অর্জুন আর কৃষ্ণ কে ছিলেন পূর্বজন্মে! কেনই বা তারা জন্ম নিয়েছিলেন মহাভারতের যুগে
অর্জুন আর কৃষ্ণ কে ছিলেন পূর্বজন্মে! কেনই বা তারা জন্ম নিয়েছিলেন মহাভারতের যুগে
মহাভারতে অর্জুন ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর আর ভগবান কৃষ্ণ তাঁর সারথি। যুগে যুগে ধর্ম সংস্থাপনের জন্য নারায়ণকে আবির্ভূত হতে হয়েছে। দ্বাপরে তিনি সারথি কৃষ্ণ রূপে মহান কাজের জন্য আবির্ভূত হন। কিন্তু অর্জুনকে কেন তাঁর সঙ্গী হয়ে আসতে হয়েছে। একই সময়ে উভয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। একজন মথুরায়, অন্যজন হস্তিনাপুরে। সম্পর্কে তাঁরা ছিলেন মামাতো-পিসতুতো ভাই। আবার প্রিয় সখাও।
কিন্ত পূর্বজন্মে কী ছিল তাঁদের পরিচয়? অনেকেই বলবেন পূর্বজন্মে শ্রীকৃষ্ণ তো স্বয়ং নারায়ণ, সত্য যুগে তিনি শ্রীবিষ্ণু, ত্রেতা যুগে তিনিই শ্রীরাম। আর দ্বাপরে তিনি শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু না তিনি দ্বাপরে কৃষ্ণরূপে অবির্ভুত হওয়ার আগে এক অন্য পরিচয় ছিল তাঁর। সে কথায় পরে আসছি। কিন্তু অর্জুন কে ছিলেন, তা নিশ্চয়ই অনেকের অজানা।
পূর্বজন্মে কে ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ আর কেই-বা ছিলেন অর্জুন? তার জানতে হলে এক উপাখ্যান শুনতে হবে। হরিবংশ পুরাণে বর্ণিত হয়েছে। হরিবংশ পুরাণ অনুযায়ী কৃষ্ণ ও অর্জুন হলেন শ্রীবিষ্ণু অর্থাৎ নারায়ণেরই রূপ। বিশেষ কাজের জন্য তাঁরা দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে নেমে এসেছিলেন ধরায়। সমাধা করেছিলেন বাকি কাজের।
রামায়ণের যুগ শেষ হওয়ার পর মহাভারত যুগ শুরুর আগে কিষ্কিন্ধারাজ সুগ্রীব দম্ভোদভব রাক্ষস হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সূর্যের পরম ভক্ত ওই রাক্ষস কঠোর তপস্যায় সূর্যদেবকে প্রসন্ন করে সহস্র কবচ সম্বলিত এক মহাশক্তিশালী সুরক্ষা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এই সহস্র কবচের একটি ধ্বংস করতে চাইলে এক হাজার বছর তপস্যা করে আসতে হবে। এবং তা ধ্বংস করতে গেলে জীবনীশক্তি শেষ হয়ে যাবে। এই বর কার্যত অমরত্বের সমান।
এমন অমিতশক্তির অধিকারী দম্ভোদভব সহস্রকবচ হয়ে প্রবল অত্যাচার শুরু করেন। তাঁর অত্যাচার থেকে ত্রিভুবন রক্ষা করতেই ভগবান বিষ্ণু দুই অংশে বিভক্ত হয়ে যমজ শিশু রূপে জন্মগ্রহণ করতে হয়। একজনের নাম হয় নর অন্যজন নারায়ণ। নর হলেন মানবাত্মা আর নারায়ণ হলেন দিব্যাত্মা। এরপর তারা দম্ভোদভবের সহস্রকবচ ধ্বংস করার জন্য তপস্যা শুরু করেন।
নর ও নারায়ণ তপস্যার জন্য বেছে নিলেন হিমালয়ের কেদার নামক পর্বতশৃঙ্গকে। এখানে যদি এক দিন ধ্যান করা হয় সেটি হবে এক হাজার দিন ধ্যানের সমান। নর ও নারায়ণ মহাদেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে এবং মহামৃত্যুঞ্জয় জ্ঞান লাভ করে তপস্যায় ব্রতী হন। এমন সময় সহস্রকবচের কাছে খবর গিয়ে পৌঁছয় নর ও নারায়ণ নামক দুই ঋষি বহুকাল যাবৎ হিমালয়ের এক শৃঙ্গে ধ্যানমগ্ন হয়ে রয়েছেন। তাঁদের দেহ থেকে দিব্যজ্যোতি প্রকট হয়ে উঠেছে। আর তাঁদের মন্ত্রোচ্চারণের তেজে পুরো হিমালয় পর্বতমালা প্রকম্পিত হচ্ছে।
সহস্রকবচ তা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়েন। এরপর তিনি নর ও নারায়ণের উপর আক্রমণ করে বসেন। নর ও নারায়ণ এরপর একে একে সহস্রকবচের সঙ্গে একদিন করে যুদ্ধে মুখোমুখি হন। অপরজন তপস্যা করতে থাকেন। আর একটি একটি কবচ ধ্বংস করতে থাকেন। প্রতিবার কবচ ধ্বংস করলে তাঁদের জীবনী শক্তি শেষ হয়ে যায়, তখন অপরজন মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রবলে তাঁকে বাঁচিয়ে তোলেন।
এভাবে এক এক করে ৯৯৯টি কবচ ধ্বংস হয়ে যায়। তখন প্রাণভয়ে সহস্রকবচ পালাতে শুরু করেন। নর ও নারায়ণ তাঁকে তাড়া করেন। শেষে পালিয়ে গিয়ে সূর্য দেবের আশ্রয়ে চলে যান সহস্রকবচ। সূর্যদেব তাঁকে নর ও নারায়ণের হাত থেকে রক্ষা করতে অবশিষ্ট একটি কবচ-সহ কুন্তীর গর্ভে স্থাপন করেন। কুন্তীর সেই পুত্রই হলেন কর্ণ। যাকে সূর্যপুত্র হিসেবেও আমরা জানি। সহস্রকবচ কর্ণরূপে জন্মগ্রহণ করায় তাঁকে নিধন করতে নর ও নারায়ণকে আসতে হয় ধরায়। নারায়ণ কৃষ্ণরূপে দেবকীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। আর নর অর্জুনরূপে কুন্তীর গর্ভে।
এই উপাখ্যান শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারলেন কৃষ্ণ আর অর্জুন কে ছিলেন পূর্বজন্মে। নর অর্থাৎ মানবাত্মা হিসেবে জন্ম হয়েছিল অর্জুনের। আর নারায়ণ অর্থাৎ দিব্যাত্মা হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কৃষ্ণ। এরপর তাঁরা মিলিত হয় শুধু কর্ণরূপী দম্ভোদভবকে নিধন করেননি, তাঁদের অভ্যুত্থান অধর্মের বিনাশ ঘটে ধর্ম স্থাপিত হয়েছিল পুনরায়।
কর্ণ আর অর্জুন পূর্ব জন্মে কে ছিলেন? এ এক জন্ম-জন্মান্তরের শত্রুতার উপাখ্যান, শেয হয়েছিল মহাভারতে