এশিয়া কাপ ২০১৮, জেতাতে পারলেন না জাদেজা, জিততে পারল না আফগানরাও, জিতে গেল ক্রিকেট
এশিয়া কাপ ২০১৮ সুপার ফোর ভারত বনাম আফগানিস্তান ম্যাচের ফলাফল ও ম্যাচ রিপোর্ট।
একেই বলে পোয়েটিক জাস্টিস। পর পর দুই ম্যাচে জেতার কাছাকাছি এসেও জয় পায়নি আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের খেলা মানেই উত্তেজনা। বাদ গেল না ভারত ম্যাচও। গড়াল সেই শেষ ওভার পর্যন্ত। আর শেষ ওভারের এক বল বাকি থাকতে ভারত অলআউট হয়ে গেল ২৫২ রানে। ঠিক যে রানটা তুলেছিল আফগানিস্তান ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে। কাজেই ম্যাচের কোনও মীমাংসা হল না। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেন শতরানকারী মহম্মদ শাহজাদ। যেন খালি হাতে আফগানদের বাড়ি যেতে দিতে মন চাইছিল না ক্রিকেট দেবতার।
এই ম্য়াচটিই সম্ভবত এই এশিয়া কাপের শ্রেষ্ঠ ম্যাচ। বুধবারের পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচ বা ফাইনাল কেমন হবে তা জানা নেই। কিন্তু এখনও অবধি টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সের নিরিখে মঙ্গলবারই ছিল সবচেয়ে ধারাবাহিক দুটি দলের ম্যাচ। সেই প্রত্যাশা পূরণ হল। অমীমাংসিত থাকলেও আফগানিস্তান দল অবশ্যই এই ম্যাচে নৈতিক জয় পেল।
পেন্ডুলামের মতো বারবার ম্যাচের ভাগ্য দুলেছে। বিশেষ করে ম্যাচের শেষের দিকে। আর শেষ ওভার তো হলিউডি থ্রিলারকেও হার মানাবে। ৪৯তম ওভারের পঞ্চম বলে রান আউট হয়ে যান সিদ্ধার্থ কল। শেষ বলে একটি সিঙ্গল নিয়ে স্ট্রাইক রেখেছিলেন জাদেজা। ভারতের জেতার জন্য দরকার ছিল ৭ রান।
বল করতে আসেন রশিদ খান। প্রথম বলে সিঙ্গল নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নেননি জাদেজা। তার পরের বলটিই তুলে মারেন। লঙ অনের বাউন্ডারির একেবারে গায়ে পড়ে বল সীমানা পেরিয়ে যায়। থার্ড আম্পায়ার ৪ রান দেন। তার পরের বলে জাদেজা একটি সিঙ্গল নেন। তার পরের বল খলিল কোনওভাবে ব্যাটে লাগিয়ে জাদেজাকে স্ট্রাইক ফিরিয়ে দেন। ফলে ভারত ও আফগানিস্তানের রান সমান হয়ে গিয়েছিল।
২ বলে দরকার ছিল ১ রানের। সেই অবস্থায় জাদেজা ফের তুলে মারেন। এইবার কিন্তু ধরা পড়ে যান নাজিবুল্লার হাতে। এই ম্য়াচটিই সম্ভবত এই এশিয়া কাপের শ্রেষ্ঠ ম্যাচ। বুধবারের পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচ বা ফাইনাল কেমন হবে তা জানা নেই। কিন্তু এখনও অবধি টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সের নিরিখে মঙ্গলবারই ছিল সবচেয়ে ধারাবাহিক দুটি দলের ম্যাচ। সেই প্রত্যাশা পূরণ হল। অমীমাংসিত থাকলেও আফগানিস্তান দল অবশ্যই এই ম্যাচে নৈতিক জয় পেল।
ভারত অবশ্য এদিন শুরুটা বেশ ভাল করেছিল। নিয়ম রক্ষার ম্যাচ বলে ভারত এদিন প্রথম দলের ৫ জনকে বিশ্রাম দিয়েছিল। ছিলেন না শিখর-রোহিত। বদলে নামা লোকেশ রাহুল (৬৬ বলে ৬০) ও আম্বাতি রায়ডুর (৪৯ বলে ৫৭) ওপেনিং জুটি ভারতকে ১০০ পার করিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু দুজনেই উইকেটে সেট হয়েও বড় রান করতে পারেননি।
এই সেট ব্যাটসম্যানরা আউট হয়ে যেতেই ধস নামে ভারতের মিডল অর্ডারে। আজকের ম্যাচে ৬৯৬ দিন বাদে ভারতের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন ধোনি। এদিন তানি অধইনায়ক হিসেবে ২০০তম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। কিন্তু ব্যাট হাতে ম্য়াচটা সুখকর হল না তার। ১৭ বলে ৮ করে তিনি আউট হন আম্পায়ের ভুল সিদ্ধান্তে। কিন্তু ভারতের হাত রিভিউ বাকি ছিল না।
