মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে? অর্জুন না কর্ণ, মহাবিতর্কের পক্ষে-বিপক্ষে উঠে আসে যেসব যুক্তি
মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে? তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। মহাভারতে অনেক যোদ্ধাই ছিলেন। তবু তার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বারবার যে দুই চরিত্র উঠে এসেছে, তা হল- অর্জুন আ কর্ণ। কেউ বলেন অর্জুন সেরা, কারও মতে কর্ণ।
মহাভারতের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে? তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। মহাভারতে অনেক যোদ্ধাই ছিলেন। তবু তার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বারবার যে দুই চরিত্র উঠে এসেছে, তা হল- অর্জুন আ কর্ণ। কেউ বলেন অর্জুন সেরা, কারও মতে কর্ণ। আবার কেউ কেউ ভীষ্মকেও এগিয়ে রাখেন এই লড়াইয়ে।
আমরা এই প্রতিবেদনে মূলত আলোচনা করব, অর্জুন ও কর্ণের মধ্যে সেরা যোদ্ধা কে? মহাভারতে অনেকে কর্ণকে এগিয়ে রাখেন। তার অন্যতম কারণ অর্জুনের কৃষ্ণ-নির্ভরতা। কর্ণকে যাঁরা এগিয়ে রাখেন তাঁদের মতে, অর্জুন ছিলেন কৃষ্ণের উপর নির্ভরশীল। আর দুর্যোধন নির্ভর করতেন কর্ণের উপর।
কর্ণ দ্রোনাচার্যের কাছে শিক্ষা পাননি, তাই তাঁকে ছল করে পরশুরামের কাছে শিক্ষা নিতে হয়েছিল। সেখানে শিক্ষা নিতে গিয়ে তাঁকে অভিশাপও কুড়াতে হয়েছিল। তা মাথায় করেও বীরবিক্রমে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। ইন্দ্রদেব কর্ণের বর্ম ও কুণ্ডল প্রতারণা করে দখল করেছিলেন। তারপরও তিনি যুদ্ধে বীরত্বের পরিচয় রেখে যান।
পরশুরামের দেওয়া শিবের বিজয় ধনুক ছিল কর্ণের কাছে। সেই ধনুক তাঁর হাতে থাকলে তাঁকে হত্যা করা যেত না বলেও অনেকে যুক্তি দেখান। ধনুক বিহীন করে তাঁকে হত্যা করা হয়। তারপর কর্ণ একাই জরাসন্ধকে পরাজিত করেছিলেন। পক্ষান্তরে রাজা ভগদত্তকে অর্জুন পরাজিত করতে পারেননি। কর্ণের কাছে তিনি পরাজয় স্বীকার করেছিলেন।
কর্ণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি অর্জুন ছাড়া কোনও পাণ্ডবকে হত্যা করবেন না। বাকি চার পাণ্ডব কর্ণের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁদের হত্যা করেননি। তাঁদের প্রাণদান করেছিলেন। অশ্বসেন নামক সর্প অর্জুনকে দংশ করে প্রতিশোধ নিতে চাইলেও কর্ণ তাঁকে হত্যা করতে বারণ করেন।
প্রথম অর্জুনের তীরে কর্ণের রথে কয়েক গজ পিছিয়ে যায়, তারপর কর্ণের তীরে অর্জুনের রথ কয়েক ইঞ্চি পিছিয়ে যায়, তারপর কৃষ্ণ কর্ণের প্রশংসা করেন। অর্জুনের তীরে কয়েক গজ পিছিয়ে যাওয়ার পরও কেন কর্ণকে বাহবা দিয়েছিলেন, তার যুক্তিও দেন কৃষ্ণ। কর্ণকেই তিনি বেশি কৃতিত্ব দেন। কর্ণের রথে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বসে আছেন, হনুমান রয়েছেন, তারপরও কর্ণ রথটিকে পিছিয়ে দিয়েছেন, তা কৃতিত্বের।
আর তার পরিপ্রেক্ষিতে যাঁরা অর্জুনকে এগিয়ে রাখেন, তাঁদের যুক্তি- কর্ণ কবচকুণ্ডল থাকা সত্ত্বেও দ্রুপদের কাছে হেরেছন। অর্জুনের কাছে একাধিকবার হেরেছেন, বিরাট-যুদ্ধেও হেরেছেন আদি-পর্বে। ভীমের কাছে হেরেছিলেন কর্ণ। গন্ধর্বরাজ চিত্রসেনের কাছেও হেরেছিলেন। অর্জুন প্রথম ও শেষ জনকে পরাজিত করেছিলেন।
আর অর্জুনকে যাঁরা শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা মনে করেন। তাঁদের মতে কর্ণ কবচ-কুণ্ডল দান করেননি, তিনি তা বিক্রয় করেছিলেন। তিনি কবচকুণ্ডল দিয়ে বিনিময়ে একাঘ্নি বাণ নিয়েছিলেন। যা তিনি অর্জুন বধের জন্য রেখে দিয়েছিলেন। আর বিজয় ধনুক কতজনের কাছে ছিল তা নিয়েও মহাভারতে নানা উপাখ্যান রয়েছে।
কর্ণ শুধু অর্জুনের কাছে নয়, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভীমের কাছে ৫ থেকে ৬ বার হেরেছে। ভীমকে হারাতে পেরেছেন মাত্র একবার। সাত্যকির কাছেও হেরেছিলেন কর্ণ। অভিমন্যুও দুবার কর্ণি বাণ দিয়ে কর্ণকে ধরাশায়ী করেছিলেন। আর অশ্বসেনকে কর্ণ বারণ করেননি, দ্বিতীয়বার অর্জুনকে আক্রমণ করতে এলে অর্জুন তাঁকে কেটে দেন।
অর্জুনের কৃতিত্বের তালিকাটা আরও দীর্ঘ। তিনি দ্রুপদকে বন্দি বানিয়েছিলেন, কর্ণ পারেননি। মানুষের অগম্যস্থানে গিয়ও জয়লাভ করে এসেছেন। খাণ্ডবপ্রস্থ দহন করতে গিয়ে তিনি দেব, লোকপাল, দিকপাল, দানব সবাইকে পরাজিত করেছেন। মহাদেবকে যুদ্ধে সন্তুষ্ট করেছেন। নিবাতকবদের পরাজিত করেন, দেবতারাও তাদের পরাজিত করতে পারেননি। তারপর কালকেয়দের বধ করেছিলেন।
বিরাট যুদ্ধে তিনি একা ভীষ্ম, দ্রোনাচার্য, কৃপাচার্য, কর্ণ, অশ্বথামা, দুর্যোধন, দুঃশাসনকে পরাজিত করেছিলেন। আর কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মহারথীদের মধ্যে তিনি একা আর বিপক্ষে ভীষ্ম, দ্রোন, কর্ণের মতো মহাযোদ্ধারা। সেটাও কি কম কৃতিত্বের। তাই কর্ণের থেকে অর্জুনই শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তবে কর্ণের সঙ্গে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে, তাতে তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, তা বাহবা পায়। যেমন বাহবা পেয়েছিলেন কৃষ্ণেরও।