আধুনিক যুগের কিং মিডাস আয়ুষ্মান নিজেকে আবার প্রমাণ করলেন ‘বালা’তে
আধুনিক যুগের কিং মিডাস আয়ুষ্মান নিজেকে আবার প্রমাণ করলেন ‘বালা’তে
আপনি কি কখনও কিং মিডাসের গল্প শুনেছেন, যিনি কিছু ছুঁলেই তা সোনায় পরিণত হত? আয়ুষ্মান খুরানা হলেন সেই আধুনিক যুগের মিডাস, যিনি এক বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী, যা হল তাঁর অভিনয়ের দক্ষতা। তাঁর অভিনয় দক্ষতা যে চিত্রনাট্য ছোঁবে সেটাই বিনোদনের সবচেয়ে বড় হিট জায়গায় চলে যাবে। ব্যতিক্রম নয় 'বালা’ও। অমর কৌশিক পরিচালিত 'বালা’র গল্প হল খুবই সাধারণ। যা আর পাঁচটা ছাপোষা ঘরে হয়েই থাকে। এক যুবক যিনি তাঁর অকালপক্কতা নিয়ে ক্রমাগত লড়াই করে চলেছেন। ছবিতে প্রত্যেকটা অভিনেতার অসাধারণ অভিনয়, সংলাপ ও নির্দেশন ২০১৯ সালে এই ছবিকে শ্রেষ্ঠ ছবি বানাবে।
গল্পের শুরু ২০০৩ সালের গরমকাল দিয়ে। যখন আমাদের বালমুকুন্দ স্কুলে পড়ত, তখন তাঁর মাথায় ছিল 'লেহরাতে কালে বাল’ (একঢাল কালো চুল)। সেই সময় বালা স্কুলের শাহরুখ খান ছিলেন এবং তাঁর অনুকরণ করার দক্ষতা সকলকে তাঁর দিকে আকৃষ্ট করত। বালা ওরফে আয়ুষ্মানের চুল নিয়ে খুব গর্ব ছিল এবং স্কুলে চুল নেই এমন শিক্ষকদের 'টাকলা’ বলে খেপাতেও দ্বিধাবোধ করত না কিশোর বালা। এমনকী গোটা স্কুলের সামনে গায়ের রং কালো পড়ুয়াদের নিয়ে মজাও করত সে। কিন্তু চুল নিয়ে যে বালা গর্ব করত ২০১৬ সালে ঠিক উল্টো দৃশ্য দেখা গেল। অকালপক্কতার শিকাল হলেন বালা। নিজের টাক দেখে তিনি বলতেন যে তাঁকে দেখার আগে মেয়েরা করভা চৌথের আগেই গোটা চাঁদ দেখে নিয়েছে, যা তাঁর আত্মবিশ্বাসকে চূর্ণ করত। ১৫ বছর বয়সে বালার গার্লফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে চলে যায়, কারণ প্রেমিকার নতুন বয়ফ্রেন্ডকে শুধু বালার মতো দেখতেই নয়, মাথাতে তার চেয়েও বেশি চুল রয়েছে। ফেয়ারনেস ক্রীম বেচে বালা তাঁর নিজের হতাশাকে কাটানোর চেষ্টা করে। বিয়ের জন্য বালা মাথায় চুল গজানোর বিভিন্ন উপায় প্রয়োগ করেও ব্যর্থ হন। তবে তাঁর এই লড়াইয়ে পাশে পেয়েছেন তাঁর গোটা পরিবারকে। বিভিন্ন উপায়ের পরও যখন মাথায় চুল গজালো না, তখন বালাকে তাঁর টেকো বাবা নকল চুল উপহার দিলেন। এরপরই শুরু হয় বালা–পরির লাভস্টোরি। একদিকে ফেয়ারনেস ক্রিম বিক্রেতা তো অন্যদিকে টিকটকে সেনশেসন পরি। এই ছবি আপনাকে প্রচুর টুইস্ট অ্যান্ড টার্নস দেখাবে আর আয়ুষ্মানের কমেডি আপনাকে হাসতে বাধ্য করবে।
আয়ুষ্মান কেন আর একটা জাতীয় পুরস্কারের যোগ্য, তা আরও একবার এই 'বালা’ সিনেমার মধ্য দিয়ে তিনি বলিউডকে প্রমাণ করে দিয়েছেন। ছবিতে তাঁর অভিনয় দেখলে কেউ বলবে না যে তিনি অতিরিক্ত কিছু করেছেন। আয়ুষ্মান জানেন কোথায় নুন–চিনি–মশলা দিতে হয় এবং তা কতটা পরিমাণে, যাতে খাবারের স্বাদ বজায় থাকে। সে বিষয়ে আয়ুষ্মানের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা আর কারই বা আছে। যেখানে আয়ুষ্মান গোটা স্টেডিয়ামকে বালমুকুন্দের মধ্য দিয়ে একের পর এক বলে ছক্কা মারছেন, সেখানে পরির ভূমিকায় ইয়ামিও যথেষ্ট পরিণত অভিনয় দেখিয়েছেন। ভূমি পেডনেকার ওরফে লতিকা একজন আইনজীবী যাঁর গায়ের রঙ কালো। তবে তিনি তাঁর গায়ের রঙ নিয়েই বেশ আত্মবিশ্বাসী। লতিকা একজন নারীবাদীও বটে এবং তিনি তাঁর জীবনের নীতির সঙ্গে কখনই আপোস করবেন না। ছবির প্রত্যেকটি চরিত্রই যেন তাঁদের নিজ নিজ ভূমিকায় যথাযথ ছিলেন। বিজয় রাজ যিনি গল্পকার, তাঁরও গল্প বলার কায়দা অসাধারণ।
তথাকথিত সমাজে সৌন্দর্য থেকে জেন্ডার স্টিরিওটাইপস, 'বালা’ লড়াই করেছে সমাজের প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন নিষিদ্ধ বিষয় নিয়ে এবং তা হাস্যরসের মধ্য দিয়ে। পরিচালক অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এইসব স্পর্শকাতর বিষয়গুলিকে নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন এবং কাউকে আঘাত না করে সমাজে সচেতনতা আনার চেষ্টা করেছেন। ছবিতে এমন অনেক মুহূর্ত রয়েছে যা সমাজের বাস্তবের সঙ্গে খাপ খায়। ছবিতে সকলের অভিনয় মুগ্ধ করলেও লতিকার চরিত্রে ভূমি কিছুটা ব্যর্থ। তিনি দর্শকদের একটু হতাশ করেছেন। তবে সেটাকে যদি এড়িয়েও যাওয়া যায়, তাও 'বালা’ দর্শকদের মন জয় করতে সফল হবে।