রামপুরহাট-কাণ্ড 'স্টেট-স্পনসরড মাফিয়া'দের কাজ, বিজেপির ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্টে কার নাম
রামপুরহাট-কাণ্ড 'স্টেট-স্পনসরড মাফিয়া'দের কাজ, রিপোর্ট বিজেপির ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটির
বীরভূমের রামপুরহাটে যে গণহত্যার ঘটনা ঘটে তা নিয়ে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট দাখিল করল বিজেপি। বঙ্গ বিজেপির পাঁচ সদস্যের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি বুধবার দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে স্পষ্ট করে বলা আছে, এই কাজ রাজ্যের শাসকদলের মদতপুষ্ট মাফিয়াদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। এমনকী এই রিপোর্টে নাম করা হয়েছে বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। তাঁর মদত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
বঙ্গ বিজেপির পক্ষ থেকে পেশ করা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, "রাজ্যের মদতপুষ্ট মাফিয়ারা পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের যোগসাজশে পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে"। বিজেপির ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিমের দাখিল করা রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, রা্জ্যের আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে এবং বাংলার মানুষ তৃণমূলের শাসনের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে।
বিজেপির ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি রামপুরহাটের বগটুইটে হিংসার ঘটনার জন্য রাজ্যে মদতে তোলাবাজি, গুন্ডা-ট্যাক্স, কাট-মানি প্রথাকে দায়ী করেছে। বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যদের উপর যখন আক্রমণ করা হয়েছিল, তখন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একজন আধিকারিক বা পুলিশকর্মীকে দেখা যায়নি।
বিজেপির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে অসহযোগিতা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ডিজিপি এবং অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির তরফে এমনই দাবি করা হয়েছে। তা রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে ফলাও করে।
বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে নারকীয় হত্যালীলার পরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা চার প্রাক্তন আইপিএস অফিসার এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে নিয়ে একটি পাঁচ সদস্যের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছিলেন। সেই কমিটিই এদিন জেপি নাড্ডার কাছে বীরভূমের ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট পেশ করে।
বিজেপির এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন ডিজিপি রাজসভা সাংসদ শ্রী ব্রজলাল, মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার লোকসভার সাংসদ সত্যপাল সিং, প্রাক্তন আইপিএস অফিসার রাজ্যসভার সাংসদ কে.সি. রামামূর্তি; বঙ্গ বিজেপির সভাপতি লোকসভা সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এবং বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ।
কমিটির সদস্য সুকান্ত মজুমদার বলেন, "বিজেপির ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি বীরভূমের যে গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে গিয়েছিল। ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যদের কারণে গ্রামে পৌঁছতে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছিল।" পুলিশের সহযোগিতা ছাড়াও আমরা গ্রামে গিয়ে জানতে পেরেছি এই হিংসার পিছনে রয়েছে রাজ্য সরকরে পূর্ণ মদত।
বীরভূমের রামপুরহাট এলাকায় ২১ মার্চ তৃণমূল নেতা ভাদু শেখকে হত্যার পরে উত্তেজিত এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় আটজন নিহত হন। পরে হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একজন মহিলার মৃত্যুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯-এ দাঁড়িয়েছে। এখন তিনজন অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় লড়াই চালাচ্ছে মৃত্যুর সঙ্গে।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের আদেশের পর গণহত্যার তদন্তভার উঠেছে সিবিআইয়ের হাতে। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল এসআইটি গঠন করেছিলেন। কিন্তু আদালত তা খারিজ করে সিবিআইকে দায়িত্ব দেয়।