মমতাকে মিথ্যাবাদী বলে আক্রমণ শুভেন্দুর, জঙ্গলমহলকে শত্রু-মিত্র চিনিয়ে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে জোরালো বার্তা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মিথ্যাবাদী, জঙ্গলমহলের শত্রু বলে অভিহিত করে তীব্র নিশানা শুভেন্দু অধিকারীর। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুর জয় নিশ্চিত হতেই ঝাড়গ্রামের লালগড়ে আদিবাসী গৌরব দিবস পালনে বিশাল মিছিল ও জনসভা করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। সেখান থেকেই একুশে তৃণমূলের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে যেভাবে নিশানা করা হয়েছে, তারই জবাব দিলেন জঙ্গলমহলের কুটুম।
জঙ্গলমহল থেকে বার্তা
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, গতকাল বিজেপিকে এমন শর্ত দেওয়া হয়েছিল উলুবেড়িয়ায় সভা করার জন্য যাতে তা না হয়। তখনই রাজ্যে পরিবর্তনের ভরকেন্দ্র জঙ্গলমহলে সভা ও মিছিলের সিদ্ধান্ত নিই। কয়েক ঘণ্টার নোটিশে এত মানুষকে যে জঙ্গলমহলে একত্রিত করা যায় তা আজ প্রমাণিত। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে এখানে যেটা হয়েছে সেটা ঘটনা নয়, দুর্ঘটনা। আবার পঞ্চায়েত ভোট ও লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলে গেরুয়াময় হবে বলেও জোরালো কণ্ঠে দাবি করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আরও বলেন, দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পথে এনডিএ-র বাইরের ভোটও পেয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী দলিত রামনাথ কোবিন্দকে রাষ্ট্রপতি করেছিলেন। এবার জনজাতি, মূলবাসী দিদিকে রাষ্ট্রপতি করলেন। সাংবিধানিক এক নম্বর জায়গায় পৌঁছে দিলেন। এই সমগ্র এলাকায় এটা আনন্দের বিষয়। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে দ্রৌপদী মুর্মুর যে ছবি দেবে ধামসা-মাদল বাজিয়ে এই জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েতে তা পৌঁছে দিয়ে আসবেন। গ্রামের পিছিয়ে থাকা মহীয়সী নারীর ছবি পঞ্চায়েত অফিসে উজ্জ্বল করে রাখতে হবে।
হিরণকে নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব
শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে ছিলেন বেশ কয়েকজন বিধায়ক, যাঁদের মধ্যে অন্যতম হিরণ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দলবদল নিয়ে জল্পনাও ছিল। যদিও এদিন তৃণমূলের সভামঞ্চে কারও দলবদলই হয়নি। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, একটা চটিচাটা চ্যানেল সকাল থেকে হিরণ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে বাজে কথা বলেছে। এটা ওরা মাঝেমাঝেই করে থাকে। কিন্তু হিরণ মাথা উঁচু করে চলা লোক। তিনি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডাদের নেতৃত্বে দলের আদর্শ মেনেই কাজ করছেন।
মমতাকে মিথ্যাবাদী বলে নিশানা
শুভেন্দু বলেন, কলকাতায় আজ জেহাদ দিবসের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু মুখে শহিদদের নাম ছিল না। খাদ্য আন্দোলন, তিরানব্বইয়ের ঘটনা, নেতাই, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরের শহিদদের কারও কথা বলা হয়নি। কারও বুকে ছিল না কালো ব্যাজ। শোকপ্রস্তাব ছিল না। কিন্তু যত রকমের পারা যায় মিথ্যাচার চলেছে। দেবকে দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার দেখালেন, ইলেকট্রিক বিল তো দেখালেন না! আগে ইউনিট ২টাকা ৩০ পয়সা ছিল, সেটা ৮ টাকা কেন হয়েছে? মোদীজি উজ্জ্বলা গ্যাসে ২০০ টাকা করে ছাড় দিয়েছেন, আপনি তো ৩০০ টাকা করে আমাদের পকেট কাটছেন! মোদীজি পেট্রোলের দাম সাড়ে ১৪ টাকা কমিয়েছেন, আপনি মদের দাম সাড়ে তিনশো টাকা কমিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ডিজেলের দাম ১৭ টাকা কমিয়েছেন। আপনি কমাননি। মুড়িতে জিএসটি বসানোর মিথ্যা কথা বলছেন। মিথ্যাবাদী। সব ফুড প্রোডাক্টে জিএসটি থাকে না। খুচরো মুড়ি বিক্রেতাদের উপর, এই ধরনের খাদ্যদ্রব্যের উপর জিএসটি আগেও ছিল না। এখনও নেই, পরেও থাকবে না।
শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, চাকরি দিতে পারেননি, শিল্প আনতে পারেননি। যশবন্ত সিংহকে ভোট দিয়েছেন। আদিবাসী মূলবাসীদের বড় অংশ যাঁরা বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছিলেন তাঁরা দেখুন মিত্র কে আর শত্রু কে! মিত্র বিজেপি, নরেন্দ্র মোদী। শত্রু মমতা, তোলামূল পার্টি। বড় বড় কথা বলছেন। আগে একুশে জুলাই ডিম্ভাত উৎসব হতো। এখন বিরিয়ানি, গোস্ত থাকছে। এই বদলই তো এসেছে! শুভেন্দু অধিকারী এদিন বলেন, আমরা এমন বদল এনে দেব ২০২৪ সালে আর ২১ জুলাই করতে পারবেন না। মহারাষ্ট্রের পর ঝাড়খণ্ডেও বদল আসবে দুর্গাপুজোর আগেই। ফলে জোট বাঁধুন, তৈরি হোন। পঞ্চায়েত লড়ে নিতে হবে লালগড়ে। আমাকে নেতাইয়ে আটকেছিল। দাঁডিয়ে থেকে এখানে নমিনেশন করাব। গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে জনজাতি, কুর্মি, সনাতন হিন্দুদের জোট তৈরি করুন। সাফ করতে হবে চোর পার্টিকে। আজ সব চোর কলকাতায় গিয়েছে।