কার্তিক-আবেশের গলায় দ্রাবিড় স্তুতি! ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর নেপথ্যে এক্স ফ্যাক্টর কী?
দিল্লি ও কটকে পরাস্ত হয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে পিছিয়ে পড়েছিল ভারত। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে বিশাখাপত্তনম ও রাজকোটের জয়। বিশেষ করে যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নব্বইয়ের আগে গুটিয়ে দিয়ে ঋষভ পন্থের ভারত ৮২ রানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে, তাতে চোট-আঘাতে জর্জরিত দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এগিয়ে থেকেই মেন ইন ব্লু বেঙ্গালুরুতে নামবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেন না, মোমেন্টাম এখন ভারতের সঙ্গে। সিরিজে অনবদ্য কামব্যাকের পিছনে হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের অবদানের কথা উল্লেখ করলেন আবেশ খান ও দীনেশ কার্তিক।
রাজকোটে আবেশ
আবেশ খান দেশের হয়ে ৬টি টি ২০ আন্তর্জাতিক খেলেছেন। চলতি সিরিজে প্রথম তিনটি ম্যাচে একটিও উইকেট পাননি। কিন্তু গতকাল রাজকোটে ১৮ রানে চার উইকেট নিয়েছেন। পিচে কখনও বল লাফাচ্ছিল, কখনও নেমে যাচ্ছিল। সেই পিচে বাউন্স আদায় করে নিয়ে হার্ড লেংথ বল চালিয়ে গিয়েই সাফল্য আবেশের। জোর দিয়েছিলেন উইকেট টু উইকেট বোলিংয়ে, তাতেই কাজ কঠিন হয়ে যায় প্রোটিয়াদের। ডোয়েইন প্রিটোরিয়াসকে ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট করেছিলেন। এরপর ১৪তম ওভারের দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে বুদ্ধিদীপ্ত ও পরিকল্পনামাফিক বোলিং করে আবেশ পেয়ে যান যথাক্রমে রাসি ভ্যান ডার ডুসেন, মার্কো জানসেন ও কেশব মহারাজের উইকেট। নিজের শেষ ওভারে ইয়র্কার ফেললে আবেশ পাঁচ উইকেট পেয়ে যেতেন বলেও মনে করেন সুনীল গাভাসকর।
দ্রাবিড়কে কৃতিত্ব
প্রথম দুটি ম্যাচে হেরে গেলেও ভারত প্রথম একাদশে পরিবর্তন করেনি। এমনকী প্রথম তিন ম্যাচে উইকেটহীন আবেশকেও বাদ পড়তে হয়নি, আর তারই সুফল মিলল গতকাল কেরিয়ারের সেরা বোলিং পাওয়া গেল এই পেসারের কাছ থেকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কম্বিনেশনে বদল না আনা ক্রিকেটারদের মনোবল বাড়িয়ে সেরাটা বের করে আনতে সহায়ক হয়েছে। আবেশ খান বলেন, এই যে দলে পরিবর্তন আনা হয়নি তার পুরো কৃতিত্ব রাহুল স্যরের (রাহুল দ্রাবিড়)। তিনি প্রত্যেককেই সুযোগ দেন এবং পর্যাপ্ত সুযোগ যাতে সকলে পান তা নিশ্চিত করেন। একটা বা দুটো খারাপ পারফরম্যান্সের পর তিনি কাউকে বাদ দেন না। কেন না, একটা বা দুটো ম্যাচের উপর ভিত্তি করে কোনও ক্রিকেটারকেই বিচার করা উচিত নয়। প্রত্যেকেই নিজেদের প্রমাণ করতে যথেষ্ট পরিমাণ ম্য়াচ পাচ্ছেন। আমিও উইকেট পাচ্ছিলাম না। চাপ বাড়ছিল। কিন্তু রাহুল স্যর ও টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে সুযোগ দিলেন। তাতে চারটি উইকেট পেলাম। বাবার জন্মদিনের এই সাফল্য, তাই বাবাকেই এই পারফরম্যান্স উৎসর্গ করছি।
কোন পথে সাফল্য?
আবেশ জানান, যখনই ভারত প্রথমে ব্যাট করে তিনি ব্যাটারদের সঙ্গে কথা বলে উইকেটের চরিত্র বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেন। রাজকোট ম্যাচের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আবেশ বলেন, ঈশান কিষাণ আমাকে জানান রাজকোটের উইকেটে হার্ড লেংথ ডেলিভারি সামলানো কঠিন। কিছু বল বাউন্স হচ্ছে, কিছু থমকে যাচ্ছে, কিছু নেমেও যাচ্ছে। তাই স্টাম্প বরাবর আক্রমণ শানানোর পরিকল্পনা করে লাগাতার হার্ড লেংথ বল করে গিয়েছি। ভালো বল করা আমার হাতে, কিন্তু উইকেট পাওয়া নয়। রাজকোটের উইকেটে স্লোয়ার ডেলিভারি কার্যকরী হতো না। তাই হার্ড লেংথ বল করেছি, মাঝেমধ্যেই বাউন্সার দিয়ছি। পাওয়ারপ্লেতেও কয়েকটি উইকেট তুলে নেওয়া আমাদের লক্ষ্য ছিল। তবে রাজকোটের এই পারফরম্যান্সই যে তাঁকে টি ২০ বিশ্বকাপের টিকিট দেবে না, সেটা মানেন আবেশ। জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ শামিরা এই সিরিজে নেই। ফলে আবেশ বলেন, দল নির্বাচনের বিষয়টি আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। দেশের হয়ে নিজের ১০০ শতাংশ উজাড় করে দেওয়াই আমার লক্ষ্য।
কার্তিকের কথায়
ভারতীয় ড্রেসিংরুমের ফিলগুড পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে ম্যাচের সেরা দীনেশ কার্তিকের বক্তব্যেও। তিনি বলেন, রাহুল দ্রাবিড় কখন বলেন না এই ম্যাচে জিততেই হবে বা এমন কিছু। তিনি শুধু বলে দেন ফলাফলের কথা না ভেবে ব্যাটার ও বোলারদের ঠিক কী করতে হবে। ড্রেসিংরুমে সকল ক্রিকেটারই নিরাপদ মনে করেন। আমি নিজেও আগের ম্যাচে প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারিনি। কিন্তু তারপরও দল আস্থা রেখেছে। দলে যেমন ভাবনার স্বচ্ছ্বতা রয়েছে, তেমনই ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ইতিবাচক ভূমিকা নিচ্ছে। দল হারলে বা জিতলে ড্রেসিংরুমের পরিবেশে বদল আসছে না। ক্রিকেটাররা নিরাপদ মনে করে খোলা মনে নিজেদের মেলে ধরার আদর্শ পরিবেশ পাচ্ছেন, এটাকেই এক্স ফ্যাক্টর হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন আবেশ ও কার্তিক।