প্রয়াত কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী নির্মলা মিশ্র, আধুনিক গানের এক যুগের অবসান
আবারও সঙ্গীত জগতের নক্ষত্রপতন। না ফেরার দেশে চলে গেলেন কিংবদন্তী গায়িকা নির্মলা মিশ্র। শনিবার রাত ১২:০২ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনাবসান ঘটে শিল্পীর। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বর্তমানে এনজি মেডিকেয়ারে রাখা হয়েছে তাঁর মরদেহ। শিল্পী সৈকত মিত্র জানিয়েছেন যে রবিবার অর্থাৎ আজ শিল্পীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
বিগত চার বছরে কমপক্ষে ১০-১৫ বার হাসপাতালে ভর্তি হয়েও সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন শিল্পী। নির্মলা মিশ্রের পরিবার সূত্রে খবর এবার আর হাসসপাতালে যেতে না চাওয়ায় বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। নির্মলা মিশ্রের স্ট্রোকও হয়েছিল, ছিল বয়সজনিত বেস কয়েকটি সমস্যা। শনিবার রাতেও শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকরা এসে চিকিৎসা শুরু করলেও শেষরক্ষা আর হয়নি। চেতলার বাড়িতেই প্রয়াত হন শিল্পী।
মিষ্টি গলার অধিকারী নির্মলা মিশ্রের ঝুলিতে রয়েছে একাধিক জনপ্রিয় আধুনিক গানের সম্ভার। ও তোতা পাখি রে, এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম না, চাঁদকে নিভিয়ে রাখো, তোমার আকাশ দু'টি চোখে, আজ কোনও কাজ নেই, ও আমার মন পাখি, আমায় বাঁশের বাঁশি দাও বাজাতে, আকাশে নেই তারার দীপ, আমি তো তোমার হাসি কান্নার চিরদিনের সাথী-এর মতো একাধিক বিখ্যাত গান আজও শ্রোতাদের মনে জায়গা করে রয়েছে। নির্মলা মিশ্র হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে-এর যুগে আধুনিক গানের আলাদা ঘারানা তৈরি করেছিলেন। এছাড়াও স্ত্রী, অভিনেত্রী, অনুতাপ সহ বেশ কিছু বাংলা সিনেমাতেও তিনি কন্ঠ দিয়েছেন।
পরাধীন ভারতে ১৯৩৮ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মজিলপুরে জন্মগ্রহণ করেন নির্মলা মিশ্র। পরে বাবার চাকরির সূত্রে পরিবারের সঙ্গে কলকাতার চেতলায় চলে আসেন তিনি। ছেলেবেলা থেকেই সংগীতের পরিবেশে বড় হয়েছেন নির্মলা মিশ্র। তাঁর বাবা পণ্ডিত মোহিনী মোহন মিশ্র এবং দাদা মুরারিমোহন মিশ্র বিখ্যাত গায়ক ছিলেন। কাশী সংগীত সমাজ তাঁর বাবাকে পণ্ডিত, সংগীত রত্ন সহ একাধিক উপাধিতে ভূষিত করেছিল। জন্মের পর থেকেই সংগীতের প্রতি অসীম আগ্রহ ছিল তাঁর। কৈশোর বয়স থেকেই দুর্দান্ত গান গাইতেন তিনি। সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে তিনি মুগ্ধ করেছেন আপামর বাংলাকে। ১৯৬০ সালে ওডিয়া ছবি 'শ্রী লোকনাথ' সিনেমার গানের কণ্ঠ দেন নির্মলা। ওই ছবির মাধ্যমেই সংগীত জগতে পদার্পণ করেন নির্মলা মিশ্র।
শিল্পীর শেষকৃত্য রবিবার হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর পুত্র শুভদীপ দাশগুপ্ত। তিনি জানিয়েছেন, নার্সিংহোম থেকে নির্মলার দেহ প্রথমে বাড়িতে আনা হবে। সেখান থেকে সকাল ১১টা নাগাদ রবীন্দ্রসদন, রাজ্য সঙ্গীত অ্যাকাডেমি হয়ে কেওড়াতলা মহাশ্মশান।