বাংলাদেশের কাছে লজ্জার হার দেখা থেকে বঞ্চিত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটপ্রেমীরা
২৭ বছর পর অস্ট্রেলিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে না ক্রিকেটের। অনেকেই মেতে অলিম্পিক নিয়ে। তারই মধ্যে আজ অঘটন ঘটাল বাংলাদেশ। টি ২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশ সফরে গিয়ে প্রথম ম্যাচেই এই প্রথমবার বেঙ্গল টাইগারদের কাছে পরাস্ত হল ক্যাঙারু-বাহিনী। দুই দেশের প্রথম দ্বিপাক্ষিক টি ২০ সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।
|
বাংলাদেশের ১৩১
আজ ঢাকায় টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েডের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া। নির্ধারিত ২০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে সাত উইকেটে ১৩১ রান। ওপেনার সৌম্য সরকার ২ রানের বেশি করতে না অপর ওপেনার মহম্মদ নঈম করেন ৩০ রান। তিনে নেমে ৩৩ বলে সর্বাধিক ৩৬ রানের ইনিংস খেলন অভিজ্ঞ শাকিব আল হাসান। আফিফ হোসেন ১৭ বলে ২৩ রান করেন। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ করেন ২০। অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার জোশ হ্যাজলউড চার ওভারে ২৪ রানের বিনিময়ে তিনটি উইকেট দখল করেন। মিচেল স্টার্ক ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে নেন দুটি উইকেট। অ্যাডাম জাম্পা ও অ্যান্ড্রু টাই একটি করে উইকেট দখল করেন। অ্যাস্টন অ্যাগার চার ওভারে ২২ রান খরচ করলেও কোনও উইকেট পাননি।
|
শুরু থেকেই অস্বস্তিতে
১৩২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে প্রথম বলেই মেহদি হাসানের বলে বোল্ড হন অ্যালেক্স ক্যারে। এরপর থেকে বাংলাদেশি স্পিনাররা ক্রমেই অজিদের অস্বস্তি বাড়িয়ে চাপ তৈরি করতে শুরু করেন। ২.১ ওভারে ১১ রানে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় উইকেট পড়ে। ওপেনার জোফ ফিলিপ ৯ ও মোজেস হেনরিকেস ১ রানে আউট হন। নাসুম আহমেদ ও শাকিব আল হাসানকে সামলাতে এতটাই বেগ পেতে শুরু করে অজিরা যে কখনও মনেই হয়নি টার্গেটের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবে। ৯.৪ ওভারে ম্যাথু ওয়েড যখন ব্যক্তিগত ১৩ রানে ফেরেন তখন অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৪ উইকেটে ৪৯। শেষে ২০ ওভারে ১০৮ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। মিচেল মার্শ তিনে নেমে সর্বাধিক ৪৫ রান করেন। মিচেল স্টার্ক করেন ১৪। তাঁদের সঙ্গে ওয়েড ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্কের রান পাননি। অ্যাগার আবার হিট উইকেট হন। চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৪ চার উইকেট নেন নাসুম। তিনিই ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছেন। দুটি করে উইকেট পান মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম। শাকিব ৪ ওভারে ২৪ রানের বিনিময়ে ১টি উইকেট পান।
|
লজ্জার হার অজিদের
এই প্রথম বাংলাদেশের কাছে কোনও টি ২০ আন্তর্জাতিকে হারল অস্ট্রেলিয়া। পাঁচবারের প্রয়াসে বেঙ্গল টাইগারদের এবারই প্রথম জয় অজিদের বিরুদ্ধে। মাহমুদুল্লাহ বলেন, আমাদের ১০ রান কম ছিল। ফলে ভালো ফিল্ডিং করতে হতো। আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়ে নেমে সকলে যে জয়ের খিদে ও এনার্জি নিয়ে খেলেছেন এবং বোলাররা যে পরিকল্পনামাফিক বোলিং করেছেন তাতে জয় এসেছে। যদিও এই জয় নিয়ে একেবারেই মেতে থাকছি না। এই জয় অতীত। মাটিতে পা রেখে পরের ম্যাচে ফোকাস রেখে প্রথম বল থেকেই নিজেদের সেরা জায়গায় রাখতে চাই। অজি অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড বলেন, এই উইকেটে যেভাবে ব্যাটিং করা উচিত ছিল তা পারিনি। ১০ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারানো সমস্যা তৈরি করে দেয়। আমরা জানতাম বাংলাদেশের স্পিন বোলিং আক্রমণ ভালো। ওয়েস্ট ইন্ডিজে বল ঘুরলেও এখানকার উইকেট আলাদা। ফলে বোলাররা দারুণভাবে বাংলাদেশকে ১৩০-এর কাছে বেঁধে রাখতে পেরেছিল। এই রান তোলাও যেত। কিন্তু আমরা সঠিকভাবে নিজেদের প্রয়োগ করতে না পারায় ১০০-র মতো রানে যেভাবে আউট হয়ে গেলাম তা হতাশাজনক।
|
বঞ্চিত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটপ্রেমীরা
এদিকে, গত ২৭ বছরে এবারই প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় দেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ সম্প্রচার হল না। সম্প্রচার সংক্রান্ত চুক্তির সম্ভাবনা শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যাওয়ায় ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার পাকিস্তান সফরের পর এই প্রথম কোনও সিরিজ টিভিতে দেখা থেকে বঞ্চিত হলেন অস্ট্রেলীয়রা। অনেকে আশায় ছিলেন ইউটিউবে হয়তো সরাসরি সম্প্রচার দেখা যাবে। সেটাও হয়নি। ফলে হতাশা গোপন রাখেননি অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ, যিনি হাঁটুর চোটের কারণে বাংলাদেশ সিরিজ থেকে ছিটকে গিয়েছেন। অনেক তারকা না থাকলেও ২০১৭ সালের পর এই প্রথম অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে গিয়েছে এবং প্রথম দ্বিপাক্ষিক টি ২০ সিরিজ খেলছে। অস্ট্রেলিয়াতেও এই মুহূর্তে সকলের নজর অলিম্পিকে, ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ নেই। ফক্স স্পোর্টস ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষ মুহূর্তে দেখালেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হল না। এতে কম আকর্ষণীয় সিরিজে সম্প্রচারকারী সংস্থার আগ্রহ নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়ে গেল। শেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি লিঙ্ক পেয়ে তাতে খেলা দেখেন ফিঞ্চ।