'শিবায়' রিভিউ : এত মাতামাতি সার, বড় হতাশ করলেন অজয়!
অভিনয় : অজয় দেবগণ, এরিকা কার, অ্যাবিগেল এমস, সায়েষা সহগল, বীর দাস, গিরিশ কার্নাড।
পরিচালক : অজয় দেবগণ
প্রযোজক : অজয় দেবগণ
প্রায় একবছর ধরে এই ছবি নিয়ে মাতামাতিক শেষ নেই। অভিনয় ও প্রযোজনার পাশাপাশি দীর্ঘ বিরতির পর এই ছবির পরিচালনাতেও হাত দিয়েছেন অজয়, একটু তো হাইপ হবেই। কিন্তু অজয় বড়ই হতাশ করলেন। পর্পকর্ন, ঠাণ্ডা পানীয় সহযোগেও ঠিক জমল না অজয় দেবগণের 'শিবায়'।
অজয় যেখানে সর্বেসর্বা সেখানে অ্যাকশন নিয়ে কোনোও কম্প্রোমাইজ হবে না তা নিয়ে নিশ্চিত থাকা যেতে পারে। সেই ভরসার জায়গাটা অবশ্য ভাঙেননি তিনি। এই ছবির সম্পদ হল এর হৃদয় থমকে দেওয়া অ্যাকশন দৃশ্যগুলি। সিনেমাটোগ্রাফির প্রশংসা না করাটাও অন্যায় হবে।

এইটুকু ভালর পাশে এত খারাপ লাগা রয়েছে যে নিটফল খারাপই। এরিকা করের সঙ্গে অজয়ের রসায়ন এতটাই নিষ্প্রভ যে হতাশা-বিরক্তি সব একসঙ্গ আঁকড়ে ধরছিল মন ও মাথাকে। এ ছবি না মন দিয়ে দেখার না মাথা দিয়ে বোঝার।
তার উপর স্টোরি টেলিংটাও ততোধিক টলমলে। মাঝারি মানের সংলাপ ছবির পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। আর এই ছবির গতি বা পেস কফিনে শেষ পেরেখটাও পুঁতে দিয়েছে।
কাহিনীর পটভূমি
ছবির শুরুতেই দেখা যাবে প্রচণ্ড আহত শিবায় (অজয় দেবগণ) নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্যও সংগ্রাম করতে করতে মাটিতে পড়ে গেলেন। ব্যস এখান থেকে সোজা ফ্ল্যাশব্যাক। ৯ বছর আগেকার শিবায়ের জগতে ঢুকে পড়লাম আমরা।
এখানে দর্শকের সঙ্গে পরিচয় হবে সাহসী পর্বতারোহী শিবায়ের সঙ্গে। ছিলামে সুখটান দিতে দিতে বরফে মোড়া পাহাড় থেকে এমনভাবে ট্রেক করতে করতে নামছেন অজয় যেন এটা জলভাত।
এরপর শিবায়ের সঙ্গে দেখা হয় বুলগেরিয়ান পর্যটক ওলগা (এরিকা কার) সঙ্গে তারপর ট্রেকিংয়ের সময়ে তুষার ধস থেকে শিবায় ওলগাকে বাঁচায়। ব্যস দুজনের প্রেম হয়ে যায়। এরপরেই সংক্ষেপে দেখানো হয়, তারা খুব অল্প সময়েই বুঝতে পারে তাদের দুজনের জীবনের প্রাধান্যগুলি একে অপরের থেকে অনেকটাই আলাদা।
একথা বুঝতে বুঝতে গর্ভবতী হয়ে যান ওলগা। ওলগা এই সন্তান চাইছিলেন না, কিন্তু শিবায় তাঁকে কোনও মতে তাদের সন্তানকে পৃথিবীতে আনার জন্য রাজি করে। শিবায় ওলগাকে কথা দেয়, সন্তানের দেখভাল সে করবে, ওলগা স্বাধীনভাবে নিজের জীবনযাপন করতে পারে।
