দঙ্গল মুভি রিভিউ : আমির খান কই? ছবি জুড়ে তো শুধুই মহাবীর ফোগট!
'দঙ্গল' নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে? এই প্রশ্ন যাদের মনে রয়েছে, বিনীত অনুরোধ তারা কিন্তু নিজের মনের জিজ্ঞাসা মেটাতে একবার ছবিটা দেখবেন। তাহলেই সব উত্তর পেয়ে যাবেন।
দঙ্গল
অভিনয়
:
আমির
খান,
সাক্ষী
তানওয়ার,
ফতিমা
সানা
শেখ,
গিরিশ
কুলকার্নি,
অপারশক্তি
খুরানা,
সান্যা
মলহোত্রা
পরিচালক
:
নীতেশ
তিওয়াড়ি
'দঙ্গল' নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে? এই প্রশ্ন যাদের মনে রয়েছে, বিনীত অনুরোধ তারা কিন্তু নিজের মনের জিজ্ঞাসা মেটাতে একবার ছবিটা দেখবেন। তাহলেই সব উত্তর পেয়ে যাবেন। যে প্রত্যাশার পারদ চড়িয়েছিলেন আমির খান, তা শুধু যে পূরণ করেছেন তাই নয়, বরং উপরি আরও অনেকটাই দিয়েছেন। যা হয়তো কথায় বা শব্দ সাজিয়ে বাক্য গঠন করে বলা যাবে না।
পটভূমি :
প্রাক্তন ভারতীয় কুস্তিগীর মহাবীর ফোগট (আমির খান) পুত্রসন্তানের কামনায় দিন কাটাচ্ছিলেন, কারণ তাঁর বিশ্বাস ছিল তাঁর ছেলেই ভারতের জন্য কুস্তিতে আন্তর্জাতিক স্তরে সোনা জিতে আনতে পারবে। কিন্তু ভাগ্যের লিখন কে পাল্টাবে। চারবার কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন তার স্ত্রী (সাক্ষী তানওয়ার)।
বারবার ব্য়র্থ হয়ে নিজের স্বপ্নকে বিদায় জানিয়েছিলেন মহাবীর। কিন্তু একদিনের একটা ঘটনা ফের নতুন করে আশা দেখাতে শুরু করল মহাবীরকে। পাড়ার দুটি ছেলে পিছনে লেগেছিল বলে তাঁর দুই মেয়ে গীতা (ফতিমা সানা শেখ) এবং ববিতা (সান্যা মলহোত্রা) তাদের আড়ং ধোলাই করেছিল।
স্ত্রীকে মহাবীর বলল, "মারি ছোরিয়া ছোরো সে কম হ্যায় ক্যায়?... গোল্ড তো গোল্ড হোতা হ্যায়...ছোরা লাভে ইয়া ছোরি। (আমার মেয়েরা ছেলেদের থেকে কম নাকি...সোনা তো সোনাই...মেয়েরা আনুক বা ছেলেরা)" এরপরই শুরু হল নতুন লড়াই। কারণ 'মেডেল পেড় পে নাহি উগতে...উনহে বানানা পড়তা হ্যায়..প্যায়ার সে, মহনত সে...লগন সে...(মেডেল গাছে ফলে না...তাকে গড়তে হয়, ভালবাসা দিয়ে, পরিশ্রম দিয়ে, মনোযোগ দিয়ে)।'
এরপরই সমাজের প্রথা ভেঙে মেয়েদের কুস্তিতে লড়াইয়ের জন্য তৈরি করতে থাকে বাবা মহাবীর।
পারফরম্যান্স :
আমির খানকে একটা দৃশ্যেও দেখা গেল না। কে বলে দঙ্গল আমির খানের ছবি, ছবির প্রথম দৃশ্য থেকে শেষ পর্যন্ত শুধুই তো মহাবীর ফোগট। এই পেল্লাই ভুঁড়ি, দেহাতি চলাফেরা, খোঁচা খোঁচা গোঁফ দাঁড়ি শুধু মেক আপ নয়। শুধু খাঁড়া খাঁড়া কানদুটি ছাড়া আমিরকে চেনার উপায় নেই।
