অতীতের ব্যর্থতাই অমিতাভ বচ্চনকে আজকের মেগাস্টার তৈরি করেছে! জানুন তাঁর কেরিয়ারের সফরনামা
১১ অক্টোবর সিনেমা প্রেমীদের কাছে খুবই বিশেষ একটি দিন। কারণ এদিনই হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এক কিংবদন্তী অভিনেতার জন্ম হয়েছিল, যিনি প্রজন্মের পর প্রজন্ম রাজ করে চলেছেন। তবে এই সফর মোটেও সহজ ছিল না অমিতাভ বচ্চনের কাছে। এলাহাবাদ থেকে মায়ানগরী মুম্বইয়ে তাঁর কঠোর সংঘর্ষের কাহিনী সকলেই জানেন। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তারকা আছে, সুপারস্টার আছে, মেগাস্টারও আছে। কিন্তু একজনই সুপারহিরো, অমিতাভ বচ্চন। তাঁর ব্যক্তিত্ব, কথা বলার ধরন, গলার স্বর বিগ বিকে সকলের থেকে আলাদা করেছে। বিগ বি-এর গল্প যে কোনও সাধারণ মানুষের মতোই, যেখানে ব্যর্থতার পরও সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখা যায়। বর্তমানের উজ্জ্বল তারকা একসময় কতটা কাঠখড় পুড়িয়েছেন আসুন জেনে নিন তাঁর গল্প।
বিগ বি–কেও শুনতে হয়েছিল না
অমিতাভ বচ্চন যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন সেই সময় তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে উপস্থাপকের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। অমিতাভ বচ্চন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'তারা যেটা খুঁজছিল হয়ত আমার কন্ঠস্বর সেটার জন্য উপ।উক্ত ছিল না। সেই সময়ে অনেক বিশিষ্ট ভাষ্যকার ছিলেন এবং এটা ভেঙে পড়ার মতো কোনও বিষয় ছিল না।' অন্য এক সাক্ষাৎকারে অমিতাভ বচ্চন অভিনেতা হিসাবে তাঁর গোড়ার দিকের সংঘর্ষের কথা স্মরণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, 'সেই সময় আমায় অনেকেই প্রত্যাখান করেছিল। যেখানেই যেতাম, সেখানেই চাকরি পেতে ব্যর্থ হতাম। আমি হয় যথেষ্ট যোগ্য ছিলাম না বা আমি হয় খুব লাজুক ছিলাম বা আমার সাক্ষাৎকারের সময় আমি খুব ধীরে ধীরে কথা বলেছিলাম এবং আরও যোগ্য ব্যক্তিরা এটি পেয়েছিলেন।' ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বিগ বি স্মরণ করেছেন একটি সিনেমায় তাঁর প্রত্যাখানের দিনটি। এরপর ১৯৬৯ সালে প্রথম ছবি সাত হিন্দুস্তানি মুক্তি পায় অমিতাভ বচ্চনের।
অমিতাভ বচ্চনের ফ্লপ সিনেমা
প্রত্যেক অভিনেতার নিজস্ব সময় থাকে। আর এটা অমিতাভ বচ্চনের ক্ষেত্রেও সত্যি প্রমাণ করেছে। ১৯৬৯ সালে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করার পর তাঁর ১২টি সিনেমা ফ্লপ হয় এবং এরপর অমিতাভের প্রথম হিট সিনেমা ১৯৭৩ সালে জঞ্জীর। ১৯৮৩ সালে অমিতাভ বচ্চন যখন কুলি সিনেমার শুটিং করছেন তখন তিনি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। তবে এই সিনেমার শুটিং চলাকালীন স্টান্ট দৃশ্যে অমিতাভের দুর্ঘটনা হয়। যার ফলে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে, কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার কারণে বিগ বি-কে তাঁর কেরিয়ারের কিছু সোনালী বছর হারিয়ে ফেলতে হয়। ১৯৯২ সালে খুদা গবাহ সিনেমার পর তিনি প্রায় অবসর নেওয়ার মতো অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন কারণ তাঁর সিনেমাগুলি আগের মতো ম্যাজিক দেখাচ্ছিল না।
অমিতাভ বচ্চনের এবিসিএল
১৯৯৪ সালে অমিতাভ বচ্চন এবিসিএল শুরু করেন। দ্য অমিতাভ বচ্চন কর্পোরেশন লিমিটেড ফিল্ম প্রযোজনা, ডিস্ট্রিবিউশন, ইভেন্ট ও ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং টেলিভিশন মার্কেটিং। শুরুর দিকে ভালোই চলছিল। আইকনিক ভারতীয় কমেডি শো দেখ ভাই দেখ ও মণি রত্নমের ক্লাসিক ও বম্বের হিন্দি স্বত্ব কিনে ১৫ কোটি টাকা লাভ করেছিল। কিন্তু ১৯৯৯ সালে এই সংস্থার হাল করুণ হয়ে যায়, লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান, ৯০ কোটির বেশি ঋণ, সবকিছু মিলিয়ে রীতিমতো বেহাল দশা হয় এবিসিএল-এর। এটা খুব হাস্যকর বিষয় যে ভারতে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যুগে এবিসিএল-এর জন্য তা আর্থিক দুঃস্বপ্ন হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল।
অভিনেতা হিসাবে কামব্যাক
অমিতাভ বচ্চনের মাথায় তখন ভারী ঋণের বোঝা। তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না কীভাবে কি করবেন। বিগ বি তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু তথা পরিচালক যশ চোপড়ার কাছে যান এবং তাঁর আগামী ছবি মহাব্বতে-তে তাঁকে অভিনয়ের সুযোগ করে দিতে অনুরোধ করেন। আর এই মহাব্বতে সিনেমার মধ্য দিয়ে ফের অভিনেতা অমিতাভের সফর ফের শুরু হয় এবং এরপর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি, সম্ভবত, তাঁর পরবর্তী বছরগুলিতে তাঁর আগের তুলনায় আরও বেশি সিনেমা করার জন্য একটি রেকর্ড স্থাপন করবেন। ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে যে সিনেমাগুলি তাঁকে মেগাস্টার তৈরি করেছিল বর্তমানে সেই একই ধাঁচের সিনেমা অমিতাভকে সুপারস্টারের খেতাব দিয়েছে।
টেলিভিশনে পদার্পণ অমিতাভের
২০০০ সালে কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন অমিতাভ বচ্চন। সিনেমা থেকে তিনি টেলিভিশনে লাভ দেন। সম্ভবত অমিতাভই একমাত্র তারকা যিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। অমিতাভ বচ্চনকে কুইজ ভিত্তিক রিয়্যালিটি শোয়ের সঞ্চালকের ভূমিকার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা গ্রহণ করেন অভিনেতা। ব্রিটিশ শো 'হু ওয়ান্টস টু বি অ্যা মিলিওনেয়ার' থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতে তৈরি হয় 'কৌন বনেগা ক্রোড়পতি'। এই খেলার সব প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিলেই মিলবে এক কোটি টাকা পুরস্কার। বিগ বি এই শো পরিচালনা করার জন্য হ্যাঁ বলার পর তাঁর ও ভারতীয় টেলিভিশনের ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করে দেয় এই শো। প্রত্যেক পরিবারে এই শো এখন যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং ছোটপর্দার মাধ্যমেও অমিতাভ বচ্চন জনপ্রিয়তার নজির গঠন করেন।
৮০তম জন্মদিনে বিগ বিকে শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী থেকে করণ জোহর