ফিরে দেখা ২০২০! করোনা-আমফান দুর্যোগের আবহে কেমন ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগণা?
করোনা-আমফান দুর্যোগের আবহে ২০২০ সাল কেমন কাটল দক্ষিণ ২৪ পরগণার?
পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা ভারতবর্ষের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অঞ্চল হল সুন্দরবন। আর এই সুন্দরবনের প্রায় সিংহভাগ অঞ্চলটাই যে জেলার আওতায় রয়েছে, তা হল দক্ষিণ ২৪ পরগণা। তবে করোনার দাপাদাপি হোক বা আমফান ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবলীলা, গত একবছরে একাধিকবার তছনছ হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার অধিবাসীদের জনজীবন। এমতাবস্থায় গত এক বছরে কতটা সমস্যার সম্মুখীন হলেন তাঁরা, আসুন আজ তাই জেনে নেওয়া যাক একনজরে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই সর্বাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে এই জেলা
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলের সর্বশেষ জেলা এই দক্ষিণ ২৪ পরগণা। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী হওয়ায় আমফানের সর্বাধিক প্রভাব পড়ে এই জেলার উপরেই। বিপন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ থেকে নানা প্রজাতির পশুপাখি প্রাণ হারায় এই বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে। গাছ ভেঙে তছনছ হয়ে যায় হাজার হাজার কাঁচাবাড়ি, একধিক বড় বড় রাস্তাও। সহজ কথায় আমফানের তাণ্ডবলীলার কারণেই কার্যত গোটা পশ্চিমবঙ্গের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দক্ষিণ ২৪ পরগণা।
আক্রান্তের নিরিখে বাংলায় তৃতীয় স্থানে দক্ষিণ ২৪ পরগণা
এদিকে রাজ্য স্বাস্থ্যদফতর সূত্রে খবর, করোনা আক্রান্তের নিরিখে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগণা। সরকারি আধিকারিকদের মতে, গত মার্চে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই যেভাবে পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেন তাতে গোটা জেলা জুড়েই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে সংক্রমণ। অন্যদিকে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আমফানের দাপটে স্বাস্থ্যব্যবস্থাও প্রবলভাবে বিঘ্নিত হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগণায় অব্যাহত করোনার দাপট
এদিকে সুন্দরবন অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষেরই প্রধান জীবিকাই মাছ ধরা বা মধু আহরণ। তাই স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব প্রকট এই জেলায়। এমনকী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিরিখেও দেশের জেলা তালিকাতেও অনেকটাই নীচেই রয়েছে এই জেলা। স্বাস্থ্যদপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ ২৪ পরগণায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে ৩৬,৫০০ জন। মারা গেছেন ৬৫৩ জন। যদিও সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৩,৯৭৭ জন।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কবলে পড়ে ১৮ জনের মৃত্যু
দক্ষিণ ২৪ পরগণার অধিকাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে সুন্দরবনের সঙ্গে। যদিও ভারতে একমাত্র রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থলও আবার এই সুন্দরবনই। জেলা প্রশাসনের খবর, এ বছর এখনও পর্যন্ত বাঘের থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন মৎস্যজীবী। তাছাড়াও কাঠ-মধু-ফল আহরণের সময়ে বাঘ ছাড়াও সাপের ছোবলে মারা যান কাঠুরে ও অন্যান্য গ্রামবাসীরা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও বনসৃজনে এগিয়ে এই জেলা
গত এক শতাব্দীর ভয়ংকরতম ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগণা। আমফান সহ অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে ইতিমধ্যেই ক্ষতি হয়েছে লক্ষাধিক গাছগাছালির। যদিও বনসৃজনের দিক থেকে পিছিয়ে নেই এই জেলা। এ বছরই রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জির উদ্যোগে রোপণ করা হয়েছে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ চারা।
বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক সংঘাতে উত্তপ্ত হয়েছে গোটা জেলাই
প্রাকৃতিক ছাড়াও রাজনৈতিক সংঘাতেও খুব একটা পিছিয়ে নেই দক্ষিণ ২৪ পরগণা। গত ১০ই ডিসেম্বর জেলার ডায়মন্ডহারবারে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সভাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের রূপ নেয় গোটা এলাকা। নাড্ডার কনভয়ে সরাসরি হামলার ঘটনায় বিজেপি আঙ্গুল তোলে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের উপর। যদিও সবরকমের অভিযোগ খারিজ করে দেয় রাজ্যের শাসক দল। এছড়াও বছরভর একাধিক রাজনৈতিক সংঘাতের সাক্ষী থাকে গোটা জেলাই।
ফিরে দেখা ২০২০: বছর শেষে পূর্ব বর্ধমানের বেশ কিছু ঘটনা দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে