নোবেলের পাওয়ার অর্থে শান্তিনিকেতনের নর্দমা তৈরি করতে বলেছিলেন বিশ্বকবি
নোবেল পাওয়ার অর্থে শান্তিনিকেতনের নর্দমা তৈরি করতে বলেছিলেন বিশ্বকবি
১৯১৩ । শান্তিনিকেতন আশ্রমে তীব্র অর্থ সংকট । সবে শীত পড়েছে । ছাত্রেরা খেতে বসেছেন । আশ্রমের শিক্ষক অজিতকুমার চক্রবর্তী রান্নাঘরে ঢুকে প্রায় নৃত্যের তালে বললেন ,'গুরুদেব নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন ।' আর সেই টাকায় কবি বলেছিলেন যে তৈরি হোক শান্তিনিকেতনের নর্দমা।
নোবেল পাওয়ার খবর এর পর শিক্ষক জগদানন্দ রায় এসেই ঘোষণা করেন , আশ্রম তিন -চার দিন ছুটি । এবার আলোচনা শুরু হল । এক ছাত্র বললেন , 'ওটা Noble প্রাইজ . গুরুদেব মহৎ , তাই পেয়েছেন। ' আর -একজন বললেন ,' ওটা Novel প্রাইজ। গুরুদেব উপন্যাস লিখে পেয়েছেন। '
নোবেল প্রাইজের সংবাদ যখনশান্তিনিকেতনে টেলিগ্রাম আসে ,তখন নেপালচন্দ্র রায় ও আরও দু-একজন অধ্যাপকের সঙ্গে কাছেই কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। টেলিগ্রাম পেয়ে নীরবে সেটি পড়ে নেপালবাবুর হাতে দিয়ে বললেন ,' নিন নেপালবাবু, আপনার ড্রেন তৈরি করার টাকা। ' চুড়ান্ত আর্থিক অনটনে আশ্রমে একটি পাকা নর্দমা করার কাজে তখন ভাঁড়ারে টান পড়েছিল। সে-সময় নোবেল পুরস্কারের মূল্য ছিল প্রায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা।
১৯১৩ সালের ১৫ নভেম্বর দিনটা ছিল শুক্রবার । কলকাতায় টেলিগ্রামে খবর আসে প্রথম বাঙালি , প্রথম ভারতীয় এবং প্রথম এশিয় হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রেন্থর জন্য।
কবির নোবেল পাওয়ার খবর সেদিন কলকাতার সান্ধ্য দৈনিক 'এম্পিয়ার' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কবির ঠিকানা সুইডিশ একাডেমির জানা ছিল না। তাই খোঁজখবর নিয়ে তাঁর ঠিকানা জোগাড় করে লন্ডন থেকে টেলিগ্রামে খবরটি সরকারিভাবে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে পাঠানো হয়।
সেই টেলিগ্রামে লেখা ছিল :SWEDISH ACADEMY AWARDED YOU NOBEL PRIZE LITERATURE PLEASE WIRE ACCEPTATION SWEDISH MINISTER. টেলিগ্রাম পেয়ে কবির জামাতা নগেন্দ্রনাথ ১৬ নভেম্বর সকাল সাতটার পর পরই কবিকে জানান। কবি তখন শান্তিনিকেতনে । বহুপ্রতীক্ষীত এই সংবাদ পেয়ে আশ্রমের শিক্ষক ছাত্র সকলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। স্টকহোমে রবীন্দ্রনাথের হয়ে পুরস্কার গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় সেখানকার ব্রিটিশ রাজদূতকে। ১৯১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর পুরস্কার গ্রহণ করেন গ্রেট ব্রিটেনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার মি. ক্লাইভ।
পরের বছর ২৯ জানুয়ারি কলকাতার গভর্নর হাউসে বিশেষ অনুষ্ঠানে লর্ড কারমাইকেল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে পুরস্কারের মেডেল ও ডিপ্লোমা তুলে দেন। পুরস্কারস্বরূপ সঙ্গে একটি এক লক্ষ ষোল হাজার দুশো উনসত্তর টাকার ব্যাংক চেকও ছিল।
মাটির বাড়িতে জন্মানোর কথায় আদিবাসী আবেগ ছুঁলেন মমতা, চুটিয়ে জনসংযোগ জঙ্গলমহলে