এরপর মনীশ পাণ্ডে (১৫ বলে ৮)-ও হতাশ করেন। কেদার যাদব (২৬ বলে ১৯)-ও ধোনির মতো দুর্ভাগ্যের স্বীকার হন। মুজিবুর রহমানের বলে কার্তিক একটি স্ট্রেট ড্রাইভ মেরেছিলেন। তা মুজিবুরের হাতে লেগে নন স্ট্রাইকার প্রান্তের উইকেট ভেঙে দেয়। কেদার ব্যাট ক্রিজে ঢোকানোর চেষ্টা করলেও দুবাইয়ের শুকনো মাটিতে তাঁর ব্যাট আটকে যায়।
একদিকে যাওয়া আসার মিছিল চললেও তিন নম্বরে নেমে একদিকটা ধরে রেখেছিলেন কার্তিক (৬৬ বলে ৪৪) কিন্তু মহম্মদ নবির বলে তিনি এলবিডব্লু হয়ে যান। এটিও মাঠের আম্পায়ের ভুল সিদ্ধান্ত। বল স্পিন করে লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে যাচ্ছিল। ভারত অনেক আগেই রিভিউ শেষ করে ফেলেছিল।
এদিন ভারতের হয়ে অভিষেক হয় চাহারের। ম্যাচের আগে কোচ রবি শাস্ত্রীর হাত থেকে ওয়ানডের টুপিটা নেোয়ার সময় তাঁর মুখ যতটা উদজ্বল ছিল, খএলা শুরু হতেই তা হারিয়ে যায়। বল করার সময় তিনি পড়েছিলেন আফগান ওপেনার এদিনের ম্যান অব দ্য ম্যাচ মহম্মদ শেহজাদের হাতে। মাত্র ৪ ওভারে ৩৭ রান দেন। ১টি উইকেট পান। ব্যাটেও তিনি ১৪ বলে ১২-র বেশি কিছু করতে পারেননি। আফতাব আলমের বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে যান।
এরপর কূলদীপ ও সিদ্ধার্থ কল দ্রুত রান আউট হয়ে যাওয়াতেই ভারত চাপে পড়েছিল। একমাত্র ভরসা ছিলেন জাাদেজা। তাঁর শেষ ওভারে মারা ৪টির পর ভারতীয় ড্রেসিংরুম তৈরি ছিল আরও একবার জাদেজার অসিখেলা নাচ দেখার জন্য। কিন্তু তিনি এদিন ফিনিশিং লাইন ছুঁলেও পার করতে পারলেন না। গোটা টুর্নামেন্টের মতোই এদিনও আফগান বোলিংয়ের দুর্দান্ত প্রদর্শনী দেখা গেল।তার আগে অবশ্য মাঠ কাঁপালেন আফগান ওপেনার মহম্মদ শাহজাদের দুরন্ত শতরান ১১৬ বলে ১২৪ রান করার পথে সাতটি ছক্কা ও এগারোটি ৪ মারেন। তাঁকে যোগ্য সহায়তা দিয়েছিলেন মহম্মদ নবি (৫৬ বলে ৬৪)। শেষ দিকে কিছুটা মারেন নাজিবুল্লা জাদরান (২০ বলে ২০)।
তবে মঙ্গলবার বলতে গেলে একার কাঁধে আফগান ইনিংসকে টানলেন শাহজাদ। ৩৮তম ওভারে আফগানিস্তান ইনিংসের ১৮০ রানের মাথায় তিনি যখন আউট হন তখন সেই রানের ৬৮.৮ শতাংশই ছিল তাঁর ব্যাট থেকে। এই পরিসংখ্য়ানই বলে দেয় কতটা দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করেছএন তিনি।
সবচেয়ে বেশি নির্মম ছিলেন তিনি রবীন্দ্র জাদেজা ও দীপক চাহারের উপর। চাহারের এক ওভার থেকেই তিনি ১৭ রান নেন। জাদেজার বলে তাঁর মারা একটি ছয় স্টেডিয়ামের বাইরেও চলে যায়। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার পর তিনি বলেছেন, এদিনের পর বাড়ি চলে যেতে হবে, তাই আজ ভারমুক্ত হয়ে খোলা মনে ব্যাট করেছেন।
তাঁর হাতে কিছুটা মার খেলেও, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিষ্ফলা থাকার পর এদিন ফের ভাল বল করলেন জাদেজা। ১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। ভাল বল করেন কূলদীপ যাদব (৩৮-২) এবং কেদার যাদব (২৭-১)ও। পিচ একেবারেই পেসারদের সহায়ক নয়। সেখানেও ভাল বল করেন খলিল (৪৫-১)। সিদ্ধার্থ কল অবশ্য বিশেষ প্রভাবিত করতে পারেননি (৯ ওভারে ৫৮-০)।
খলিল ডেথেও ভাল বল করেন। এদিন ডেথে খুব ভাল কামব্যাক করেন ভারতীয় বোলাররা। যার জেরে শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ২৪ রান তুলতে পেরেছিল আফগানরা। নাহলে ভারতকে হয়ত পরাজয়ের মুখই দেখতে হত। ভারতের মিডল অর্ডার কিন্তু টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বার পরীক্ষার মুখেও ব্যর্থ হল।