কংগ্রেস এখন অনেক নমনীয়, তবু রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী চয়নে মমতারই জয় দেখছে রাজনৈতিক মহল
কংগ্রেস এখন অনেক নমনীয়, তবু রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী চয়নে মমতারই জয় দেখছে রাজনৈতিক মহল
বিরোধী দলগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যশবন্ত সিনহাকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী মেনে নিয়েছে। কংগ্রেস-সহ ২০টি দল সমর্থন করেছে তাঁকে। যশবন্তের এই মনোনয়নকে রাজনৈতিক মহল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় হিসেবেই দেখছে। তৃণমূল থেকে প্রথমবার কোনও রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হলেন, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে ভূমিকা নিলেন, তাতে তাঁর বিরোধী ঐক্য গড়ার উদ্যোগ কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছে।
তৃণমূলের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রস্তাব মেনে নিচ্ছে কংগ্রেস এবং সিপিএম-সহ বাম দলগুলিও, তা জাতীয় রাজনীতিতেও বিরল। কংগ্রেস ও বাম-সহ ১৮টি দলকে এক মঞ্চে নিয়ে এসে এবং জোট-বিচ্ছিন্ন দুই দলের সমর্থন আদায় করে নেওয়া কম কথা নয়। সেটাই করে দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিগেড। উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়েও তাঁর দুই বন্ধু-দল বেঁকে বসেছিল।
কংগ্রেস এখন জোটের স্বার্থে অনেক নমনীয়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের যশবন্ত সিনহার নাম রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে আনু্ষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন জয়রাম রমেশ। তারপরই কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাগড়ে বলেছেন যশবন্ত সিনহাকে নিয়ে। কংগ্রেসকে যে এভাবে নমনীয় ভূমিকায় পাবে তৃণমূল, তা হয়তো আগে ভাবেনি তৃণমূল। কিন্তু কংগ্রেস এখন জোটের স্বার্থে অনেক নমনীয়। অন্তত উদয়পুরের চিন্তন বৈঠকের পর কংগ্রেসকে নতুন ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।
যশবন্ত ট্রামকার্ড, মমতারই নৈতিক জয়
শারদ পাওয়ার ফারুক আবদুল্লা, গোপালকৃষ্ণ গান্ধীরা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড় থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার পরই উঠেছিল যশবন্ত সিনহার নাম। বিরোধী শিবির সর্বসম্মতভাবে এক প্রার্থীকে বেছে নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। কিন্তু তিনজন প্রার্থী নিজেদের সরিয়ে নেওয়ায় খানিক অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল বিষয়টি। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে যশবন্তকে ট্রামকার্ড হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তাতে তাঁর নৈতিক জয়ই দেখছে রাজনৈতিক মহল।
সামান্য ভোটের ফারাক মুছে দিতে পারেন
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, যশবন্তকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করে একসঙ্গে অনেকগুলি লক্ষ্যভেদ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এনডিএ প্রার্থী এই লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে এমন একজন বিরোধী প্রার্থী হয়েছেন, যিনি সামান্য ভোটের ফারাক মুছে দিতে পারেন।
তৃণমূল আশা রাখছে, খেলা ঘুরতেও পারে
বিজেপি দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করেছে। ওড়িশার আদিবাসী নেতাকে প্রার্থী করার পর নবীন পট্টনায়ক তাঁর দলের সমর্থন তাঁর দিকেই রেখেছেন। এনডিও প্রার্থী প্রয়োজনীয় ভোট না থাকলেও চা বিজু জনতা দল ও ওয়াই এসআর কংগ্রেসের সমর্থন থেকে পেয়ে যেতে পারেন তিনি। তবু যশবন্ত সিনহা যেহেতু বিরোধী প্রার্থী, তৃণমূল আশা রাখছে, খেলা ঘুরতেও পারে।
জাতীয় রাজনীতিতে নির্ধারক ভূমিকায় মমতা
আর বিরোধী শিবিরের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জিতুন বা হারুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৌশলে নিজের দলের সদস্যকে প্রার্থী করে জাতীয় রাজনীতিতে আরও বেশি গুরুত্ব আদায় করে নিলেন। যশবন্ত সিনহাকে তুরুপের তাস করে ২০২৪-এও নরেন্দ্র মোদীর মোকাবিলায় নেতৃত্বদানে এগিয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জ্যোতি বসুর পর বাংলার দ্বিতীয় রাজনীতিক হিসেবে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে নির্ধারক ভূমিকা পালনে সমর্থ হলেন।
মোদী বিরোধী মুখ হিসেবে মমতা অগ্রগণ্য
কেসিআর আর কেজরিওয়ালের আপত্তি সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে কংগ্রেসকে নিয়েই এগিয়েছেন এবং কংগ্রেসকে গুরুত্ব দিয়ে নিজের দলরে প্রার্থীর মনোনয়ন আদায় করে নিয়েছেন, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকাকে শীর্ষাসনে তুলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসকে প্রাধান্য দিয়েও তিনি কেসিআর আর কেজিওয়ালের সমর্থন আদায় করে নিয়েও সফল হয়েছেন। এর ফলে মোদী বিরোধী মুখ হিসেবে মমতা যে অনেক গ্রহণযোগ্য তার প্রমাণও দিয়েছেন।
বিজেপিকে হারাতে আর সংকীর্ণ স্বার্থ নয়
তবে কংগ্রেসও দেখালও তারা বিরোধী জোট গড়ার ব্যাপারে অনেক নমনীয়। উদয়পুরের চিন্তন বৈঠকে যে রোডম্যাপ ধরে তাঁরা এগোতে শুরু করেছিল, তাতে তৃণমূলের প্রস্তাবিত প্রার্থীকে মেনে নিয়ে কংগ্রেস দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। তারা বুঝিয়ে দিল বিজেপিকে হারাতে তারা সংকীর্ণ স্বার্থ ধরে বসে থাকবে না। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নিয়ে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করেছিল কংগ্রেস।
কংগ্রেসকে গুরুত্বের আসনে বসিয়ে বাজিমাত
কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগী হওয়ার পর নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। বামেরা খানিক আপত্তি জানালেও কংগ্রেস কোনও আপত্তি জানায়নি। আবার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী চূড়ান্ত করার ভার মমতা শারদ পাওয়ারের উপর দেওয়ায়, কংগ্রেস কোনও প্রশ্ন তোলেনি। বরং তাঁরা তা মেনেই নিয়েছে। কংগ্রেসকে গুরুত্বের আসনে বসিয়েই শারদ পাওয়ার মমতার প্রস্তাবিত যশবন্ত সিনহার নাম চূড়ান্ত করেছে।
নবীন পট্টনায়কের সমর্থন দ্রৌপদী মুর্মুকে, তাহলে কি বিরোধী ঐক্যের হাত ছাড়ল বিজেডি