ফিরে দেখা এশিয়া কাপ, ফাইনালে অজন্তা মেন্ডিসের স্পিনের জালে আটকে গিয়েছিল ভারত
এশিয়া কাপ ২০০৮-র ভারত-শ্রীলংকা ফাইনাল ম্যাচে ভারতের ব্যাটসম্যানরা শ্রীলংকার রহস্য স্পিনার অজন্তা মেন্ডিসের স্পিন-জালে আটকে গিয়েছিলেন। মেন্ডিস ১৩ রানে ৬ উইকেট নেন।
ক্রিকেট বা ফুটবল দলগত খেলা হলেও ব্যক্তি-নৈপুন্যে বাকিদের ছাপিয়ে কেউ কেউ তারকা হয়ে ওঠেন। কখনও কখনও এই তারাদের দ্য়ুতিতে ঝলসে যায় আস্ত একটা টুর্নামেন্টও। সেই তারকা খেলোয়াড়ের নাম জড়িয়ে যায় সেই টুর্ণামেন্টের সঙ্গে।
৮৬'র ফুটবল বিশ্বকাপ যেমন পরিচিত হয়ে আছে মারাদোনার বিশ্বকাপ বলে, আবার ৯৬ ক্রিকেট বিশ্বকাপকে সবাই চেনে সনথ জয়সূর্যের বিশ্বকাপ হিসেবে। সেরকমই পাকিস্তানে আয়োজিত ২০০৮ এশিয়া কাপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অজন্তা মেন্ডিসের নাম। গোটা টুর্নামেন্টেই যেন স্পিনের জাল বিছিয়েছিলেন এই শ্রীলঙ্কান স্পিনার।
২০০৮-এর এশিয়া কাপে মাত্র ২২ বছর বয়সে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল শ্রীলঙ্কার এই 'রহস্য স্পিনার'-এর। ২৭টি উইকেট নিয়ে তিনি সেইবার প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হন। তবে শুধু উইকেটের সংখ্যা দিয়ে ওই টুর্নামেন্টে তাঁর প্রভাব বোঝা সম্ভব নয়। এমনকী সেই সময় আড়ালে চলে গিয়েছিলেন কীংবদন্তী শ্রীলঙ্কান অফ স্পিনার মুরলীধরণও।
অফব্রেক, ক্যারম বল, গুগলি, টপস্পিন - নানান রকমের ডেলিভারির মিশ্রন ঘটিয়ে বল করেছিলেন অজন্তা। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে তাঁকে সামলাতে হিমশিম খান ব্যাটসম্যানরা।
ভারতের সঙ্গে গ্রুপের খেলায় অজন্তা মেন্ডিসকে তুরুপের তাসের মতো লুকিয়ে রেখেছিল শ্রীলঙ্কা। খেলায়নি সেই ম্যাচে। তবে তাঁকে নামানো হয়েছিল ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচে। সেই প্রথম অজন্তা মেন্ডিসের সামনাসামনি হয়েছিল ভারত। ফল কী হয়েছিল? মাত্র ১৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ভারতকে মাত্র ১৭৩ রানে গুটিয়ে দিয়েছিলেন মেন্ডিস।
সেই ম্য়াচে প্রথম ব্যাট করেছিল শ্রীলঙ্কা। সনথ জয়সূর্যের অসাধারণ ১২৫ রানের ইনিংসের দৌলতে শ্রীলঙ্কা ভারতের সামনে ২৭৩ রানের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল। সেই রান তাড়া করতে নেমে শুরুতে স্বভাবসিদ্ধ ঝড় তুলে দিয়েছিলেন বীরেন্দ্র সেওয়াগ। ভারতের প্রথম ৭৬ রানের ৬০ রানই করেছিলেন সেওয়াগ। তখন মনে হচ্ছিল সেওয়াগ একাই ম্যাচ বের করে দেবেন। কিন্তু তখনও মেন্ডিস আসেননি আক্রমণে।
এরপর শ্রীলঙ্কা প্রথম বোলিং পরিবর্তনেই বল তুলে দিয়েছিল অজন্তা মেন্ডিসের হাতে। তার ফল? সাঙ্গাকারার দুরন্ত স্টাম্পিং-এ আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান সেওয়াগ। তারপরই শুরু হয় ভারতীয় ব্যাটিং-এ ধস নামার করুন কাহিনি। দ্রুত সুরেশ রায়না, যুবরাজ সিং ও রোহিত শর্মার উইকেট তুলে ভারতের তরুণ মিডল অর্ডারকে গুটিয়ে দেন অজন্চা মেন্ডিস। ভারতের জেতার আশাও শেষ হয়ে যায়।
ঐতিহাসিকভাবে স্পিন বাল খেলার জন্য ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা সম্বৃদ্ধ। সেই ভারতীয়দের মনে যে আতঙ্কের জাল মেন্ডিস সৃষ্টি করেছিলেন সে ২০০৮-এর এশিয়া কাপ ফাইনালে তার থেকে তার পরের বেশ কয়েকটা দিন বের হতে পারেননি ভারতীয় ক্রিকেটাররা।
দুমাস পরেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়েছিল ভারত। ভারতের টেস্ট দলের মিডল অর্ডারের নামগুলো ছিল - রাহুল দ্রাবিড়, শচীন তেন্দুলকর, ভিভিএস লক্ষণ ও সৌরভ গাঙ্গুলি। এই অভিজ্ঞ শক্তিশালি ব্যাটিং লাইআপও সেই সিরিজে বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছিল মেন্ডিসের স্পিনের বিষে। সেই সিরিজে মেন্ডিস নিয়েছিলেন ২৬ উইকেট।
তবে তার এই শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কিছু সময় পরই বিশ্বজুডড়ে ব্যাসম্য়ানরা তাঁর রহস্য ভেদ করে ফেলেন। বল করার আগেই পড়ে ফেলতে শুরু ককরেন তাঁর বল। ফলে অজন্তা মেন্ডিসও ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ২০০৮-এর এশিয়া কাপ বললেই তাঁর কথা স্মরণে আসতে বাধ্য। গোটা টুর্নামেন্টটাই য়ে তিনি নিজের নামে করে নিয়েছিলেন।