অক্ষয় কুমার–সারা আলি খানের মাঝে দাঁড়িয়েও ‘অতরঙ্গি রে’তে মন চুরি করলেন ধনুশ
পরিচালক আনন্দ এল রাই সাধারণ আবেগকে জীবনের আকাঙ্খার চেয়ে বড় করে গল্প বুনতে ওস্তাদ। যেমনটা আমরা দেখতে পেয়েছি তনু ওয়েডস মনু সিনেমায় তনু অত্যাধিক স্বাধীনচেতা মন অথবা রঞ্ঝনা সিনেমায় কুন্দন ও জোয়ার অদ্ভুত প্রেমের কাহিনী। রাই সর্বদা তাঁর সিনেমায় অন্য যে কোনো উপাদানের চেয়ে আবেগকে প্রাধান্য দিয়েছেন। সুতরাং এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে তিনি নতুন কোনও গল্প নিয়ে পরীক্ষা করতে চলেছেন এবং তাঁর এই অনন্য ভাবনা দেখা গিয়েছে 'অতরঙ্গি রে’–তে। যা ডিজনি প্লাস হটস্টারে দেখানো হবে।

সিনেমার গল্প
অতরঙ্গি রে-তে পরিচালক সিনেমার নামের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চরিত্রগুলিকেও অদ্ভুতভাবে তৈরি করেছেন। রিঙ্কু (সারা আলি খান) তাঁর প্রেমিক সজ্জদকে (অক্ষয় কুমার) খুঁজতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। রিঙ্কুর বিশ্বাস সজ্জদ তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন এবং রিঙ্কু তাঁর ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করাটাকেই একমাত্র উপায় বলে মনে করেন। তাঁর ধারণাতে কোনও ভুল নেই তাই না? তবে একটু থামুন, রিঙ্কুর পরিবারের পরিকল্পনা অন্য। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়ে রিঙ্কুর সঙ্গে একপ্রকার জোর জবরদস্তি করে তামিল ব্রাহ্মণ ছেলে বিষ্ণুর (ধনুশ) সঙ্গে বিয়ে দেন। প্রধানত পরিবার তাঁর থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং রিঙ্কু কখনই ফিরে আসবেন না এটা ভেবেই এই বিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই রিঙ্কু-বিষ্ণু-সজ্জদের মধ্যে ত্রিকোণ অচেনা প্রেমের সৃষ্টি হয়। রিঙ্কু ও বিষ্ণু দম্পতি হতে চান না। ঠিক হয়, বিয়ের পরে দ্রুত সম্পর্কটা শেষ করে দেবে তাঁরা। এদিকে কাহিনিতে এরপরই এন্ট্রি নিতে দেখা যায় অক্ষয় কুমারকে। রিঙ্কু রীতিমতো বিভ্রান্তে পড়ে যান বিষ্ণু না সজ্জদ কাকে তাঁর জীবনে রেখে দেবেন। আর এই নিয়েই চলে সিনেমায় টুইস্টের পর টুইস্ট।

বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছবি
অতরঙ্গি রে অনেক জায়গায় বেশ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। প্রথমত, ধনুশ ও অক্ষয়ের মতো কিংবদন্তী অভিনেতার জুটি, যাঁরা জানেন কীভাবে চরিত্রকে ছাঁচে ফেলতে হয়, বিপরীতে সারা আলি খান এখনও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন অভিনয় নিয়ে। অক্ষয়ের জন্য এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কারণ অনেক এ-তালিকাভুক্ত অভিনেতারাই এই সিনেমায় এই চরিত্র করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।

অভিনয়
সিনেমায় অক্ষয়ের সজ্জদ একজন উদ্ভট, হাস্যকর, বিদ্রূপকারী, একজন পাগল মানুষ যে তাঁর সার্কাস টুপি থেকে কৌশল তৈরি করে এবং তাঁর আঙ্গুলের ক্লিকে আবহাওয়া পরিবর্তন করে এক চুটকিতে। এর ঠিক উল্টো বিষ্ণুর চরিত্র, যিনি অজান্তে এমন একটি নাটকে ধরা পড়েছেন যার জন্য তিনি কখনই প্রস্তুত ছিলেন না। বিষ্ণুর চরিত্রে ধনুশ একেবারে যথাযথ ছিলেন এবং সিনেমায় তাঁর অভিনয়ের ক্ষমতা ধরা পড়েছে। রিঙ্কু চরিত্রটি যেন সারার জন্যই তৈরি, তাঁর ইনস্টাগ্রামে 'নমস্কার দর্শকোট সিরিজের সঙ্গে একেবারে মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। রিঙ্কু চুলবুলি, দুষ্টু একটিই মেয়ে, ঠিক একটি টাইম বোম্বের মতো, যা ফাটার অপেক্ষা করছে।

সিনেমার চিত্রনাট্য
রাইয়ের চিত্রনাট্য সিনেমায় তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি। তাঁর চরিত্রগুলি এমনকি নিস্তেজ সংলাপে প্রাণ দেয়। যাইহোক, অতরঙ্গি রে-তে, পুরো সিনেমাটি তিনটি স্তম্ভের মধ্যে দোদুল্যমান - সারা, অক্ষয় এবং ধনুশ। সহায়ক চরিত্রগুলি গল্পে আরও স্বাদ যোগ করতে দেখা গেলে তা আকর্ষণীয় হত। বেশ কিছু দৃশ্যকে দীর্ঘ করা হয়েছে।

ভালোবাসকে পাওয়ার গল্প অতরঙ্গি রে
অতরঙ্গি রে, পুরো সিনেমা জুড়ে প্রেম, হারনো, ক্ষোভ, শোকের মধ্যে দিয়ে চালিত হয়ে জাবন কি প্রস্তাব দিচ্ছে তা গ্রহণ করা, সেটাই দেখানো হয়েছে। সিনেমায় প্রেম-ভালোবাসা ছাড়া এবং রিঙকুর সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করা ছাড়া আর কিছুই সেরকম মশলা নেই। এই সিনেমার হায় চকা চক গানটি ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাই দর্শকরা এই সিনেমা পছন্দ করবেন কিনা তা তাঁদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক।