অক্ষরের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে বিশ্বরেকর্ড! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারতের ODI সিরিজ জয়
ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে কুইন্স পার্ক ওভালে ২০০৭ থেকে অপরাজেয় থাকার রেকর্ড অব্যাহত রেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ জিতে নিল ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একদিনের আন্তর্জাতিকে এটি ভারতের টানা দ্বাদশ ওডিআই সিরিজ জয়। ১৯৯৬ থেকে ২০২০ অবধি জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে পাকিস্তান টানা ১১টি একদিনের সিরিজ জিতেছিল। সেই রেকর্ড ভেঙে দিল ভারত। ২০০৬ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে একদিনের সিরিজে হারেনি টিম ইন্ডিয়া। শ্রেয়স আইয়ার ও সঞ্জু স্যামসন অর্ধশতরান করে ভারতের ইনিংসের ভিত মজবুত করেছিলেন। তবে জয় নিশ্চিত হলো অক্ষর প্যাটেলের আগ্রাসী ব্যাটিং তথা একদিনের আন্তর্জাতিকে প্রথম অর্ধশতরানের দৌলতে।
হোপের শতরানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩১১
এদিন টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নির্ধারিত ৫০ ওভারে তুলেছিল ৬ উইকেটে ৩১১ রান। ইনিংসের গোড়াপত্তন করে আটটি চার ও তিনটি ছয়ের সাহায্যে কেরিয়ারের শততম একদিনের আন্তর্জাতিকে ১৩৫ বলে ১১৫ রান করেন উইকেটকিপার তথা দলের সহ অধিনায়ক শাই হোপ। অধিনায়ক নিকোলাস পুরাণ করেন ৭৭ বলে ৭৪। কাইল মেয়ার্স ৩৯ ও শামার ব্রুকস করেন ৩৫। শার্দুল ঠাকুর ৭ ওভারে ৫৪ রানের বিনিময়ে নেন তিনটি উইকেট। একটি করে উইকেট দখল করেন দীপক হুডা, অক্ষর প্যাটেল ও যুজবেন্দ্র চাহাল।
|
ভারতের লড়াই
চলতি সিরিজে সর্বাধিক রান তাড়া করতে নেমে ভারতের শুরুটা খারাপ হয়নি, তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা প্রতিপক্ষের রান তোলার গতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন। দশম ওভারের চতুর্থ বলের পর বৃষ্টির কারণে খেলা সাময়িক বন্ধ থাকে। তবে পরে ওভার কমাতে হয়নি। একাদশ ওভারে রোমারিও শেফার্ডের পঞ্চম বল স্টেপ আউট করে মারতে যান শিখর ধাওয়ান, হেলমেটে বল লাগে। পরের ডেলিভারিতেই ছক্কা হাঁকানোর প্রয়াসে ধাওয়ান ফেরেন মেয়ার্সের অনবদ্য ক্যাচে। ভারত অধিনায়ক ৩১ বলে ১৩ রান করে দলের ৪৮ রানের মাথায় আউট হন। ১৫.৪ ওভারে শুভমান গিল মেয়ার্সের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড। পাঁচটি চারের সাহায্যে তিনি করেন ৪৯ বলে ৪৩। ভারতের দ্বিতীয় উইকেট পড়ে ৬৬ রানে। নিজের পরের ওভারটি করতে এসে সূর্যকুমার যাদব (৮ বলে ৯)-কে বোল্ড করেন মেয়ার্স। ১৭.২ ওভারে ভারত ৭৯ রানে হারায় তৃতীয় উইকেট।
|
শক্ত ভিতে দাঁড় করান শ্রেয়স-সঞ্জু
চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৯৯ রান যোগ করেন শ্রেয়স আইয়ার ও সঞ্জু স্যামসন। ৩৩তম ওভারের শেষ বলে শ্রেয়স ৭১ বলে ৬৩ রান করে আলজারি জোসেফের বলে লেগ বিফোর হন। তিনি চারটি চার ও একটি ছয় মারেন। ৫৭ বলে পূর্ণ করেন একদিনের আন্তর্জাতিকে একাদশ অর্ধশতরান। ১৭৮ রানে পড়ে চতুর্থ উইকেট। ৩৯.৪ ওভারে দলের ২০৫ রানের মাথায় রান আউট হন স্যামসন। তিনটি করে চার ও ছয়ের সাহায্যে তিনি ৫১ বলে ৫৪ রান করেন। কেরিয়ারের তৃতীয় একদিনের আন্তর্জাতিকে প্রথম অর্ধশতরানটি করতে তিনি নেন ৪৭ বল। শেষ ১০ ওভারে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১০০ রান। আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন অক্ষর প্যাটেল। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে হুডা ও অক্ষর ৫১ রান যোগ করেন। ৪৪.১ ওভারে এই জুটি ভাঙেন আকিল হোসেন। ৩৬ বলে ৩৩ রান করে দীপক হুডা সাজঘরে ফিরলে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২৫৬।
|
অনবদ্য অক্ষর
শেষ ৫ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪৮। ৪৬তম ওভারের পঞ্চম বলে আলজারি জোসেফের শিকার হন শার্দুল ঠাকুর। ৬ বলে ৩ রান করে তিনি ফেরেন দলগত ২৮০ রানের মাথায়। পরের বলে রান আউট হওয়া থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান আবেশ খান। ৪৭তম ওভারে শেফার্ডের প্রথম দুই বলে পরপর দুটি বাউন্ডারি মেরে ২৭ বলে কেরিয়ারের প্রথম অর্ধশতরান পেয়ে যান অক্ষর প্যাটেল। তৃতীয় বলে তিনি এক রান নেন, চতুর্থ বলে আবেশ খানের চারে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন গিয়ে দাঁড়ায় ২০ বলে ১৯। শেষ তিন ওভারে জিততে ১৯ রান করতে হতো। ৪১ থেকে ৪৭ ওভারে ৮১ রান তোলে ভারত। ৪৮তম ওভারে আলজারি জোসেফ ৪ রান দেন, ফলে ভারতের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় ২ ওভারে ১৫। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে এক রান নেন অক্ষর, পরের বলেই চার মারেন আবেশ। এই ওভারের শেষ বেল আবেশ ১২ বলে ১০ রান করে আউট হলে শেষ ওভারে দরকার ছিল ৮। প্রথম দুই বলে আসে ১ রান। তৃতীয় বলে এক রান নেন মহম্মদ সিরাজ। সমীকরণ দাঁড়ায় ৩ বলে ৬। চতুর্থ বলে অক্ষরের ছক্কায় তিন উইকেটে জয় নিশ্চিত হয়।
সিরিজ জয়ের তৃপ্তি
অক্ষর তিনটি চার ও পাঁচটি ছয়ের সাহায্যে ৩৫ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন। তিনি সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। ম্যাচের সেরা হয়ে তিনি বলেন, এই ম্যাচটি সত্যিই স্পেশ্যাল। সিরিজ জয়ের ক্ষেত্রে এই ইনিংসটির অবদান থাকায় খুবই ভালো লাগছে। যখন ব্যাট করতে নামি প্রতি ওভারে ১০-১১ রান তোলা লক্ষ্য ছিল। আইপিএলের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝি জেতা সম্ভব। শান্ত থেকে আস্কিং রেট নিয়ন্ত্রণে রেখেই বাজিমাত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মধ্যে জোসেফ ও মেয়ার্স দুটি করে উইকেট নেন। জেডেন সিলেস, রোমারিও শেফার্ড ও আকিল হোসেন একটি করে উইকেট নেন। এদিকে, শুক্রবার প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিকে শিখর ধাওয়ানের দল ৩ রানে জিতলেও, নির্ধারিত সময়ে ১ ওভার কম করায় ভারতীয় দলের ২০ শতাংশ জরিমানা হয়। দ্বিতীয় ওডিআই শুরুর পর টুইট করে তা জানায় আইসিসি।
অক্ষর প্যাটেল আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের আত্মবিশ্বাস পেলেন কীভাবে? ভারতের জয়ে নিশ্চিত কোন নয়া নজির?