ভারতে ১১ বছরে ডায়বেটিসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৫০%, উদ্বেগের বিষয় বটেই!
নয়াদিল্লি, ১৪ অক্টোবর : জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের জিনগত পরিকাঠামোরও আমুল পরিবর্তন হয়েছে। আর তার জেরে যে তথ্য উঠে এসেছে তা সত্য়িই উদ্বেগজনক।
২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ভারতে ডায়বেটিসে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে দেশে মৃত্যুর সাধারণ কারণ হিসাবে সপ্তম স্থানে রয়েছে ডায়বেটিস। ২০০৫ সালে যা ছিল একাদশ স্থানে। গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ (GDB)-র প্রকাশিত তথ্যে এমনই উদ্বেগজনক তথ্য ধরা পড়েছে। [(ছবি) ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করার ঘরোয়া কিছু টোটকা]
দেশে মৃত্যুর সবচেয়ে সাধারণ কারণ হিসাবে ১ নম্বরে রয়েছে ইস্চেমিক হৃদরোগ। এর পরে রয়েছে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, সেরেব্রোভাস্কুলার, নিম্ন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, ডায়রিয়া এবং যক্ষা।
২০১৫ সালে ৩,৪৬,০০০ মানুষের ডায়বেটিসে মৃত্যু হয়েছে। যা মোট মৃত্য়ুর সংখ্যার ৩.৩%। GDB-র তথ্য অনুযায়ী ১৯৯০ সাল থেকে বাৎসরিক এই সংখ্যা ২.৭% বৃদ্ধি পেয়েছে।
রিপোর্ট বলছে, প্রত্যে ১,০০,০০০ মানুষের মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যু হয় ডায়বেটিসে। অক্ষম বা বিকলাঙ্গ হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ডায়বেটিস। এবং এদের মধ্যে ২.৪% জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে প্রাণ হারান। [(ছবি) জেনে নিন রোজকার কোন খাবার ডায়বেটিসের বিপদ ডেকে আনে]
ভারতে ৬৯.১ মিলিয়ন মানুষ রয়েছেন যারা ডায়বেটিসে আক্রান্ত। চিনের পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ভারত। চিনে ১০৯ মিলিয়ন মানুষ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। যাদের মধ্যে ৩৬ মিলিয়নের রোগ নির্নয়ই করা যায়নি। ২০-৭৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৯% ডায়বেটিসে আক্রান্ত।
ডায়বেটিস নিয়ে পরিসংখ্যান সত্যিই উদ্বেগজনক। কারণ, ডায়বেটিস শরীরের শুধু কোনও একটি অংশ বা অঙ্গকে নয়, বরং গোটা শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ডায়বেটিসের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি হারানো এমনকী স্নায়ুর সমস্যার জেরে পা বাদ পর্যন্ত দিতে হতে পারে।
কেন ডায়বেটিসের এই বারবাড়ন্ত? জিনগত সমস্যা এবং লাইফস্টাইলের পরিবর্তনের উপর দায় বর্তায়
সামাজিক ও জিনের পরিবর্তনের কারনে ভারতীয়দের মধ্যে ডায়বেটিসের প্রবণতা বাড়ছে। জিনের অস্বাভাবিক কম্পোজিসনের কারনে (যাকে বলে "এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফেনোটাইপ") মানুষ রোগা হয়ে যায় কিন্তু ফ্যাট তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে জমা হতে থাকে।
এরফলে, ভুঁড়ি বাড়তে থাকার প্রবণতা বেড়ে যায়। ইনসুলিন উৎপাদনে বাধা তৈরি হয়। শরীর খারাপ ফ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যার ফলে ডায়বেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। [(ছবি) ডায়বেটিস থেকে মুক্তি পেতে মেনে চলুন এই সহজ উপায়]
কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়া, কার্বোহাইড্রেট ভরপুর ডায়েট তার উপর পরিবেশগত ফ্যাক্টর তো রয়েইছে। যার ফলে ভারতে ডায়বেটিসের বোঝা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডায়বেটিসের খরচ : শহুরে দরিদ্র পরিবার তাদের আয়ের ৩৪% খরচ করে চিকিৎসার জন্য
আনুমানিক হিসাব করে দেখা গিয়েছে ডায়বেটিস রোগীরা শহরে প্রতিবছর ১০,০০০ টাকা এবং গ্রামাঞ্চলে বছরে ৬,২৬০ টাকা চিকিৎসার জন্য খরচ করে।
ডায়বেটিসের খরচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেডিক্লেমের মাধ্যমে পাওয়া যায় না, তাই গ্যাঁটের টাকা খরচ করেই চিকিৎসা করাতে হয়, সেক্ষেত্রে যারা নিম্ন আয় সীমায় রয়েছেন তাদের উপর চাপটা অনেক বেশি। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে শহুরে মানুষ রোগীরা যেখানে ৩৪% খরচ করেন, সেখানে গ্রামাঞ্চলের মানুষ তাদের আয়ের ২৭ শতাংশ চিকিৎসার খরচে লাগান। [ (ছবি) ১০ ম্যাজিক খাবার যা মাত্র ৩০ দিনে ডায়বেটিসকে দেবে বাজিমাত]
IDF-এর তরফে আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০৪০ সালের মধ্যে ২০ থেকে ৭৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ডায়বেটিসের সংখ্যা ১২৩ মিলিয়ন ছাড়াতে পারে। ফর্টিস সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ফর ডায়বেটিস, মেটাবলিক ডায়বেটিস অ্যান্ড এন্ড্রোক্রিনলজি, নয়াদিল্লির চেয়ারম্যান অনুপ মিশ্রর কথায় "ডায়বেটিসের মোকাবিলা করতে আমাদের জাতীয়স্তরে প্রচার অভিযান চালাতে হবে। যেভাবে পাল্স পোলিওর মোকাবিলায় জাতীয় প্রচার শিবিরকে কাজে লাগানো হয়েছে সেভাবেই। খুব শীঘ্রই যক্ষা, এইচআইভি এবং ম্যালেরিয়ার চেয়েও বড় সমস্যায় পরিণত হতে পার ডায়বেটিস।"