কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঘর ছাড়ার গল্প ‘শিকারা’য় ফুটিয়ে তুললেন নতুন জুটি
কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঘর ছাড়ার গল্প ‘শিকারা’য় ফুটিয়ে তুললেন নতুন জুটি
বহুদিন বাদে ছবির পর্দায় ফিরলেন বিধু বিনোদ চোপড়া। তাও আবার এমন একটি বিষয়ের ওপর ছবি তৈরি করে যা ইতিমধ্যেই বেশ বিতর্কিত। ঘর ছাড়া কাশ্মীরি পন্ডিতদের জীবনের প্রেক্ষাপটেই পরিচালক তৈরি করেছেন 'শিকারা’। কাশ্মীর আগে যেমন ছিল তারই প্রেমের চিঠি বলা যায় এই ছবিকে। বিধু বিনোদ চোপড়ার ছবি মানেই তা সুন্দরভাবে দেখানো হবে এটা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই আর তিনি সর্বদাই সত্যি গল্প বলার চেষ্টা করেন। 'শিকারা’ ছবিতে পরিচালক কাশ্মীরে ফিরে গিয়েছেন এবং কাশ্মীরে জঙ্গিবাদ বৃদ্ধির কারণে হাজার হাজার শরণার্থীর দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। এখানে কোনও অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগের খেলা নেই। এই ছবিটি মূলতঃ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঘরছাড়ার গল্প, যঁদের জীবন চিরকালের জন্য হতাশায় ভরে যায়। এই বড় সমস্যাকে কেন্দ্র করেই ছবিতে দেখানো হয়েছে এক বিবাহিত দম্পতির পুরনো–পন্থী রোম্যান্সকে, যা বছরের পর বছর কষ্টের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকে এবং বয়সের সঙ্গে ভঙ্গুর হয় না।
‘শিকারা’র কাহিনী
উপত্যকায় এ ছবির শুটিংয়ের জন্য শিব (আদিল খান) এবং শান্তি (সাদিয়া)-কে একসঙ্গে নিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ দিতে হয় পরিচালককে। পরিচালক এই ছবির জন্য সত্যিকারের কাশ্মীরি দম্পতিকে চেয়েছিলেন। এই ছবির জন্য তাঁরা যেন স্বেচ্ছাসেবক হয়েই এগিয়ে এসেছিলেন, পরিচালকের সঙ্গে কথা বলা এবং বার বার রিটেকে তাঁরা বিরক্ত হয়েছিলেন ঠিকই। ছবিতে আদিল তথা শিব একজন কবি ও তাঁর স্ত্রী সাদিয়া অর্থাৎ শান্তি স্থানীয় এক হাসপাতালের নার্স। তাঁরা শীঘ্রই বিয়ে করেন এবং নিজেদের জন্য ছোট্ট একটা বাড়ি তৈরি করেন। সবকিছুই সুন্দরভাবে চলছিল কিন্তু হঠাৎই কাশ্মীরের আকাশে সন্ত্রাসবাদীর কালো মেঘ ঘনায়। ধীরে ধীরে কাশ্মীরের গোটা চিত্রটা বদলে যায় এবং তাঁদের জোর করে জম্মু ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং শরণার্থী শিবিরে আগামী ৩০ বছর তাঁরা থাকেন। দম্পতির চোখে স্বপ্ন একটাই তাঁরা আবার একদিন তাঁদের পুরনো বাড়িতে ফিরে যাবেন।
পরিচালকের চোখে কাশ্মীর
বিধু বিনোদ চোপড়ার যেহেতু এটি কামব্যাক ছবি, তাই তিনি তাঁর একশো শতাংশ এই ছবির মধ্যে ঢেলেছেন। পরিচালক ছবিতে কাশ্মীরি দম্পতির প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সেই সময়কার কাশ্মীরের ভয়াবহতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। দম্পতির চারপাশে কি ঘটছে, তাঁরা কতটা হতাশ ও আতঙ্কিত, দম্পতির মধ্যে একসময় অবসাদ-আতঙ্ক একসঙ্গে প্রভাব ফেলে, কিন্তু পরে আবার তাঁরা বাস্তবকে মেনে নেন। ছবির একটা দৃশ্যে অপূর্বভাবে দেখানো হয়েছে উদ্বাস্তুরা কীভাবে তাদের জীবনযাত্রা ভুলে যাচ্ছেন। শিব এবং শান্তি একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে যান, যা একবছর আগে তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণ বিপরীত। গারিশের পোশাক, লাউডস্পিকারের গানের আওয়াজ এবং অতিরিক্ত আলো তাদের কাছে আসে। অন্য এক দৃশ্যে আবার দেখানো হয়েছে শিব-শান্তির এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মৃত্যু, যে জঙ্গি হয়ে গিয়েছিল। তাঁদের শোকে কোনও ক্রোধ ছিল না, বরং এক নিরীহকে হারানোর বেদনা ছিল তাঁদের চোখে। পরিচালক একদিকে যেমন ডাল লেকে ভাসমান শিকারার সৌন্দয্যকে তুলে ধরেছেন ঠিক অন্যদিকে কাশ্মীরের জ্বলন্ত ছবিও দেখিয়েছেন।
তবে ছবিতে কাশ্মীরের উদ্বাস্তুদের আসল সমস্যার চেয়ে পরিচালক দম্পতির দিকে মনোনিবেশ করেছেন বেশি। যদিও ছবিতে দেখানো হয়েছে কাশ্মীরিদের গণ বিতাড়িত, প্রচুর সংখ্যক মানুষ দল বেঁধে কাশ্মীর ছাড়ছেন। ছবির দ্বিতীয় অংশে আশ্রয়হীন মানুষের সংগ্রাম দেখানোর আশা দর্শককা করলেও এখানে তাঁদের নিরাশ হতে হবে। প্রধান চরিত্র শিব আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছানোর জন্য ঘনঘন চিঠি লেখার তাঁর এই আবেগকেও বোঝাতে পারেননি পরিচালক।
অভিনয়
এটা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ রাখা যাবে না কারণ আদিল ও সাদিয়া বলিউডে একদম আনকোরা হলেও তাঁরা তাঁদের চোখ দিয়ে দর্শককে ৯০ সালের কাশ্মীরের দৃশ্যকে তুলে ধরতে সফল হয়েছেন। নিজেদের স্বপ্নের আশ্রয়স্থান ছেড়ে উদ্বাস্তুদের মতো শরণার্থী শিবিরে থাকার যন্ত্রণাকে যথাযথ ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁরা। হয়ত আদিল ও সাদিয়া কাশ্মীরি বলেই এই বিষয়টি তাঁরা জানেন এবং সেভাবেই নিজেদেরকে তৈরি করেছেন।
ছবির অন্য অংশ
ছবির সিনোমাটোগ্রাফি অসাধারণ। তার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয় রঙ্গরাজন রামাবদ্রানকে। তাঁর চোখে কাশ্মীর রূপ যেন আরও বেড়ে গিয়েছে। এছাড়াও গান, ও ছবির অন্যান্য বিষয়গুলিও যথাযথ। সমালোকদের মতে এই ছবি দর্শকদের ভালো লাগবে।