
তাঁর কেরিয়ারের সবচেয়ে কঠিন চরিত্র, ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’–তে পারফেক্ট আলিয়া ভাট
এক দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে গাঙ্গুবাই কাঠিওয়াড়ি, যাঁর যৌনকর্মী হিসাবে প্রথমদিন, তিনি অন্য এক যৌনকর্মীর কাছ থেকে শিখছেন কীভাবে খদ্দেরকে আকর্ষণ করার জন্য অঙ্গিভঙ্গি করতে হয়। অসহায় আলিয়াকে দেখা গিয়েছে, যিনি একেবারে নতুন এই পেশায়, তাঁর বন্ধুর ইঙ্গিতে তিনি বিশ্রীভাবে অঙ্গভঙ্গি করছেন, একটি হাত কোমরে, অন্যটি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করার সময় প্রসারিত, সেই সময় আলিয়াকে অন্য কোথাও হারিয়ে যেতে এবং নিজেকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে দেখা গিয়েছে। অনেকটা এই দৃশ্যের মতোই, গাঙ্গুবাই কাঠিওয়াড়ি দর্শকদের আগ্রহকে বাঁচিয়ে রাখতে সঠিক ইঙ্গিতের জন্য সংগ্রাম করে গিয়েছে। কপালে লাল টিপ, চোখে মোটা করে টানা কাজল, তীক্ষ্ণ চাহনি। এভাবেই পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালির ক্যামেরার সামনে 'গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’ হয়ে ধরা দিয়েছেন আলিয়া ভাট। যৌনকর্মী হিসেবে কামাঠিপুরার যৌনপল্লিতে জীবন শুরু করেছিলেন গাঙ্গুবাঈ। পরে সেখানকার একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী হয়ে ওঠেন। আর সেই গল্পকেই পরিচালক অত্যন্ত তীক্ষ্ণভাবে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি ব্যর্থ নাকি সফল সে প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে।

রিস্ক ফ্যাক্টর আলিয়া ভাট
এই ছবির সবচেয়ে বড় রিস্ক ফ্যাক্টর যদি কিছু হয় তা হল পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালির গাঙ্গুবাইয়ের চরিত্রে আলিয়া ভাটকে নেওয়া। তবে এটা শুধু পরিচালকের নয়, আলিয়ার ক্ষেত্রেও গাঙ্গুবাইয়ের চরিত্রে নিজেকে ফিট বসানো সত্যিই চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল। আলিয়া গাঙ্গুবাইকে অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেছে এবং চরিত্রের গভীরে ঢুকে তাঁকে নিজের মধ্যে ফুটিয়ে তোলার কৌশল আলিয়া খুব ভালোভাবে জানেন এবং তাঁর কাছে সুযোগও প্রচুর ছিল।

সিনেমার গল্প
সিনেমার গল্প শুরু হয় আধুনিক যুগের কামাঠিপুরা দিয়ে এবং আমাদের ফ্ল্যাশব্যাকে নিয়ে যায় যেখানে দর্শকদের সঙ্গে পরিচয় হয় ছোট শহরের গঙ্গার, যাঁকে অভিনয় পেশায় কাজ দেওয়ার নাম করে প্রতারিত করা হয়। তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয় যৌনপল্লীতে, যার মালিক ম্যাডাম শীলা (সীমা পাহওয়া) এবং গঙ্গার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে ব্যবসা কীভাবে করতে হয় তার কৌশল শেখানো হয়। গাঙ্গুর নির্দোষতা ও দুর্বলতাকে চিত্কিত করার দৃশ্যগুলি শীঘ্রই হিংসা ও ধর্ষণের দিকে চলে যায় যখন গাঙ্গু স্থানীয় মাফিয়া প্রধান করিম লালা (অজয় দেবগণ)-এর হাতে সান্তনা পায়। এই সিনেমার টার্নিং পয়েন্ট হল লালার সহায়তায় গঙ্গা হয়ে ওঠেন গাঙ্গুবাই, একজন মহিলা যিনি তাঁর ভাগ্য দু'হাত দিয়ে গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর অধরা অতীতের সঙ্গে বোঝাপড়া করে। এই সিনেমায় এমন অনেক দৃশ্য দেখতে পাবেন যেখানে সঞ্জয় লীলা বনশালি তাঁর পরিচিত ছাপ রেখেছেন। যার মধ্যে ওভারহেড শট, ঢোলিরা গান, তীক্ষ্ণ আচরণ, র্যোমান্টিক গান, যেখানে ফ্লার্ট করার ছায়া রয়েছে, কিন্তু তাও শারীরিক ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও যৌন আবেদনের দাবি করে না। তবে গাঙ্গুবাইয়ের শীর্ষে ওঠা এতটাও সহজ ছিল না। কামাঠিপুরাতে গাঙ্গুর সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রূপান্তরকামী হারেমের মালিক রাজিয়াবাই (বিজয় রাজ)। গাঙ্গুর জীবনে পুরুষরাই সর্বদা পরিধিতে থেকেছে। তা সে গাঙ্গুর আশিক আফসান (শান্তনু মাহেশ্বরী) হোক অথবা সাংবাদিক জিম সর্ব।

