Movie Review (নীরজা) : সাবলীল অভিনয়ে অশ্রুজলেই স্মৃতিচারণ!
অপেক্ষার অবসান হল। মুক্তি পেল বহু চর্চিত ছবি নীরজা। হাইজ্যাক হওয়া প্যান অ্যাম ফ্লাইট-৭৩ এর ৩৮০ জন যাত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ২৩ বছরের বিমানসেবিকা নীরজা ভানোট। সেই প্রেক্ষাপটেই তৈরি হয়েছে রাম মধানীর ছবি নীরজা।
২৩ বছরের নীরজা ভানোট মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই ২৪-শে পা দেওয়ার কথা ছিল যাঁর। ২৪শে পা রাখার সময়টুকুও পেলেন না নীরজা।
যাঁদের মনে নেই ১৯৮৬ সালে কীভাবে প্যান অ্যাম ফ্লাইট-৭৩কে হাইজ্যাক করা হয়েছিল, তারা বিস্তারিত বিবরণ পাবলিক ডোমেনে পেয়ে যাবেন। কিন্তু নীরজার সাহসিকতার কাহিনী কেন বলিউডের পর্দায় আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা গেল তা প্রশ্নাতীত। এই ছবি আবশ্যিক আজকের যুব সমাজের জন্য।
এই হিংসা, উগ্র জাতীয়তাবাদের যুগে, মনুষ্যত্বের স্পিরিটে সাজানো আবেগ এই ছবিকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
নীরজা শুধুমাত্র কোনও মহিলা নয় যাকে কেন্দ্রে রেখে এই ঘটনা আবৃত হয়ে রয়েছে। নীরজা একজন এমন বিমানসেবিকা যিনি বিপদের মুখে কোন যাত্রীর নাগরিকত্ব নিয়ে ভেদাভেদ করেননি। ভারতীয়, আমেরিকাবাসী, পাকিস্তানী, ব্রিটিশ সবাইকে সমানভাবে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। একবারও ভাবেননি তার জন্য কী দাম দিতে হবে তাঁকে।
এই ছবিকে সফলভাবে পর্দায় নিয়ে আসার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য ছবির পরিচালক রাম মধানির। নীরজাকে নিয়ে সঠিক আবেগটাকে তিনি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।
মা (সাবানা আজনি) এবং বাবা (যোগেন্দ্র টিকু)-কে ঘিরে। রাজেশ খান্নার বিশাল ভক্ত সে। কাকা-র সংলাংপ বেদ বাক্যের মতো মানতেন নীরজা, "জিন্দেগী বড়ি হোনি চাহিয়ে, লম্বি নেহি বাবুমশাই..."।
কয়েক মাসে নতুন চাকরি নিয়ে কতটা চাপ ও কঠিন সময়ের মধ্যে নীরজা সময় কাটিয়েছিলেন তা বলার নয়।
ছবিতে শুরুর দিকে একটি দৃশ্যে উড়ান নিয়ে নীরজার শেষ ঘোষণা তুলে ধরা হয়েছে স্বয়ং তাঁর কন্ঠস্বরেই। বিমানে কিভাবে জঙ্গিদের উগ্র নজরের সামনেও নিজেকে স্থির রাখলেন নীরজা, মনের শক্তিতে ভাঙতে না গিয়ে কীভাবে ২৩ বছরের মেয়েটি ১৬ ঘন্টা দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গেল তা জানতে গেলে তার বড় হয়ে ওঠার ঘটনা তার পারিপার্শ্বিক চরিত্র ও পরিবেশ জানাটা অত্যন্ত জরুরী।
নীরজা এমন এক ভারতীয় পরিবারে বড় হয়েছে যা বাকি পাঁচটা মধ্যবিত্ত ভারতীয় পরিবারের থেকে কোনও অংশ ভীষণভাবে আলাদা কিছু নয়। যারা মনে করে শিশুপুত্রের চেয়ে শিশু কন্যাকে অনেক বেশি আগলে রাখতে হয়।
এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র নীরজা এমন এক ব্যক্তি যে নিজের মনের কথা শোনেন, কাপুরুষ মেরুদণ্ডহীন লোভী স্বামীকে ছেড়ে চলে এসে স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্য দ্বিতীয়বাবর ভাবেননি যে।
মেয়ের চাকরি নিয়ে চিন্তায় থাকতেন মা। সবসময় বলতেন, মডেলিংটাতো ভালই ছিল, বিমানসেবিকার চাকরিটাতো ছেড়ে দিলেই পারিস, কিন্তু মেয়ের একটাই জবাব, "আই লাভ মাই জব (আমি আমার কাজকে ভালবাসি)"। ব্যস মা আর কিছুই বলতে পারতেন না।
আজকাল বলিউডে প্রচুর বায়োপিক হচ্ছে। কিন্তু বহুক্ষেত্রে দেখা যায়, বলিউডের মশলা আনতে গিয়ে এই সব ছবিতে গল্পের অনেক কারসাজি করা হয়, যার ফলে কোথাও আসল গল্পের স্পিরিটটাই হারিয়ে যায়।
তবে মাধানি এমন কিছুই করেননি। শুধু মাত্র বন্ধ জায়গায় ক্যামেরারা অসাধারণ অ্যাঙ্গেল এবং এডিটের কাঁচি এত সূক্ষ্ম ছিল যে তা কোথাও অতিনাটকীয়তাও আনেনি আবার কোথাও অফবিট ছবি বানানোর তাগিদও মনে হয়নি।
ছবির মুখ্য তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোনম কাপুর, সাবানা আজমি এবং যোগেন্দ্র টিকু। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ভূমিকায় সেরা।
সোনম এই ছবির সম্পদ একইসঙ্গে চমকও বটে। নিজের কমফর্ট জোন থেকে বের করে আনা হলেও অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোথাও স্বাচ্ছন্দ হারাননি সোনম। শক্ত শিরার এক প্রাণবন্ত তরুণী চরিত্র হিসাবে হয়তো সোনমের চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য কেউ হয়ে উঠতে পারত না।
সাবানা আজমির অভিজ্ঞতা অনেক, অভিনয়েরও জীবনেরও। আর তাই ছোট ছোট আবেগকে এত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল তিনি। অন্যদিকে যোগেন্দ্র টিকু একজন কমপ্লিট আর্টিস্ট যে তা তিনি এই ছবিতে অভিনয় দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন।
সবশেষ এটুকুই বলতে পারি, নীরজা আবেগঘন, অণুপ্রাণিত করা একটি ছবি। হয়তো নিখুঁত নয়, তবু খুঁত চোখে আসবে না, চোখে লেগে থাকবে শুধুই আবেগ, সম্মান। দু চোখ ভরা জলেই হবে নীরজার স্মৃতিচারন।