পিকু ফিল্ম রিভিউ : পেটের ভিতর দিয়ে গিয়ে মন ছুঁয়ে যাবে এছবি
কথায় আছে সারল্যের মধ্যেই রয়েছে চূড়ান্ত আভিজাত্য। আর পিকু ছবি এই বাক্যেরই অনুমোদন। বলিউড মানেই আর রংচঙে জামাকাপড় পড়ে নাচ, অন্ধ্র প্রেমের কাল্পনিক গল্পগাথা, বা অযথা সেক্স যে নয়, তা বেশ কয়েকবছর ধরেই প্রমাণ করেছেন নামি অনামি চিত্র পরিচালকরা। বলিউড ছবির এন্টারটেনমেন্টের পরিমাপ যে ছোট ছোট অযৌক্তিক অথচ অযথা না হওয়া মুহূর্তও হতে পারে তা পিকু বুঝিয়ে দিয়েছে।
পিকুর অভিনেতা - দীপিকা পাডুকোন, অমিতাভ বচ্চন, ইরফান খান
পরিচালক - সুজিত সরকার
পিকু হল এক সাধারণ বাঙালি মেয়ের গল্প। পিকু বন্দ্যোপাধ্যায় (দীপিকা পাডুকোন) এবং তাঁর বাবা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (অমিতাভ বচ্চন)-এর সম্পর্ক নিয়ে তৈরি এই ছবি। ভাস্করবাবু যিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন।
এদিকে একটি ক্যাব সংস্থার মালিক রানা চৌধুরির (ইরফান খান) সঙ্গে মিষ্টি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পরে পিকু। তবে পিকু আর রানার প্রেমকাহিনী নির্ভর করছে ভাস্কর বাড়ুজ্জের উপর। কারণ রানার যদি পিকুকে বিয়ে করতে হয় তাহলে তাঁর অসুস্থ বাবা ভাস্করকে রীতিমতো 'দত্তক' নিতে হবে রানার। এটা পিকুর শর্ত।
আসল গল্প শুরু হয় যখন পরিচারককে সঙ্গে নিয়ে এই চরিত্র দিল্লি থেকে কলকাতার রোড ট্রিপে বেড়িয়ে পরে। বাবা-মেয়ের ঢাল মিষ্টি সম্পর্কই এই ছবির বুনিয়াদ।
কিন্তু শেষপর্যন্ত পিকুকে কী বিয়ে করতে পারবে রানা? নিজের শর্তে জীবনযাপন করতে পারবে পিকু? কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আদৌ কী মুক্তি পাবেন ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়? তা জানতে হলে কিন্তু সিনেমা হলে আপনাকে যেতেই হবে। যদি নাও যেতে চান তবে আমাদের অনুরোধে একবার দেখে আসুন। নিরাশ হবেন না।[বিগ বি-কে চুমু খেয়ে সবাইকে চমকে দিলেন ইরফান খান!]
বলিউডের ৩ জন প্রতিভাবান শিল্পীকে এই ছবির জন্য বেছে নিয়েছেন পরিচালক সুজিত সরকার। কেউই পরিচালককে নিরাশ করেননি। দীপিকা অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত অভিনেত্রী। শুধু রূপ নয়, অভিনয়টাও তিনি খুব ভাল ক্যারি করতে পারেন। অপেক্ষাকৃত কম গ্ল্যামারাইজ লুকেও দীপিকা ক্যারিশ্ম্যাটিক। কখনও ঠিক যেন পাশের বাড়ির মেয়ে, কখনও আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ, কখনও দায়িত্ববান মেয়ে, কখনও বিন্দাস, বিভিন্ন মুড নিজের অভিনয় দিয়ে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন দীপিকা।
অমিতাভ বচ্চনের সমালোচনা করার দুঃসাহস আমাদের নেই। বিগ বি একেবারে জলের মতো। যে পাত্রে রাখবে সেই পাত্রের আকার ধারণ করবে। এই ছবিতে কোথাও অমিতাভ বচ্চনকে দেখা যায়নি। ছবি জুড়ে শুধু ছিলেন ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় জর্জরিত বিরক্তিকর এক বৃদ্ধের ভূমিকায় অন্য কাউকে হয়তো সত্যিই কল্পনা করতে পারাটা অসম্ভব ছিল পরিচালকের পক্ষে। [খেয়ে খেয়ে নাদা ভুঁড়ি বাগালেন বিগ বি!]
সবার শেষ ইরফান খান। বলিউডের আর একটি হীরা। যখন প্রথম শুনেছিলাম দীপিকা পাডুকোনের বিপরীতে প্রেমিকের ভূমিকায় থাকবেন ইরফান খান, বিষয়টা একদম হজম করতে পারিনি বিশ্বাস করুন (তবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়নি।)। কিন্তু এই ছবিটা দেখার পর সেই চিন্তাধারাটা বদলেছে। সত্যিই দীপিকার বিপরীতে প্রেমিকের ভূমিকাতেও কী সাবলীল ইরফান খান।
সত্যি কথা বলতে কী পৃথিবীতে কোনও কিছুই নিখুঁত নয়। কথাতেই আছে। পিকু-ও তার অন্যথা নয়। তবে যে জিনিসের খুঁত কম ভাল দিক বেশি তাই সুন্দর ঠিক যেন পিকু। সবচেয়ে বড় কথা এছবি আমার আপনার ছবি। আমাদের জীবন থেকেই যেন উঠে এসেছে। বলিউড তো শুধু একটা তকমা মাত্র। আর তাই তো এছবি আপনার পেটের ভিতর দিয়ে ঢুকে হৃদয় ছোঁবে অবধারিত ভাবে।