ছোট শহরের মেয়ের চরিত্রে কঙ্গনাই সেরা, ফের প্রমাণ করলেন ‘পাঙ্গা’তে
যতই তাঁকে নিয়ে বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে উঠুক না কেন, তাঁর অভিনয় সকলের মুখ বন্ধ করেই দেয়। তিনি হলেন কঙ্গনা রানাওয়াত। তাঁর প্রত্যেকটি ছবিতেই পুরুষ অভিনেতাকে ছাপিয়ে তাঁর চরিত্রকে স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়। ব্যতিক্রম নয় কঙ্গনা রানাওয়াতের 'পাঙ্গা' ছবিটিও। এখানেও কঙ্গনাকেই মুখ্য হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। ছবির গল্প খুবই সাধারণ, এক মা তাঁর স্বপ্ন পূরণের গল্প।
মা হওয়ার পরও খেলার জগতের তারকাদের মধ্যে অনেকেই আবার স্বমহিমায় ফিরে এসেছেন। যেমন সেরেনা উইলিয়ামস কিংবা সানিয়া মির্জা অথবা মেরি কম। মাতৃত্ব এঁদের আরও বেশি করে খেলার জগতে ফিরে আসার তাগিদ জুগিয়েছে। মাতৃত্ব এঁদের 'প্রাক্তন' হয়ে যেতে দেয়নি। এই সব মায়েদের এটাই কৃতিত্ব, তাঁরা সমস্ত রকম মানসিক চাপ কাটিয়ে উঠে ঠিক যেখানে তাঁরা অবস্থান করছিলেন, সেখানে ফিরে এসেছেন। 'পাঙ্গা'য় কঙ্গনা তেমনই একজন, যিনি ফিরে আসতে চান তাঁর নিজস্ব জগত কবাডিতে।

ছবির গল্প
জয়া নিগম। প্রাক্তন ভারতীয় কবাডির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। যিনি তাঁর আশাপ্রদ ভবিষ্যত ছেড়ে দেন সন্তান মানুষ করার জন্য। রেলে সামন্য চাকুরিজীবি জয়া। একদিন এক দারুণ সকালে জয়ার সাত বছরের ছেলে আদির (যজ্ঞ ভাসিন) কারণে তিনি তাঁর দিবাস্বপ্ন থেকে বেড়িয়ে আসেন। আদি তার মাকে প্রশ্ন করে যে কেন তার মা অন্য মায়েদের মতো তার স্কুলে রেস দেখতে যায়নি? ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা ছাড়া আর তো গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজ করে না মা। ছোট্ট আদি তার বাবাকেও বোঝায় যে মায়ের সামনে এক দারুণ লক্ষ্য রয়েছে। আদি তার মাকে আবার কবাডি জগতে ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে। তারপরই জয়ার আসল সফর শুরু, ৩২ বছর বয়সে ফের তাঁর প্রথম ভালোবাসা কবাডিতে ফিরে যাওয়ার। ছবিটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে যখন জয়ার মুষ্টিবদ্ধ হাত উপরদিকে ওঠে: দুরন্ত ‘পাঙ্গা' নিলেন কঙ্গনা।

সমাজের প্রতি বার্তা
‘পাঙ্গা'র গল্পের সঙ্গে অনেক ভারতীয় মহিলারাই তাঁদের জীবনের সঙ্গে মিল পাবেন। যাঁরা তাঁদের সংসার ও সন্তানের জন্য নিজের স্বপ্নকে ত্যাগ করেছেন এবং কখনই হয়ত সেই সুযোগও তাঁরা পাননি। তবে হয়ত জয়া তাঁদের মধ্যে একজন, যাঁরা তাঁদের পরিবারের সমর্থন পেয়ে নিজেদের অপূর্ণ স্বপ্নকে পূরণ করতে পেরেছেন আবার।

অভিনয়
জয়ার ভূমিকায় কঙ্গনা রানাওয়াত অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য, কারণ এই চরিত্রটিকে পর্দায় যেভাবে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন, তা কঙ্গনা ছাড়া আর কেউ পারতেন না। তাঁর প্রজন্মের অভিনেত্রীদের মধ্যে কঙ্গনার মতো কেউই ছোট শহরের মহিলার চরিত্র এত যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন না। ছবির শেষেও জয়ার চরিত্রে কঙ্গনার অভিনয় একেবারে যথাযথ ছিল। বিশেষ করে যখন জয়া তাঁর মা (নীনা গুপ্তা)-এর সঙ্গে লাড্ডুতে গুড়ের বদলে চিনি দেওয়া নিয়ে যখন ঝগড়া করছেন, তখন তা আমার বা দর্শকদের মায়েদের সঙ্গে ঝগড়ার কথাই মনে করিয়ে দেবে।
কঙ্গনার পরই রিচা চাড্ডা, যিনি এই ছবিতে জয়ার বন্ধু এবং কবাডি কোচ মিনুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তিনি তাঁর আলাদা ভঙ্গীতে দর্শকদের হাসিয়েছেন। অন্যদিকে কঙ্গনার স্বামীর চরিত্রে জসি গিলও যথাযথ ছিলেন। আর নীনা গুপ্তার অভিনয় নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই, তিনি সবসময়ই অসাধারণ। তবে দক্ষ অভিনেতাদের পাশাপাশি যজ্ঞ ভাসিনের নাম উল্লেখ করতেই হয়, যে কঙ্গনার সাত বছরের ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।

পরিচালক হিসাবে অশ্বিনী
অশ্বিনী তিওয়ারি সবসময়ই ছোট শহরের গল্পকেই দর্শকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তার মধ্যে অবশ্যই জয়া চরিত্রটি অন্যতম। যা দর্শকদের নিরাশ করবে না। যদিও চিত্রনাট্যে কিছু জিনিসের অভাব থাকলেও, অশ্বিনী, নিখিল মনহোত্রা ও নীতেশ তিওয়ারির অসাধারণ সংলাপ এই ব্যাপারটিকে ঢেকে দিয়েছে।
তবে সবকিছুকে পাশে সরিয়ে রেখে বলতেই হয় কঙ্গনার কথা। বলিউড কুইনের সাধারণ চেহারা, সমস্ত প্রতিকূলতার বিপরীতে দাঁড়ানোর সাহস আছে। ছবির মধ্য দিয়ে তার সঠিকটা বেরিয়ে এসেছে, বার বার দৃঢ়তার সঙ্গে তা স্পষ্ট করেছেন নায়িকা।
দ্বিতীয় পুরুষ রিভিউ: স্পেশাল পেপারে 'খোকার অটোগ্রাফ রহস্য', সৃজিতের থ্রিলারের প্রেমে পড়়বেন আপনিও