গাঙ্গুর চরিত্রে অনবদ্য আলিয়া
গাঙ্গুবাইয়ের চরিত্রে আলিয়া ভাট অনবদ্য এটা স্বীকার না করে উফায় নেই। লালার চরিত্রে অজয় দেবগণ একেবারে যথাযথ ছিলেন। সিংঘম জগত থেকে বেরিয়ে অজয়ের অন্যরকমের চরিত্র সত্যিই নজর কেড়েছে। বিজয় রাজের চরিত্র দেখলে সড়ক সিনেমায় সদাশিবের মহারাণীর চরিত্রের কথা মনে পড়তে পারে, যদিও বিজয় রাজ তাঁর থেকেও কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছেন। তবে গাঙ্গু অর্থাৎ আলিয়ার ওপর থেকে দর্শকদের চোখ সরবে না। গাঙ্গুবাঈয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নিজের ওজন বাড়িয়েছেন আলিয়া ভাট । শিখেছেন ভাষা। শরীরী ভাষায় দখল পেতে হয়েছে অভিনেত্রীকে। সেই পরিশ্রম ক্যামেরার সামনে দেখা গিয়েছে।

সিনেমায় ছোটখাটো ত্রুটি
প্রথমার্ধে সত্যিই খুব বেশি কিছু দেখার মতো ছিল না এবং আলিয়াকে গাঙ্গু মোডে যেতে কিছুটা সময় লেগেছে। তাঁকে গাঙ্গুবাইয়ের মতো বসতে, কথা বলতে, হাঁটতে এবং এমন কিছু মুহূর্ত রয়েছে যেখানে আলিয়া তাঁর অভিনয় করা চরিত্রটিকে গ্রহণ করে। গুজরাতি উচ্চারণ স্থানে স্থানে অসম। আপনি যখন জীবনের চেয়ে বড় চরিত্রে অভিনয় করেন, তখন চিন্তার বিষয় হল যে একটি সামান্য ভুলও বড় পর্দায় দশগুণ বৃদ্ধি পায়।

সফল পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালি
পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালির এই সিনেমা অনেক কাঠখড় পেরিয়ে মুক্তি পেয়েছে। হুসেন জাইদির লেখা বই 'মাফিয়া কুইনস অফ মুম্বই' থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পরিচালক এই সিনেমা তৈরি করেছেন। সঞ্জয় লীলা বনশালি মানেই লার্জার দ্যান লাইফ চরিত্র এবং ক্যামেরার লং শট। 'গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি'র ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হল না। তবে নিজের ধাঁচ কিছুটা পাল্টানোরও চেষ্টা করেছেন পরিচালক। ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর ছবির শুটিং শুরু করেছিলেন পরিচালক। পরে ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিডের প্রকোপে শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। ততদিনে ছবির সত্তর শতাংশ শুটিং শেষ হয়ে গিয়েছিল। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ফের শুটিং শুরু হয়। শেষমেশ ২০২১ সালের জুন মাসে শুটিং শেষ। ২৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেল 'গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি'।