসন্তোষ জন্মাচ্ছিল, মহারাজ-ঘনিষ্ঠ অভিযুক্ত সাংবাদিকের আচরণও তীব্র নিন্দিত হচ্ছে। এরই মধ্যে জানা গিয়েছে, বোর্ড ঋদ্ধির কাছে ওই সাংবাদিকের নাম জানতে চেয়েছে। সবমিলিয়ে সৌরভ-জয়ের দিন বোর্ডে যতই ফুরিয়ে আসছে ততই বাড়ছে বিতর্ক।
যত দোষ সাংবাদিকদের!
এখানেই শেষ নয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজ শুরুর আগেই সংবাদমাধ্যম তথা সাংবাদিকদের জন্য জারি হতে পারে নয়া নিষেধাজ্ঞা। বোর্ডসূত্রে জানা গিয়েছে, চোট বা অন্যান্য কারণে ভারতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটাররাও সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলতে পারবেন না। কোনও সাংবাদিক কারও ইন্টারভিউ নিতে চাইলে তা জানাতে হবে বোর্ডের মিডিয়া ম্যানেজারকে। সবুজ সঙ্কেত মিললে তবেই ইন্টারভিউ নেওয়া যাবে। সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্টে থাকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে সরাসরি কোনও যোগাযোগ করা যাবে না। অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হতে চলেছে। বোর্ডের মিডিয়া ম্যানেজারের উপস্থিতিতেই কেউ সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারবেন। বোর্ডের অনুমতি ছাড়া কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললে তাঁকে ফাইন বা সাসপেন্ড করা হতে পারে। এমনকী নিয়ম ভঙ্গ করলে কোনও সাংবাদিককেও এক বছর ব্ল্যাকলিস্টেড করতে পারে বিসিসিআই। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে কফি উইথ করণে একটি মন্তব্যের জেরে শাস্তির কোপে পড়েছিলেন লোকেশ রাহুল ও হার্দিক পাণ্ডিয়া। তারপর থেকে ক্রিকেটারদের কোনও শোয় যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।