বাবা–মেয়ের গল্পে ইরফানই ছিলেন একমাত্র জিয়ন কাঠি
বাবা–মেয়ের গল্পে ইরফানই ছিলেন একমাত্র জিয়ন কাঠি
মাঝে মাঝে আপনি যখন ছবি দেখতে যাবেন তখন আপনার প্রত্যাশাগুলোকে বাড়িতেই রেখে যাবেন। কারণ অনেকসময়ই উচ্চ প্রত্যাশা ২ ঘণ্টার পর নিরাশাতে পরিণত করবে। পরিচালক হোমি আদাজানিয়ার 'অংরেজি মিডিয়াম’ দেখার পরও এমনই অনুভূতি হবে। যা সকেত চৌধুরির 'হিন্দি মিডিয়াম’–এর সিক্যুয়েল। যদিও প্রথম ছবিটি তার গুণগত মান বজায় রাখলেও এই ছবিটি ছবিটি সে বিষয়ে একেবারেই ব্যর্থ।
প্রায় দু’বছর পর বড় পর্দায় ফিরেছেন ইরফান খান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একটি অবলম্বন কাহিনী ও চিত্রনাট্য ছবিটিকে শ্রমযুক্ত ঘড়িতে রূপান্তর করেছে। এটা মানতেই হবে যে দীর্ঘক্ষণ ছবি দেখার পর যখন আপনি হতাশা হয়ে পড়েছেন তখন ছোট ছোট হাসির দৃশ্য একটু হলেও আপনাকে হাসিয়েছে। কিন্তু সবদিক দিয়ে বিচার করলে ছবিটি সেই জায়গায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।
ছবির ট্রেলার
‘অংরেজি মিডিয়াম' ছবির ট্রেলার যথেষ্ট আশাপ্রদ ছিল। মিষ্টি ও খুব সাধারণ বাবা-মেয়ের গল্প, তাঁদের দু'জনের মধ্যেকার দৃঢ় সম্পর্ক, সংঘর্ষ ও আবেগময় সফর নিয়ে ছবির ট্রেলার তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ছবিতে সেগুলি সবই খিচুড়ি পাকিয়ে গিয়েছে, চরিত্রগুলি যেন দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চিৎকার করছে। আর ছবির শেষভাগ যেন বিধ্বংসী কোনও ঝড়।
ছবির গল্প
ছবির সেট সাজানো হয়েছে রাজস্থানের উদয়পুরে। এই ছবি শুরু হচ্ছে এক মিষ্টির দোকানের মালিক চম্পক বনশলকে (ইরফান) দিয়ে। একা বাবা তাঁর মেয়ে তারিকা (রাধিকা মদন)-কে বড় করে তুলছেন। তারিকা এখন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে। তারিকার সবসময় স্বপ্ন ছিল যে সে তার পড়াশোনা বিদেশে গিয়ে করবে। কিন্তু চম্পক বুঝে উঠতে পারেন না মেয়ের এই স্বপ্নকে তিনি কিভাবে পূরণ করবেন। একমাত্র লন্ডনের সম্মানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি তারিকা স্কলারশিপ পায় তবেই তা সম্ভব। এরপরই শুরু হয় এক বাবার লড়াই, যাতে তাঁর মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হয় ও মেয়ের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ভর্তি হতে পারে। বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ছবির গল্প চলতে থাকে।
তারিকার চরিত্রটির সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যাবে আজকের প্রজন্মকে। যারাম বিদেশে গিয়ে সেখানকার সংস্কৃতিকে আপন করতে চায়। তবে আদজানিয়া এই ছবির মধ্যে দারুণ এক বাস্তবকে তুলে ধরেছেন, যেখানে চম্পকের মেয়ে তারিকা নিজের স্বাধীনতাকে উপভোগ করতে চায়, সেখানে আর দশটা ভারতীয় বাবার মতো চম্পকও তাঁর মেয়েকে কাছছাড়া করতে চান না। ইরফান ও রাধিকার একত্রিত দৃশ্য যথেষ্ট ভাবাবেগপূর্ণ ছিল।
অভিনয়
ক্যান্সারকে জয় করে ফিরেছেন ইরফান। তাই তাঁর অভিনয় আগের চেয়েও বেশি তীক্ষ্ণ, প্রত্যেকটি দৃশ্যে ইরফা অসাধরণ অভিনয় করেছেন। তাঁর চোখ আপনার সঙ্গে কথা বলবে, তাঁর হাসি, কান্না আপনাকেও হাসতে কাঁদতে বাধ্য করবে। রাধিকা মদনের অভিনয় খুব একটা চোখে পড়ার মতো ছিল না। করিনা কাপুর, ডিম্পল কাপাডিয়ার অভিনয়ও যথাযথ ছিল।