‘দুর্গামতী’ দেখতে বসে মনে হবে যেন তেলেগু ছবি ভাগমতীর হিন্দি ডাব দেখছেন
দুর্গামতী মুভি রিভিউ
একজন রাজনৈতিক নেতা, যাঁর ৩৫ বছরের দীর্ঘ পরিস্কার কর্মজীবন, আরশাদ ওয়ারশি তথা ইশ্বর প্রসাদ। তাঁর প্রাক্তন ব্যক্তিগত সচিবকে খুনের দায়ে সাজা কাটছেন আইপিএস চঞ্চল চৌহান ওরফে ভূমি পেডনেকার। দুর্নীতিহীন পুলিশ যীশু সেনগুপ্ত ওরফে এসিপি অভয় সিং, সিবিআই অফিসার, যাঁকে কাজ দেওয়া হয়েছে ইশ্বর প্রসাদের ভালোমানুষ ব্যক্তিত্বের পেছনে অসৎ লোককে খুঁজে বের করা, মাহি গিল তথা সত্যাক্ষি গাঙ্গুলি এবং একটি ভৌতিক রাজবাড়ি, দুর্গামতী। এই নিয়েই তৈরি দক্ষিণী ছবি ভাগমতীর হিন্দি রিমেক 'দুর্গামতী’।
দর্শকরা হতাশ হবেন
পরিচালক অশোক জির ‘দুর্গামতী' অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে ১১ ডিসেম্বর শুক্রবার যখন মুক্তি পাবে তখন দর্শকরা অনেক পপকর্ন, সম পরিমাণ আশা ও সন্দেহ নিয়ে বসবেন। তবে আড়াই ঘণ্টার টানটান উত্তেজনাপূর্ণ এই ছবির প্রতিটি অংশ দেখেই মনে হবে ভাগমতী ছবিটিই যেন দেখছি। অনুষ্কা শেট্টি অভিনীত তেলেগু ছবির রিমেক যে দুর্গামতী তা নতুন করে দর্শকদের আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
পুরোটাই মিল রয়েছে দু’টি ছবির
দুর্গামতী ও ভাগমতী যেন যমজ দুই বোন, এ ধরনের সিনেমা বলিউড বহুযুগ ধরে দর্শকদের দেখিয়ে এসেছে। তবে দুঃখের বিষয় হল বলিউডে সবসময় ভৌতিক ছবি সেভাবে সফলতা লাভ করতে পারেনি। ব্যতিক্রম টুম্বড ও স্ত্রী। যদিও অস্ত্র ছাড়া চৌকিদার, হাভেলির ভেতর চিৎকার করে বলছেন, ‘চুরেল হ্যায় ওহ'। যদিও এক মহিলা সারা মহল জুড়ে ভয় দেখাচ্ছেন সকলকে, সেটা দেখার পর দর্শকদের মনে তা খুব একটা ভয়ের সঞ্চার করবে না। তবে গল্পের ভয়বহতা শুধুমাত্র রাজমহলের মধ্যেই সীমাবদ্ধতা থাকে না। একটি দৃশ্যে চঞ্চলকে বলতে শোনা যাবে, ‘আজ কি জমানে পে ইনসান কো মানতা কৌন হ্যায়। লোগ সির্ফ ভগবান অউর শয়তান পর ভরোসা করতে হ্যায়।' আর এখানে ভগবান-রূপী শয়তানকে দেখানো হয়েছে, যিনি প্রতিশোধ নিতে এসেছেন। আসল ভয় দেখাতে না পারার জন্য ভাগমতী ও দুর্গামতী দু'টি ছবিই শূণ্য পাবে। এই ছবির রিভিউ কী লেখা উচিত তা নিয়ে হয়ত ভাবতে বসবেন সমালোচকরা। কারণ দু'টি ছবির প্রত্যেকটি দৃশ্যই প্রায় একই রকম। যা দেখে হিন্দি ডাব ছবি মনে হতেই পারে।
ছবির গল্প
এর গল্প হল সৎ চরিত্রের ইশ্বর প্রসাদকে কোনও ভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়া। সিবিআই অফিসার সত্যাক্ষী গাঙ্গুলি সিদ্ধান্ত নেন যে ইশ্বর প্রসাদকে নির্মূল করার একমাত্র উপায় হল তার প্রাক্তন সহযোগী, চঞ্চল চৌহান নামে একজন আইপিএস কর্মকর্তা থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি অর্জন করা। তবে তারা যা অনুমান করতে পারেনি তা হ'ল চঞ্চলকে ভুতুড়ে রাজমহলে এ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রাখার সময় একজন প্রতিহিংসাপরায়ণ মহিলার আত্মা তার অধিকারী হবে।
চুরি করা মূর্তিগুলির সঙ্গে জড়িত একটি সাবপ্লট রয়েছে, এবং রাজবংশের আধিপত্য, কালো টাকা এবং কুঞ্চিত হিন্দু অহঙ্কার সম্পর্কে কিছুটা অস্পষ্টভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
অভিনয়
ছবিতে প্লাস পয়েন্ট বলতে আরশাদ ওয়ারসির ইশ্বরের ভূমিকায় অভিনয় করা। এটা সকলেই জানেন যে আরশাদ কতটা ভালো অভিনেতা এবং তিনি এই ছবিটাকে ডোবার থেকে কিছুটা হলেও বাঁচিয়েছেন। যীশু সেনগুপ্ত বলিউডে যে ধীরে ধীরে পা জমাচ্ছেন তা তাঁর অভিনয় দেখেই বোঝা যাবে, তিনি নিজের চরিত্র যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। মাহি গিলের সত্যাক্ষীর চরিত্র নিয়ে বিশেষ কিছুই বলার নেই। তবে ছবিতে সবচেয়ে কঠিন অভিনয় ছিল ভূমি তথা দুর্গামতীর চরিত্রটি। যেখানে অনুষ্কা শেট্টি ইতিমধ্যেই নিজের অভিনয়ের একটা দাগ দর্শকদের মনে কেটে দিয়ে গিয়েছে। তবে এই চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন ভূমি, জীবনের চেয়েও বড় সংলাপ বলতে গিয়ে অনুষ্কার মতো স্বাচ্ছন্দ্য আনতে পারেননি।
প্রথমে দুর্গামতীর নাম ঠিক করা হয়েছিল দুর্গাবতী এবং যীশু সেনগুপ্ত জানিয়েছেন যে নাম বদল হওয়ার পেছনে পরিচালকের সিদ্ধান্ত, তিনি কোনও চাপের মুখে না পড়েই নাম বদলে দেন।