সমকামিতা কোনও রোগ নয়! ‘বধাই দো’ এককথায় সমাজ বদলের বার্তা দেয়
সমকামিতা কোনও রোগ নয়! ‘বধাই দো’ এককথায় সমাজ বদলের বার্তা দেয়
সমাজের পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুরুষ ও নারীকে সমানভাবে প্রভাবিত করে। আমরা কদাচিৎ পূর্বের কথা বলি। যেখানে স্ত্রী বা মহিলা কথার অর্থ হল, যিনি ঘর–গৃহস্থালী সামলাবেন, স্বামী ও পরিবারের যত্ন নেবেন। এই ধরনের চিত্রে কোথাও সমকামী, লেসবিয়ান বা গে নামক প্রাণীদের অস্তিত্বই নেই। বর্তমান যুগে এই চিত্র কিছুটা হয়ত বদলেছে তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বদলানোর প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমান সমাজে অনেক সময়ই দেখতে পাবেন যে দারুণ সুখী কাপল, বেড়াতে যাচ্ছেন, গান গাইছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিও পোস্ট করছেন। কিন্তু দিন শেষে যখন বেডরুমের চার দেওয়ালের ভিতরে ঢুকছেন, তখনই হঠাৎ করেই সব সমীকরণ বদলে যাচ্ছে। দিনের পর দিন সমাজ, পরিবারের কথা ভেবে নিজেদের পছন্দ ভালোলাগা গুলোকে জাস্ট কমপ্রোমাইজ করে চালিয়ে যাচ্ছেন। হর্ষবর্ধন কুলকার্ণির বধাই দো তেমনই এক বিয়ের কথা বলে। যাকে এক কথায় ল্যাভেন্ডার ম্যারেজ বলা হয়। গে পুরুষ ও লেসবিয়ান নারী একে অপরকে বিয়ে করেন শুধুমাত্র সমাজের লাগাতার নিন্দা–সমালোচনা থেকে বাঁচতে।
পরিচালক হর্ষবর্ধন কুলকার্ণি হাতে এক বড় দায়িত্ব ছিল। এক তো বিষয়টিকে গুরুগম্ভীর করলে চলবে না। হালকা মেজাজ যেন বজায় থাকে, আবার ল্যাভেন্ডার ম্যারেজে আটকে পড়া দুটি মানুষের মানসিক টানাপোড়েনকেও নিঁখুতভাবে তুলে ধরতে হবে। ছবিটি দেখার পর দর্শকদের মুখে প্রশংসা থামবে না। হালকা চালে সমাজের কঠিন বাস্তবকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ছবিতে। আর সেই সঙ্গে তুখড় অভিনয়ের ফাটাফাটি সঙ্গত। জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবি বধাই হো–এর যোগ্য উত্তরসূরী বধাই দো।
সিনেমার গল্প
পুলিশ চাকরি করা রাজকুমার রাও (শার্দুল) সমকামী। ভালবাসে তাঁর স্বপ্নের পুরুষকে। অন্যদিকে ভূমিও (সুমি) ভালবাসে স্বপ্নের নারীকে। এদিকে দুইয়ের বাড়ি থেকেই আসছে বিয়ের চাপ। কিন্তু সমকামী সম্পর্কের কথা তাঁরা কেউই বলতে পারছে না পরিবারের কাছে। সমন্ধ করে বিয়ে করতে গিয়েই নিজেদের মধ্যে এক দারুণ বোঝাপড়া করে নেনন ভূমি ও রাজকুমার। তাঁরা ঠিক করে বিয়ে করবে। কিন্তু তা কেবল লোক দেখানো। বিয়ের পর ভূমি তাঁর প্রেমিকার সঙ্গেই সম্পর্ক রাখবে। আর রাজকুমার তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে। কিন্তু বিয়ে তো হয়। এর পরেই বদলে যায় গল্প। সামনে আসবে কী তাঁদের এই সত্যি? সমাজ কী মেনে নেবে তাঁদের সমকামীতা? নাকি বিয়ের পর হারিয়ে যাবে সমকামী স্বত্ত্বা!সেটা দেখার জন্য সিনেমাটি দেখতে হবে।
পরিচালকের সফলতা
এই ছবিতে পরিচালক গে বা লেসবিয়ান সম্পর্ককে স্টিরিওটাইপ করার কোনও চেষ্টাই করেননি। বরং প্রতিটি সিনে মানুষের মনের কুসংস্কার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ারই চেষ্টা হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে মনের কথা শেয়ার করতে না পারার যে যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে সমপ্রেমীরা যান, তা নিতান্তই নিখুঁতভাবে স্ক্রিনে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক হর্ষবর্ধন কুলকার্ণি। বিয়ের নানা জটিলতা, মধ্যবিত্ত পরিবারের মূল্যবোধ, পরিজনদের থেকে এক্সপেকটেশন সবটাই এই স্বল্প পরিসরে অসাধারণ চিত্রনাট্যের বুনটে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
অভিনয়
রাজকুমার রাও-এর অভিনয় নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। শার্দুল চরিত্রে তিনি একেবারে নিখুঁত। রাজকুমার ওরফে শার্দুল একেবারে বাড়ির ছেলেই হয়ে উঠেছেন। ভূমি পেডনেকরের অভিনয়ও অনন্য। ছক ভাঙা চরিত্রকে কীভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হয়, ভূমি তা বিলক্ষণ জানেন। এই ছবির বড় চমক চুম দারাং। বলিউডে এর আগে উত্তর পূর্ব ভারতের কোনও অভিনেত্রীকে এমন প্যারালাল লিডে নেওয়া হয়নি, তাও আবার ডেবিউ ছবিতে। যে কোনও ছবির সাফল্য শুধুমাত্র লিড অভিনেতাদের উপর নির্ভর করে না। সর্বাঙ্গ সুন্দর ছবির জন্য পাহাড় প্রমাণ দায়িত্ব থাকে পার্শ্ব চরিত্রগুলির কাঁধেও। এক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব ছিল পোড় খাওয়া অভিনেত্রী সীমা পাহওয়া এবং শিবা চাড্ডার কাঁধে।
বধাই দো চলেছে নিজের মতো
এমন ছবি আগেও হয়েছে আয়ুষ্মান খুরানা অভিনীত ছবি 'শুভ মঙ্গলম জাদা সাবধান'। তবে সেই ছবির ভাবনা সমকামীতা হলেও বলার ভঙ্গি আলাদা। বধাই দো নিজের ছন্দে এগিয়েছে। আর এখানে অবশ্যই পরিচালকের কৃতিত্ব স্বীকার করতে হয়।
সিনেমার গান ও সিনেমাটো
ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি তারিফযোগ্য। ভালো লাগে তনিষ্ক বাগচির টাইটল ট্র্যাক বধাই দো এবং অঙ্কিত তিওয়ারির বন্দি তোত। তবে অমিত ত্রিবেদীর হাম থে সিধে সাধে গানটি ছবি শেষ হওয়ার পরও অজান্তেই আপনি গুনগুন করতে থাকবেন।