মহাবীর ফোগটকে অসফল কুস্তিগীর বলা হলেও স্বামী হিসাবে, চার মেয়ের বাবা হিসাবে মহাবীর যে সফল তা অতি নিপুণতার সঙ্গে তুলে ধরতে পেরেছেন আমির ও ছবির পরিচালক।
এই ছবি ২টি মাপদণ্ডে একেবারে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। এই ছবি কুস্তি নিয়ে অত্যন্ত সোজা সাপ্টা একটা ছবি। যা আপনাকে অনুপ্রেরণা দেবে কিন্তু এন্টারটেনমেন্ট বা বিনোদনে সমঝোতা করবে না। এই ছবিতে মাটির গন্ধ রয়েছে। অনেক টেকনিক্যাল দাও-প্যাঁচ রয়েছে কুস্তির যা সাধারণত কোনও বলিউডের ছবিতে দেখানো হয় না। মুখ্যচরিত্রের অভিনেতার ক্ষেত্রে এই ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ দাওপ্যাঁচ তো একেবারেই না। কিন্তু এখানেই অনন্য আমির খান।
দ্বিতীয় হল নারীবাদের দৃঢ় বার্তা যা বোঝায় মেয়েরা ছেলেদের থেকে কোনও অংশে কম নয়। খাপতন্ত্রের হরিয়ানাতে এই সত্যিটাকে স্বীকার করার ক্ষমতাও কারোর নেই। যেখানে মেয়ে হলে আজও মেরে ফেলার মতো 'স্বাভাবিক ঘটনা' ঘটে। নিজেদের নাক বাঁচাতে ছেলেমেয়েদের মেরে ফেলতে হাত কাঁপে না বাবা-কাকাদের। এই ছবি সেই সব এলাকার ক্ষেত্রে কড়া বার্তা দেয়।
ছোট গীতা ও ববিতার ভূমিকায় জাইরা ওয়াসিম এবং সুহানি ভটনাগর অনবদ্য। সেই ছোটবেলায় খেলধূলা করার ইচ্ছার মধ্যে বাবার চাপে প্র্যাকটিস করার অনিচ্ছা এত সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন দুজনে তা অনবদ্য। আর ফতিমা সানা শেখ ও সান্যা মলহোত্রা আমির খানকে যোগ্য সঙ্গত দিয়ে গিয়েছেন।
খামতি :
ছবির কিছু কিছু জায়গা বেশ একঘেয়েমি তৈরি হবে, কিছু কিছু জায়গা বাদ দেওয়া যেত অনায়াসে, তবুও সেগুলোকে আঁকড়ে রেখে ছবির ওয়েটটা যেন কোথাও কোথাও হারিয়ে গিয়েছে।
পরিচালনা :
চিল্লর পার্টি, ভুতনাথ রিটার্নসের পর নীতেশ তিওয়াড়ির এই ছবির পরিচালনা সত্যিই মুগ্ধ করেছে। এত সিরিয়াস সাবজেক্টের এই ছবিতেও নিজের হিউমার সেন্স বজায় রাখতে পেরেছেন পরিচালক তার জন্য তাঁকে একটা ধন্যবাদ তো জানাতেই হয়।
তবে পরিচালকের কাছে একটা অভিযোগ রয়েছে, সাক্ষী তানওয়ারের মতো সুযোগ্য অভিনেত্রীকে সেভাবে ব্যবহারই করলেন না পরিচালক। অথচ সে সুযোগটা ছিল বহু জায়গাতেই। কিন্তু আমির খানকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সাক্ষীকে বেশ খানিকটা কোনঠাসা হতে হয়েছে অযথাই।
সবশেষে বলা যায়, এই ছবিতে অসাধারণ অভিনয় রয়েছে, দারুণ বিনোদন রয়েছে, প্রবল তীব্র বার্তা রয়েছে, খামতিও রয়েছে প্রচুর আর তাই তো এই ছবি বাস্তবোচিত হয়েছে।