অসাধারণ নাচ দেখার পরও স্ট্রিট ডান্সার থ্রিডি দর্শকদের মনে জায়গা করতে ব্যর্থ
রিয়্যালিটি শো ইন্ডিয়া গট ট্যালেন্ট নিশ্চয়ই সকলেই দেখেছেন। সেই শোয়ের দীর্ঘ পর্বই হলো পরিচালক রেমো ডি’সুজার 'স্ট্রিট ডান্সার থ্রিডি’। অনেক দীর্ঘ পর্ব বলতে যা বোঝায় ছবিটি ঠিক সেটাই। তার ওপর বলা যেতে পারে কোনও বিজ্ঞাপন বিরতি ছাড়াই। তার ওপর অপ্রয়োজনীয়ভাবে এত নাচ দেখানো হয়েছে যে দর্শকের মনে হতেই পারে যে এটা সিনেমা না নাচের রিয়্যালিটি শো। তারওপর এটা থ্রিডি, যার অর্থ আপনাকে এটা অনবরত সহ্য করে যেতে হবে। এবিসিডি সিরিজের এই সিক্যুয়েলটাই হয়ত সবচেয়ে বাজে।
কাহিনি
স্ট্রিটডান্সার থ্রিডি ছবির গল্প মানেই মঞ্চে নাচের প্রতিযোগিতা। এই ছবিও তার ব্যতিক্রম হল না। গল্প শুরু হয়েছে লন্ডন শহর দিয়ে। দু’টি নাচের দল ভারত ও পাকিস্তান। যারা সবসময়ই নিজেদের মধ্যে লড়াই করে চলেছে। সাহেজের ভূমিকায় বরুণ ধাওয়ান, যিনি ভারতীয় নাচের দলের মাথা, শ্রদ্ধা কাপুর এই ছবিতে পাকিস্তানের নাচের দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, নাম ইনায়ত। প্রভু দেবার রেস্তোরাঁতে এই দুই দলই প্রায়ই আসে। এখানে ভারত–পাকিস্তান ক্রিকেট নিয়ে তরজাও যেমন চলে তেমনি দুই দলের মধ্যে চলে নাচের চ্যালেঞ্জও। এই গল্পের পাশে আরও একটি বিষয়কে দেখানো হয়, যা হল অঐধ অভিবাসীদের সমস্যা। যাঁরা লন্ডনে তাঁদের বড় স্বপ্নকে নিয়ে আসেন কিন্তু টানেলের মধ্যে নিজেদের লুকিয়ে, ক্ষুধার্ত ও আশ্রয়হীন হয়ে তাঁদের স্বপ্নকে মরে যেতে হয়। ইনায়ত তেমনই বেশ কিছুজনকে সাহায্য করেন এবং সাহেজ নিজের ভুল বুঝতে পারেন। এরপর দুই দলই নাচের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
ছবিতে নাচের দৃশ্য সত্যিই দুর্দান্ত। রঙীন, উদ্দীপনায় ভরপুর এবং দারুণ প্রতিভার যুগলবন্দী দেখা গিয়েছে প্রত্যেকটি নাচে, যা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। কিন্তু নাচগুলির মধ্যে কোনও সেরকম অদল–বদল নেই। প্রভু দেবাকে তাঁর নিজস্ব আইটেম নম্বর মুকাবলা গানে নাচতে দেখা যাবে, যা সত্যিই দর্শকদের জন্য বাড়তি পাওনা ছিল। এরপরই হঠাৎ পরিচালক রেমো ভারত–পাকিস্তানকে এক করে দিয়ে ব্রিটিশ নাচের দলকে ভিলেন বানিয়ে দেয় এবং ভারত–পাক এক হয়ে 'মিলে সুর মেরা তুমহারা’ গানে নাচতে শুরু করে।
অভিনয়
অভিনয়ের ক্ষেত্রে নজর কাড়লেন বরুণ ধাওয়ান ও শ্রদ্ধা কাপুর। এই জুটিকে এর আগেও একই সঙ্গে পেয়েছে দর্শকেরা। ফলে পর্দায় তাঁদের রসায়ন নিয়ে কোনও খামতি রইল না। নোরার ভূমিকা ছবিতে তেমন না থাকলেও, মঞ্চ জুড়ে উষ্ণতা ছড়ালেন তিনি। তেমনই সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছিল নাচের অংশগুলো। অন্যান্যরাও তাঁদের চরিত্রে যথাযথই ছিলেন।
চিত্রনাট্য
ছবির চিত্রনাট্যে একাধিক খামতি থেকে গেল। গল্প দানা বাঁধল না। ফলে কোথাও গিয়ে ছবি জমল না। ভারত–পাকিস্তান মানেই যে প্রতিযোগিতা, সেই ছকে বাঁধা গেল না ছবিকে। প্রথম থেকেই দর্শক মনোসংযোগ হারায়। গল্প দানা বাঁধার আগেই যেন শেষ হয়ে যাচ্ছিল ছবির অংশগুলো। গল্পের উপস্থাপনাতেও রইল একাধিক খামতি। সিনেম্যাটোগ্রাফির ক্ষেত্রে দর্শকদের মনে আশ মিটল। যদিও প্রতিটি দৃশ্যে একাধিক প্রপ ব্যবহার করার ফলে থ্রিডি বড্ড বেশি চোখে লাগে। পাশাপাশি ছবির গানের দৃশ্য থেকে শুরু করে আউটডোর শ্যুটিং সবেতেই এক ঝাঁচকচক বিষয় লক্ষ্য করা যায়। তবে অতিরিক্ত মশলায় ভারসাম্য হারাল ছবি।
পরিচালনা
পরিচালনার ক্ষেত্রে ছবিটিতে বেশ কয়েকটি জায়গায় খামতি থেকে গেল। ছবির পরতে পরতে লক্ষ্য করা গেল কেবল নাচকেই হাতিয়ার করার প্রয়াস। কিন্তু কোথাও গিয়ে সেই কৌশল কাজে লাগল না। ছবির প্রথমার্ধে খানিকটা বুঝতে অসুবিধা হলেও, ছবির শেষ অংশে হতাশ হতে হল দর্শকদের। থাকল না আশানুরূপ ধার।