প্রতিশ্রুতি মতো ওলগা কোলের বাচ্চাকে শিবায়ের কাছে ছেড়ে বুলগেরিয়া ফিরে যায়। দেখতে দেখতে ৯ বছর কেটে যায়। তাদের মেয়ের নাম গওরা (অ্যাবিগেল এমস)। সে মূক হয়ে জন্মেছে ধীরে ধীরে শিবায় বুঝতে পারে।
একদিন গওরা জানতে পারে তার মা বেঁচে আছে, বাবা এতদিন তাকে যে বলে এসেছে তার মা মারা গিয়েছে সেটা আসলে মিথ্যা। অনেক চেষ্টার পর সে বাবাকে রাজি করায় যাতে একবার তার সঙ্গে মায়ের দেখা করিয়ে দেয় শিবায়। বুলগেরিয়া পৌঁছয় তারা। কিন্তু সেখানে তাদের জন্য যে বিপদ অপেক্ষা করে রয়ছে সে বিষয়ে অবগত ছিল না তারা। এরপর কী হয় তা দেখতে হলে আপনাকে থিয়েটারে যেতে হবে।
পরিচালনা : ইউ, মি অউর হাম ছবির পর একটা লম্বা বিরতির পর ফের পরিচালনার কাজে হাত দিয়েছেন অজয়। শিবায় তাঁর ড্রিম প্রোজেক্ট বলেও বারবার জানিয়েছেন তিনি। অজয়ের স্বপ্নের প্রকল্প হওয়া সত্ত্বেও এছবিতে যত্নের অভাব প্রতি মুহূর্তে খোঁচা দিয়েছে। পুরোটাই এলোমেলো মনে হয়েছে। টাকা ঢাললেও আবেগ ঢালতে পারেননি অজয়। সবচেয়ে বড় হতাশার জায়গাটা তৈরি হয়েছে এখানেই।
তবে, দৃশ্যসুখে কোনওরকম আপোশ করেননি ছবির কলাকুশলীরা। এক একটা শুটিং স্পট বেশ রিসার্চ করে বাছা হয়েছে। ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলেও অনেক পরিণত হয়েছেন পরিচালক। তবুও পরিচালক হিসাবে এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি অজয়ের।
অভিনয়
অভিনয়ের দিক থেকে চরিত্র অনুযায়ী ভাল অভিনয় করেছেন অজয়। তবে কিছু কিছু দৃশ্যে নিজের আবেগটা যেন প্রকাশ করতে পারেননি অজয়। অ্যাকশন দৃশ্যে অজয়ের ভুল ধরা অসম্ভব হলেও রোমান্স দৃশ্যে প্রশংসা করার কোনও জায়গাই নেই। এরিকার সঙ্গে অজয়ের কেমিষ্ট্রি বড়ই নিষ্প্রভ লেগেছে। তবে এরিকার অভিনয় মোটের উপর খারাপ না।
অ্যাবিগেল নজর কেড়েছেন নিজের অভিনয় দিয়ে, তবে আবেগের মুহূর্তগুলিতে দর্শকের মন টানতে পারেননি। হয়তো তাঁর অভিনয়টা অনেকবেশি টেকনিক্যাল বলেই। সায়েশা সহগল ঠিকঠাক অভিনয় করেছেন। তবে যাকে নিয়ে আলাদা করে না বললেই নয়, তিনি হলেন বীর দাস। কেন যে বীর দাসকে নেওয়া হল একথা এখনও আমার মাথায় ঢুকছে না।
মতামত
শেষমেষ বিষয়টা হল আপনি যদি অ্যাকশন দৃশ্যের ফ্যান হন তাহলে এছবি আপনার মনোরঞ্জন করবে। আর নয়তো দীপাবলীতে অন্য কোনও প্ল্যান যদি বানিয়ে উঠতে না পারেন এবং হাতে পয়সা থাকে তাহলে এবার থিয়েটারে ঢুঁ মারতে পারেন এই আর কি।