
প্রতিবন্ধকতাই হর্ষল প্যাটেলের সেরা অস্ত্র! এবি ডি ভিলিয়ার্সের কোন পরামর্শ শিরোধার্য করেছেন?
এবারের আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে ৩২টি উইকেট নিয়ে বেগুনি টুপির মালিক হন হর্ষল প্যাটেল। যদিও টি ২০ বিশ্বকাপের দলে জায়গা হয়নি। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টি ২০ বিশ্বকাপে তিনি খেলতে পারবেন কিনা তা বলবে সময়। যদিও অভিষেকেই চমকপ্রদ পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন হরিয়ানার এই পেসার। রাঁচিতে ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছেন।

ড্যানিয়েল ভেত্তোরি-সহ অনেক প্রাক্তনেরই উপলব্ধি, ডেথ ওভারে বিপক্ষ দলগুলির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন জসপ্রীত বুমরাহ ও হর্ষল প্যাটেল। গুজরাটে জন্ম, ২০০৯ সালে বিজয় হাজারে ট্রফিতে গুজরাটের হয়ে লিস্ট এ অভিষেক। পরে দলে নিয়মিত সুযোগ না পেয়ে চলে আসেন হরিয়ানায়। ২০১১ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও টি ২০-তে অভিষেক। যদিও ভারতীয় দলে জায়গা পেতে অপেক্ষা করতে হল আরও ১০ বছর। আমেরিকার গ্রিন কার্ড পেলেও ভাইয়ের পরামর্শে ভারতেই থেকে গিয়েছিলেন। কোচ তারক ত্রিবেদীর তত্ত্বাবধানে অনুশীলন চালিয়ে যেতে। গতকাল ম্যাচের সেরার পুরস্কার পাওয়ার পর হর্ষল বলেন, আমার এই বিশ্বাস ছিল যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলতে পারব। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ভালো খেলতে পারার আত্মবিশ্বাস নিয়েই এগিয়েছি। নিজে কতটা পারব সে সম্পর্কে সচেতন থেকেই নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। একবারও মনে হয়নি স্বপ্নপূরণ থেকে আমি ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছি।

২০০৮-০৯ মরশুমে ভিনু মানকড় ট্রফিতে গুজরাট অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে অভিষেক হয় হর্ষলের,২৩ উইকেট নেন ১১ গড় রেখে। ২০১০ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে খেলেছেন নিউজিল্যান্ডে। এরপর মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তাঁকে দলে নেয়। গুজরাটে রঞ্জি দলে সুযোগ না পেয়ে হরিয়ানার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন, সে বছর ২৮ উইকেট পান। এরপর তাঁকে দলে নেয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। আরসিবির হয়েই ২০১২ সালে তাঁর আইপিএল অভিষেক। এবারের আইপিএলে ৩২টি উইকেট দখল করেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক-সহ ৫ উইকেট নেন।
Debut for #TeamIndia 👍
— BCCI (@BCCI) November 20, 2021
Debut on Chahal TV 📺
Special message for @ABdeVilliers17 😊
Enjoy this special segment of @yuzi_chahal chatting up with @HarshalPatel23 after India's win in Ranchi. 😎 😎 - By @28anand
Full interview 🎥 🔽 #INDvNZ @Paytm https://t.co/oc0PEF4ou4 pic.twitter.com/G5Ot2qlXdp
গতকালের ম্যাচেও ড্যারিল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপসের জুটি ভাঙেন তিনি। মাঝের ওভার ও ডেথ ওভারে দুরন্ত বোলিং করেন। স্লোয়ার ডেলিভারি দিয়ে আইপিএলে সাফল্য পেয়েছেন, গতকালও কিউয়ি ব্যাটারদের অস্বস্তিতে ফেলেন সেই অস্ত্র দিয়েই। হর্ষলের কথায়, পেসারের কাছ থেকে জোরে বোলিংই প্রত্যাশিত। আমি বোলিংয়ের সময় দেখি আমি খুব বেশি প্রতি ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার বেগে বল করতে পারছি। কখনও সেটা ১৪০ অবধি পৌঁছাচ্ছে ভালো ছন্দে থাকলে। এর উপরে বল করতে পারছি না দেখে নানা কৌশল রপ্ত করায় জোর দিই। যে অ্যাঙ্গেলে গতকালও তিনি বোলিং করেছেন প্রশংসনীয়। হর্ষল বলেন, বায়ো-মেকানিক্যালি আমার অ্যাকশন পারফেক্ট নয়। ডেলিভারির সময় কিছু সমস্যা থাকায় চোটপ্রবণতার আশঙ্কা ছিল। সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি। ল্যাটারাল ফ্লেক্সনের জন্য বলের গতি বাড়ানো সম্ভব হয় না। তবে এর জন্য যে অ্যাঙ্গেলে বল করতে পারি সেটা ব্যাটারদের সামলানোও যে সহজ নয় সেটি উপলব্ধি করেছি ঘরোয়া ক্রিকেটে সাত-আট বছর খেলার ফাঁকেই। সে কারণেই আমার স্লো বোলিং এতটা কার্যকরী। লাল বলেও আউটস্যুইং করাতে পারি। নিজের প্রতিবন্ধকতাকে এভাবেই কার্যকরী করেছেন হর্ষল।

খুব বেশি কিছু একসঙ্গে করতে যান না বোলিংয়ের সময়। তবে নানা জায়গায় ইয়র্কার ফেলেও ব্যাটারদের অস্বস্তিতে ফেলার কৌশলও রপ্ত করেছেন। এবি ডি ভিলিয়ার্সের একটি পরামর্শও তিনি শিরোধার্য করে এগোন। আরসিবিতে একদিন এবিডি-র কাছে হর্ষল জানতে চেয়েছিলেন, কখনও কখনও ওভারে ১২-১৫ বা ২০ রান দিয়ে ফেলছি, ভালো বলেও মার খাওয়ার সমস্যা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়? ডি ভিলিয়ার্স হর্ষলকে বলেছিলেন, ব্যাটার যখন কোনও ভালো বলে হিট করবেন তারপরেও সেই ভালো বলই করে যেতে হবে। ব্যাটার ভাবেন, যদি কোনও ভালো বলকে মারি তাহলে বোলার অন্য অপশন বেছে নিতে পারেন, তাহলে ব্যাট করা সহজ হয়ে যাবে। তাই মার খেলেও ভালো ডেলিভারি থেকে সরে না আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবিডি।
ICYMI: @HarshalPatel23's first wicket in international cricket 👏 👏
— BCCI (@BCCI) November 19, 2021
Watch how the #TeamIndia debutant picked that scalp 🎥 🔽 @Paytm #INDvNZ
তাঁর অবসরের দিনে নিজের আন্তর্জাতিক অভিষেকে ম্যাচের সেরা হয়ে হর্ষল বলেন, এই পরামর্শ আজীবন কেরিয়ারে মনে রাখব। হর্ষল বলেন, ধৈর্য্য ধরারও বিকল্প নেই। আমি নিজে খুব অধৈর্য্য ছিলাম একটা সময়। অনেকেই এটা নিয়ে কিছু বলেন না। কিন্তু আমি কিন্তু বই পড়ে বা গুণীজনদের কাছ থেকে এর গুরুত্ব উপলব্ধি করেছি। উন্নতি রাতারাতি হয় না। এটা একটা মন্থর গতির প্রক্রিয়া। ভালো কিছুর জন্য কিছু পরিবর্তন চাইলে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। নিজের দক্ষতার সঙ্গে কোনটা পারব না তা আলাদা করে চিহ্নিত করে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই নিহিত সাফল্যের মূলমন্ত্র।