২০১৬-র চেয়ে স্মরণীয় বছর আর আসেনি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে
ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট মানেই একসময় ছিল বিপক্ষের মনোবলকে দুমড়ে শেষ করে দেওয়া। খেলতে নামার আগে ভয়েই অর্ধেকের বেশি দল হেরে বসে থাকত প্রবল প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে।
আর তার প্রমাণ অতীতের রেকর্ড। একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু বছর ১৯৭৫ সালে মোট পাঁচটি ম্যাচ খেলে সবকটি জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরেরবছর গ্রুপ স্টেজে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। সেবারও ৫টির মধ্যে ৪টি ম্যাচ জিতে (১টি পরিত্যক্ত) অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপ জেতে ক্যারিবিয়ানরা।
তারপর থেকে বহুবছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে খরা চলেছে। মাঝের সময়ে ভালো ক্রিকেটার যে উঠে আসেননি তা নয়। ব্রায়ান লারা, কার্টলে অ্যামব্রোজ, কোর্টনি ওয়ালশ, শিবনারায়ণ চন্দ্রপলের মতো বিশ্বসেরা নক্ষত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে এসেছেন। কিন্তু তারা কেউই একক দক্ষতায় দেশকে বিশ্বজয়ী করতে পারেননি।
একদিনের ক্রিকেটে হোক বা টেস্টে, ক্যারিবিয়ান ক্যালিপসো বেসুরোই বেজেছে। তবে প্রেক্ষাপট বদলেছে টি২০ ক্রিকেটের আমদানির পরে। দীর্ঘদেহী ভয়ডরহীন ক্যারিবিয়ানরা প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে পড়ে টি২০ লিগ খেলেছেন। আইপিএলের ধাঁপে সেদেশেও চালু হয়েছে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট লিগ টি২০।
২০১৬ সালের মতো স্মরণীয় বছর আর আসেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে
ক্রিস গেইল, ডোয়েন ব্র্যাভো, ড্যারেন ব্র্যাভো, ড্যারেন স্যামির মতো তারকারা ধীরে ধীরে টি২০ ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠেছেন। একদিকে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে তীব্র বিরোধ সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে টি২০ খেলার সুবাদে এক একজন ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন।
ক্রিস গেইলদের দেখে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের পরের প্রজন্মও টি২০-তেই গা ভাসিয়েছে। আপন করে নিয়েছে এই ফর্ম্যাটকে। আর যার নিট ফল এবছর অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে সেরা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতকে ফাইনালে ৫ উইকেটে হারায় তাঁরা।
এখানেই ইতিহাসের চাকা থেমে থাকেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মহিলা দলও যে কম যায় না তার প্রমাণ দিয়েছেন ক্যারিবিয়ানদের প্রমিলা বাহিনী। ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে প্রবল প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে ইডেনের ফাইনালে হারিয়ে বিশ্বজয় করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মহিলা দলও।
এরপর পালা ছিল পুরুষদের। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইডেনে ফাইনাল খেলতে নেমে সেই রূপকথায় যেন নতুন পাতা যোগ করলেন ক্রিস গেইস ড্যারেন স্যামিরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। ক্রিজে তখন ব্য়াট হাতে সদ্য ক্রিজে নামা কার্লোস ব্রেথওয়েট। অন্যপ্রান্তে নন স্ট্রাইকিং এন্ডে ব্যাট হাতে দাঁড়ানো ৮৫ রানে অপরাজিত থেকে এপর্যন্ত ইনিংসকে টেনে আনা মার্লন স্যামুয়েলস।
তারপর যা হল তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। শেষ ওভার করতে আসা বেন স্টোকসের পরপর চার বলে চারটে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে নতুন রূপকথার জন্ম দিলেন ব্রেথওয়েট। এ এক এমন মুহূর্ত যা চর্মচক্ষে না দেখলে কারও কথায় বিশ্বাস করা কঠিন।
আর এভাবেই এই বছরটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। বোর্ডের সঙ্গে চূড়ান্ত বিবাদ থাকতে পারে, চুক্তি-টাকা পয়সা নিয়ে অশান্তি থাকতে পারে। কিন্তু তারপাশে এই জয়গুলিও থাকবে। নতুন আশা নিয়ে এগিয়ে যাবে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট। যা বেপরোয়া কিন্তু সুন্দর। সত্যিই তো ২০১৬ সালের মতো স্মরণীয় বছর আর কবে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে।