'উড়তা পাঞ্জাব' রিভিউ : বিতর্কই দর্শক টানবে থিয়েটারে, হাইপ না থাকলে এছবি আর পাঁচটা ভাল ছবির মতোই!
সিবিএফসি-র সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের সম্মতিতে অবশেষে মুক্তি পেল ইদানিং সময়ের সবচেয়ে চর্চিত এবং সবচেয়ে বিতর্কিত বলিউড ছবি, "উড়তা পাঞ্জাব"। আক্ষরিকভাবেই এই ছবিটি দেখার পরই বোঝা যাচ্ছে ছবিটিকে পুরোপুরি খুন করতে সিবিএফসি কী চেষ্টাটাই না করেছিল। সত্যিই বোর্ডের প্রস্তাবিত কাটছাঁটগুলি মানা হলে দেখার জন্য ছবিতে কিছুই অবশিষ্ট থাকত না।
তবে, এটা খুব স্বাভাবিক একটা ছবি নিয়ে যখন বিতর্ক তৈরি হয়, সেছবি দর্শকদের মনে কৌতুহল জাগায়। বিতর্ক দর্শককে টানে থিয়েটারে। আর স্বাভাবিকভাবেই সেই ছবি নিয়ে বিশাল প্রত্যাশা তৈরি হয়। উড়তা পাঞ্জাবও তারই শিকার। এছবি আর পাঁচটা ভাল ছবির মতোই সাধারণ। একবার দেখার পক্ষে মন্দ নয় গোছের। অসাধারণ বা একেবারে অন্যধরণের, নয়।
ছবির শুরুতে দেখা যাবে এক পাকিস্তানি নাগরিক ডিসকাস ছোঁড়ার মতো করে মাদকের প্যাকেট ছুঁড়ে ফেলছে। এই প্যাকেটেরই একটি এসে পরে আলিয়া ভটের হাতে। যার চোখে দেশের জন্য হকি খেলার স্বপ্ন। কিন্তু জীবনসংগ্রামে সে স্বপ্ন জীবন থেকে মুছে ফেলতে বাধ্য হয়েছে সে। এই মাদক বিক্রি করেই সে তার সমস্যাকে হারাতে পারবে বুঝতে পারে, যেই ভাবা সেই কাজ। আর সেখান থেকেই শুরু হয় সমস্যা।
অন্যদিকে শাহিদ কাপুর হল বার্মিংহাম ফেরত রকস্টার। যার কেরিয়ার একেবারে ডুবন্ত জাহাজের মতো। তার আচার আচারণ, তার মাদকাশক্তিই এর অন্যতম কারণ। করিনা কাপুর একজন ডাক্তার, যিনি নেশা ছাড়ানোর জন্য একটি হাসপাতাল চালান। পাঞ্জাবের এএসআই-এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দলজিৎ দোসাঞ্ঝ। নিজের ভাইকে ড্রাগসের নেশায় ছটফট করতে দেখে যার চারিত্রিক বৈশিষ্টে পরিবর্তন এসেছে।
ছবির শুরুটা ভালই। গতি ছিল, পটভূমিকা ছিল, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে গতি হারাতে শুরু করে আবার ক্লাইম্যাক্সে যেন অযথা তাড়াহুড়ো। ছবির কিছু কিছু দৃশ্য যেভাবে ইলাস্টিক ব্যান্ডের মতো টানা হয়েছে, তার খুব একটা প্রয়োজন ছিল না। ছবির দৈর্ঘ্য কম হলেও জিনিসটা অনেক বেশি কমপ্যাক্ট হত।
এই ছবিতে পাঞ্জাবের একটা অন্যদিক তুলে ধরা হয়েছে। এমন নয় যে ছবিতে যা দেখানো হয়েছে, তা কেউ জানেনা এমনটা নয়। অনেকেই হয়তো জানেন এই বিষয়ে, অনেকেই আবার জানেন না, কিন্তু এই গল্প সবাইকে জানানোটা প্রয়োজন, আর সে কাজটা ছবিনির্মাতারা ভালভাবেই করেছেন।
সার্বিকভাবে বলতে গেলে উড়তা পাঞ্জাব মোটের উপর ভাল ছবি। করিনা নিজের চরিত্রে ভাল অভিনয় করেছেন। আলিয়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও পরিণত অভিনেত্রী হচ্ছেন। দলজিৎকে অনস্ক্রিনে আধুনিক সমাজ অনুযায়ী খুবই বিশ্বাসযোগ্য লেগেছে। তবে, মাদকাসক্ত রকস্টার টমি সিংয়ের চরিত্রে সবাইকে একেবারে গিলে খেয়ে ফেলেছেন শাহিদ কাপুর।
ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছবির পর্দায় দাপিয়ে বেড়িয়েছিন শাহিদ। কে বলবে এই শাহিদকে একসময় চকোলেট বয় বলা হত। সার্থপর, নাকে কোকিন ঠোঁসা এক ব্যক্তি থেকে সহানুভূতিশীল এক ব্যক্তিতে শাহিদের ট্রান্সফরমেশন সত্যিই অবাক করবে। কিছু দৃশ্যে টমিকে দেখে হাড় হিম হবে, কিছু দৃশ্যে তাকেই আপনি ঘেন্না করবেন, আবার কোনও দৃশ্যে এই টমিকে দেখেই আপনার করুণা হবে। ছবিতে কোথাও শাহিদকে দেখতে পারবেন না। শুরু থেকে শেষ শুধুই টমি।
উড়তা পাঞ্জাব অসাধারণ বা অভাবনীয় ছবি নয়, তবে দেখার মতো ছবি বটেই। সবশেষে বলতে ইচ্ছে করছে এছবি নিয়ে বিতর্ক হওয়াটা হয়তো সত্যিই প্রয়োজন ছিল।