সূচপুরের গণহত্যা মনে করাল রামপুরহাট, তৃণমূল নেতা খুনে রাতভর দুষ্কৃতী তাণ্ডব, পুড়ে মৃত ১০ জন
অগ্নিগর্ভ রামপুরহাট, ভাদু শেখের মৃত্যুর জেরে একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পুড়ে মৃত্যু ১০ জনের
গতকাল রাতে ভর বোমাবাজি চলেছে রামপুরহাটে। তৃণমূল কংগ্রেস উপপ্রধান ভাদু শেখের মৃত্যু পর একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয় তাতে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১০ জন মারা গিয়েছেন রামপুর হাটে।
ছোট আঙাড়িয়ার ছায়া দেখা যাচ্ছে রামপুরহাটের বকটুই গ্রামে। গতকাল বোমাবাজিতে তৃণমূল কংগ্রেস উপ প্রঝান ভাদু শেষের মৃত্যু পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। রাতভর গ্রামে চলেছে বোমাবাজি, দুষ্কৃতি তাণ্ডব। কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সূত্রের খবর গতকাল উপপ্রধানের অনুগামীরা রাতভর বকটুই গ্রামে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ পিকেট থাকলেও কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা নিেয় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
২০০০ সালে বাম আমলে ছোট আঙাড়িয়ায় এইরকমই ঘটনা ঘটেছিল। আবার সূচপুরের গণহত্যার ঘটনাকেও রামপুরহাটের বকটুই গ্রামের এই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। রামপুরহাটে গতকাল থেকেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেছেন , সেরকম বড় কিছু ঘটেনি। ২ চারটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কারোর মৃত্যুর খবর পাননি বলে দাবি করেছেন বীরভূমের দুঁদে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডল।
এদিকে দমকল এবং পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে গতকাল বোমাবাজিতে তৃণমূল কংগ্রেস উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা। তারপর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রামপুরহাট। পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছিল রাতেই। পুলিশের টহলদারীর মাঝেই বকটুই গ্রামে রাতভর তাণ্ডব চালা। বোমাবাজির পাশাপাশি ১০ থেকে ১২টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সকালে একটি বাড়ি থেকে ৭ জনের দগ্ধ দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আরও তিনটি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনে একেবারে গলে গিয়েছে দেহগুলি। নারী না পুরুষ চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এতটাই খারাপ অবস্থা দেহগুলির। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে একটি ঘরের মধ্যে সাতজনকে কীভাবে পুড়িয়ে মারা হল। তারা কেউ চিৎকার করলেন না কেন। আর পুলিশ তখন কী করছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্র নাথ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন ভাদু শেখের মৃত্যুর সঙ্গে পুড়ে হত্যার ঘটনার কোনও যোগাযোগ রয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে। থমথমে হয়ে রয়েছে গোটা এলাকা। পুলিশ পিকেট রয়েছে গ্রামে। ইতিমধ্যেই পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ সাত জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু দমকলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ১০ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে পুলিশ। যে বাড়িগুলি পুড়ে গিয়েছে সেগুলি ঘুরে দেখবেন পুলিশ সুপার। ইতিমধ্যেই স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।
এদিকে বিরোধীরা এই নিয়ে সরব হয়েছেন। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। একের পর এক জায়গায় খুন হচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। পাণিহাটিতে কাউন্সিলর খুন। তারপরেই আবার ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর খুন। বীরভূমে পঞ্চায়েত উপ প্রধান খুন। রাজ্যে খুন, হিংসার সন্ত্রাস চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সমীক ভট্টাচার্য। পুলিশের সামনেই কীভাবে এতজনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।