অর্জুনের থেকেও ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন! শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর হতে পারেননি গুরুদক্ষিণার কারণে
দ্রোনাচার্যের শিষ্যদের মধ্যে মধ্যম পাণ্ডব অর্জুন ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ। ধনুর্বিদ্যায় তিনি ছিলেন সবথেকে পারদর্শী। তাঁর লক্ষ্য ছিল অব্যর্থ। অর্জুনকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর বানানোর সঙ্কল্প নিয়েছিলেন গুরু দ্রোন।
দ্রোণাচার্যের শিষ্যদের মধ্যে মধ্যম পাণ্ডব অর্জুন ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ। ধনুর্বিদ্যায় তিনি ছিলেন সবথেকে পারদর্শী। তাঁর লক্ষ্য ছিল অব্যর্থ। অর্জুনকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর বানানোর সঙ্কল্প নিয়েছিলেন গুরু দ্রোন। তা তিনি পূরণও করেছিলেন। কিন্তু তাঁর পিছনে রয়েছে এক কাহিনি। কারণ অর্জুনের থেকেও ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন এক ধনুর্ধর।
অর্জুনের থেকেও 'বড়' সেই ধনুর্ধরের নাম একলব্য। মহাভারতের যুগে শ্রিংভারপুর বর্তমানে প্রয়াগ প্রদেশ ছিল তৎকালীন আদিবাসী এলাকা। গঙ্গার তীরে অবস্থিত শ্রিংভারপুরের রাজা ছিলেন ব্যাতরাজ হিরণ্যধনু। রাজা হিরণ্যধনু ও রানি সুলেখার পুত্র ছিলেন অভিদুম্ন। তিনি অভয় নামেও পরিচিত ছিলেন। গুরুকুলে অস্ত্রশস্ত্রে তাঁর নিষ্ঠা ও সততা দেখে তাঁকে একলব্য নাম দেন তাঁর গুরুদেব।
গুরুকুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ফিরেও তিনি ধনুর্বিদ্যায় সন্তুষ্ঠ ছিলেন না। আরও শিক্ষার আশায় তিনি দ্রোণাচার্যের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দ্রোণাচার্য ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় ভিন্ন কাউকে ধনুর্বিদ্যার শিক্ষা দান করেন না। একলব্যের পিতা হিরণ্যধনু তা জানতেন। তাই তিনি একলব্যকে নিষেধ করেন। কিন্তু ছাড়ার পাত্র ছিলেন না একলব্য। দ্রোণাচার্যের কাছে গিয়ে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে আসেন।
তবু তিনি দমেননি। তিনি বনে অবস্থান করে তিরন্দাজির অনুশীলন করতে থাকেন। আর গুরু হিসেবে তিনি দ্রোণাচার্যের একটি মূর্তি তৈরি করেন। তাঁর ধ্যান করে ধনুর্বিদ্যা আয়ত্ত করেন। এভাবেই তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনুর্বিদ হয়ে ওঠেন। একদিন দ্রোণাচার্য তাঁর শিষ্যদের নিয়ে বনে যাচ্ছিলেন। হঠাৎই লক্ষ্য করেন একটি কুকুরকে এমনভাবেই শর নিক্ষেপ করা হয়েছে, সে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। অথচ কোনও আঁচড় লাগে তাঁর শরীরে।
তা দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে যান গুরু দ্রোণাচার্য। কে এমন শরনিক্ষেপ করল! এমন দক্ষ তির চালনা কীভাবে সম্ভব। এই চমৎকার ধনুর্বিদ্যা দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন তাঁর শিষ্যরাও। এরপর সেই তিরন্দাজের সন্ধানে একলব্যের আশ্রমে এসে হাজির হন দ্রোণাচার্য। সেখানে গিয়ে দখেন একলব্য এমনই তির নিক্ষেপ করছেন, যা মহারথীরাও পারেন না। দ্রোণাচার্য তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার গুরু কে? একলব্য তাঁকে তখন মূর্তিটি দেখান। তাঁর গুরুভক্তি দেখে অবাক হয়ে যান দ্রোণাচার্য।
দ্রোনাচার্য এরপর একলব্যকে বলেন, তুমি যদি আমাকে তোমার গুরু মনে করো, তবে আমাকে গুরু দক্ষিণা দাও। একলব্য নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত হন। কিন্তু জীবন নয়, দ্রোণাচার্য একলব্যের কাছে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ চেয়ে বসেন। একলব্য বিনা দ্বিধায় গুরুতে বুড়ো আঙুল অর্পণ করেন। সমালোচকরা বলেন, অর্জুনকে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধারী বানাতেই তিনি এই গুরুদক্ষিণ চেয়েছিলেন।
আবার একাংশ মনে করেন, একলব্য তির সন্ধানে মহা পারদর্শী হলেও তাঁর মধ্যে সহনশীলতার অভাব ছিল। তাই তিনি কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে বিরক্ত হয়ে অবলা জন্তুর উপর তাঁর শিক্ষার অসদ্ব্যবহার করেছিলেন। এই শিক্ষার অভাবে তিনি যদি সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠেন তবে জগতের অমঙ্গল হবে, ক্ষতিসাধন হবে। তাই তাঁর কাছে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ গুরুদক্ষিণ চেয়েছিলেন।
এক লেখনীতে পাওয়া যায়, একলব্য যাতে বুড়ো আঙুল ছাড়াই বিশেষভাবে দক্ষ ধনুর্ধারী হয়ে ওঠেন, বুড়ো আঙুল ছাড়াও শর সন্ধান করতে পারেন, সেই শিক্ষা দিয়েছিলেন দ্রোণাচার্য। একলব্যকে আধুনিক ধনুর্বিদ্যার জ্ঞান দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, আধুনিক তিরন্দাজি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ছাড়া তর্জনী ও মধ্যমা দিয়ে হয়। যে শিক্ষা একলব্য দ্রোণাচার্যের কাছে পেয়েছিলেন সেই মহাভারতের যুগে।
খুব শীঘ্রই নিজের ফিটনেস ব্র্যান্ডে বিনিয়োগ করতে চলেছেন বলিউডের এই অভিনেত্রী