চেনা মুখের ভিড়ে ‘তাণ্ডব’–এ এলোমেলো ভারতীয় রাজনীতি
চেনা মুখের ভিড়ে ‘তাণ্ডব’–এ এলোমেলো ভারতীয় রাজনীতি
ভারত ও ভারতীয় রাজনীতির একটা দিনের ছবি। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর মৃত্যু হয় হৃদরোগে। তিনি তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রীর পদ পেতে চলেছিলেন, কিন্তু তার আগেই তাঁর মৃত্যু। দেশবাসীর নিজেদেরকে অনাথ ভাবতে শুরু করলেও দলের মধ্যে এটা খাঁটি নৈরাজ্য। এই নৈরাজ্যকেই ধীরে ধীরে বিশ্লেষণ করা হবে জোকারের প্রবেশ ও তার দৌরাত্মের মাধ্যমে। যা দর্শকরা আলি আব্বাস জাফরের রাজনৈতিক ছবি 'তাণ্ডব’ থেকে আশা করছেন। যা শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে।
অন্যান্য ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যেরকমটা দেখা যায়, তার চেয়ে অনেকটাই আলাদা তাণ্ডবের কাস্টিং। প্রত্যেক চরিত্রেই রয়েছেন চেনা মুখ, তা সে ছোট বা বড় যে চরিত্রই হোক না কেন। তবে একদিকে যেমন জনপ্রিয় মুখেদের আনাগোনা ছিল এই ছবিতে, তেমনি চিত্রনাট্যের অকাল মৃত্যু হয়েছে এখানে।
তাণ্ডবের গল্প
তিগমাংশু ধুলিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী, তিনি পর্দা থেকে সরে যাওয়ার পরই আসল ঘটনা শুরু হয়। সইফ আলি খান তথা সমীর প্রতাপ সিং প্রধানমন্ত্রী ছেলে, যিনি তাঁর বাবার চেয়ারের আসল উত্তরাধিকারি। হ্যাঁ রাজনীতিতেও স্বজন পোষণ বেশ ভালোভাবেই সকলের নজরে পড়ে, তা সেই পর্দায় হোক বা বাস্তবে। অন্যদিকে প্রধানমনত্রীর চেয়ার পাওয়ার জন্য বরিষ্ঠ দলের কার্যকর্তা অনুরাধা কিশোর ওরফে ডিম্পল কাপাডিয়াও দাবিদার হিসাবে আসেন। তবে শুধু চেয়ার পাওয়া নিয়েই এই গল্প এখানে শেষ হচ্ছে না। দেশের রাজনীতির মধ্যে ঢুকে পড়ে ছাত্ররাজনীতি, যেখানে এই রাজনীতিকে মোহরা বানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ পেতে চান সমীর প্রতৈপ সিং। শুরু হয় সবচেয়ে বড় দাবার খেলা।
তাণ্ডব সিনেমার বিভিন্ন ঘটনাক্রম এভাবেই বোনা হয়েছে। এর সঙ্গে দেশের চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। একদিকে সাইনিং ভারত, যে নেতা ও উদ্যোগপতিদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে, আর একদিকে রয়েছে ভারত, যেখানে কৃষক-মজদুর ও দেশের সাধারণ নাগরিক রয়েছেন। সিনেমার শুরু থেকে শেষ রাজনীতির দুই দিককে মেলানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
অভিনয়
সমস্ত কলাকুশলীদের মধ্যে অভিনয়ের দিক থেকে ডিম্পল কাপাডিয়ার চরিত্র অনুযায়ী তাঁর অভিনয় সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। তিনি নিজের চরিত্রকে যথাযথভাবে পর্দায় তুলে ধরেছেন। সইফ আলি খান প্রধান চরিত্রে, তাই তাঁকে ভালো অভিনয় করতেই হবে। ছবিতে নজর কেড়েছে সুনীল গ্রোভারের অভিনয়ও। অন্যান্য অভিনেতারা নিজেদের জায়গায় ঠিকই ছিলেন। দিনো মোরিয়াকে বহু যুগ বাদে পর্দায় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে।
পরিচালকের ব্যর্থতা
তাণ্ডবে, দেশের ক্ষমতার রাজনীতি এবং ছাত্র রাজনীতির গল্পগুলি রেলপথের মতো সমান্তরালভাবে চলেছে। উভয়ের ঘটনা একে অপরের থেকে পৃথক এবং বিভিন্ন সময়ে ঘটছে বলে মনে হয়। তবে দেখে মনে হচ্ছে যে পরিচালক তাদের জোর করার মেলানোর চেষ্টা করছেন। এটি একটি কাকতালীয় ঘটনা যে, দিল্লি সীমান্তে কিষাণ আন্দোলন ৫০ দিন ধরে চলছে এবং তান্ডবে কিষাণ আন্দোলন একটি বড় ইস্যুর মতো উপস্থিত হয়েছে, যা গল্পটি এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিছনে পড়ে যায়। তান্ডবে মুসলিম নাগরিকদের ডানপন্থী শাসনের অধীনে শক্তির সহজ শিকার হিসাবে দেখানো হয়েছে। ছাত্র রাজনীতির রঙগুলি এখানে তবে মূল রাজনীতির সামনে নিস্তেজ প্রমাণিত। তারা কলেজ, ছাত্রাবাস, থানার ত্রিভুজ থেকে বের হয় না। একজন ছাত্রনেতা হিসাবে, মহম্মদ জিশান আয়ুব ভাল শুরু করলেও তার চরিত্রটি মাঝপথে লাইনচ্যুত হয়। এতে অবশ্য দোষ পরিচালকের।
প্রথম সিজন সেভাবে দর্শকদের আকর্ষিত করবে না
তান্ডব প্রচারের সময় দাবি ছিল যে এই সিরিজটি ভারতের আমেরিকান রাজনৈতিক থ্রিলার হাউস অফ কার্ড হিসাবে প্রমাণিত হতে পারে, তবে দিল্লি যে অনেক দূরে, তা ধরে নিতে কোনও দ্বিধাবোধ থাকা উচিত নয়। এটি তাণ্ডবের প্রথম সিজন এবং গল্পের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। তবে তা দ্বিতীয় সেশনে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শোনা যাচ্ছে না মিউজিক, তাও ক্যাটরিনার শরীরী বিটেই ঝড় উঠল সোশ্যাল মিডিয়ায়