ফিরে দেখা ২০২০: এ বছরই প্রথম রূপোলি পর্দার জগতে নেমে এসেছিল অন্ধকার
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশজুড়ে লকডাউনের জন্য অচল হয়ে পড়েছিল হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। প্রযোজনা থেমে গিয়েছিল, সিনেমা হলগুলি দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং দর্শকরাও ওটিটির পর্দায় মনোযোগ দিয়েছিলেন, এ বছর হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেমে গিয়েছিল কিছু মাসের জন্য, যার ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্বের ক্ষতি এবং অনেক কর্মী বাধ্য হয়েছিলেন বেকারত্বের জীবন কাটাতে। করোনা ভাইরাসের মহামারি এ বছরের হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটি অভূতপূর্ব কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছে। ঠিক কত ক্ষতি হয়েছে, তার নিশ্চিত কোনও পরিসংখ্যান না থাকলেও মনে করা হচ্ছে ১৫০০ কোটি থেকে তা হাজার কোটির ক্ষতি এবং সিঙ্গল স্ক্রিনের সিনেমা হলগুলির মাসে ২৫ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে।

ন’মাস বন্ধ ছিল সিনেমা হল
বাণিজ্য বিশ্লেষক আমূল মোহনের মতে, উদাহরণ স্বরূপ বছরে ২০০টি ছবি তৈরি হয় এবং বলিউড বছরে বক্স অফিস থেকে ৩০০ কোটি টাকা উপার্জন করে। মোহন বলেন, ‘এটি আলাদা এবং অন্যরকমের বছর। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু হয়নি।' এটি একটি দ্বৈত সঙ্কট, যেখানে বিষয়বস্তু এবং অনেক প্রযোজকদের নয় পিছিয়ে দিতে বাধ্য করেছে নতুবা তা ওটিটিতে প্রদর্শন করে দিয়েছে। যদিও মার্চ মাসের পর থেকে ন'মাস বন্ধ থাকার পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বন্ধ থাকা সিনেমা হলগুলি পুনরায় খুলে যায়। তবে তাও দর্শকরা এখনও সিনেমা হলের বদ্ধ জায়গায় সিনেমা দেখতে ভয় পাচ্ছেন। নতুন কোনও সিনেমার প্রলোভন দিয়েও এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। লক্ষ মানুষকে এই একটি ইন্ডাস্ট্রি সমর্থন করে।

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ৩ হাজার কোটির সম্মুখীন
অভিনেতা, পরিচালক এবং প্রযোজক সহ পাঁচ লক্ষ মানুষ ফেডারেশন অফ ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লয়িতে (এফডব্লিউআইসিই) নাম নথিভুক্ত করেছেন। সিনে এমপ্লয়ির সভাপতি বিএন তিওয়ারি জানিয়েছেন যে এর মধ্যে জুনিয়র আর্টিস্ট, মেকআপ, সেট ডিজাইনার, কার্পেন্টার ও ব্যাকগ্রাউন্ড ডিজাইনার মিলিয়ে আড়াই লক্ষ কর্মী রয়েছেন। বাণিজ্য পর্যবেক্ষণকারী হিমেশ মনকাদের মতে এই ক্ষতি আগামী বছরও বহন করতে হবে। বছরের হিসেবে যদি দেখা যায়, তবে এক বছরে ৩ হাজার কোটি আয়ের বদলে তা দাঁড়িয়ে রয়েছে ৫০০-৬০০ কোটিতে। তিনি বলেন, ‘তাই আমাদের ক্ষতি হয়েছে ১৭০০-২০০০ কোটি টাকা। কারণ ২০২০ সালে ছবিগুলি ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়ার কারণে জাতীয় ক্ষতি হবে।' মনকদ এও জানিয়েছেন যে (তবে) সুদের ব্যয়, ওভারহেডের ব্যয় হবে, যার কারণে প্রতিটি সিনেমার বাজেট পাঁচ কোটি থেকে ১৫ কোটি হয়ে যেতে পারে। এটিকে অতিরিক্ত ব্যয় বলা যেতে পারে।

সিনেমা হল মালিকদের বিপুল ক্ষতি
মনকদ বলেন, ‘সপ্তাহের পর সপ্তাহ সিনেমাগুলি প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে এবং তাদের সিনেমা হলে চলাও সংক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। মহামারি এখনও এখানে রয়েছে তাই সিনেমা হলগুলিতে শতকরা আসন ভর্তি হবে না। ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত মানুষের এই ভয় দূর হবে না।' একই সুরে গলা মিলিয়েছেন সিনিয়র ডিস্ট্রিবিউটার ও এক্সিবিটর রাজ বনসলও। বনসল জানিয়েছেন যে ২০২০ বছর সবচেয়ে খারাপ বছর। তিনি জানিয়েছেন, রাজস্থানে এখনও সিনেমা হলগুলি বন্ধ রয়েছে। হয়ত তা জানুয়ারিতে পুনরায় খুলতে পারে। পরিস্থিতি একমাত্র একটা উপায়েই শুধরাবে যদি বড় কোনও সিনেমা মুক্তি পায়, যাতে সেটি দর্শকদের সিনেমা হলে টানতে পারে। সিনেমা হলের মালিকরা ঠিক কতটা ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন তা সংখ্যায় বলে বোঝানো যাবে না। বিশাল বড় সংখ্যায় এই ক্ষতি হয়েছে।

বড় সিনেমার মুক্তির অপেক্ষায়
ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশে সিনেমা হল রয়েছে অক্ষয় রাঠির। তিনি জানান, বিনোদন জগতের সব খেলোয়াড়দের পরীক্ষা নিচ্ছে ২০২০। রাঠি ও বনসল উভয়ই স্বীকার করেছেন যে সিনেমার ইতিহাসে এটা প্রথম যেখানে এতমাস যাবৎ সিনেমা হলগুলি বন্ধ হয়েছিল। সিনেমার ওভারহেড, সিনেমার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যাওয়ার ব্যয়, সিনেমা ধরে রাখার খরচ ও অন্যান্য বিষয় ধরলে ক্ষতি হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে। প্রত্যেক সিঙ্গল স্ক্রিন মাসে প্রায় ২৫-৭৫ লক্ষ টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে। কারণ বিদ্যুৎ এবং রক্ষণা বেক্ষণের খরচ, বেতন দেওয়া সহ অন্যান্য বিষয়গুলির ওপর নজর দিতে হচ্ছে,যেখানে উপার্জন শূণ্য। দেশের অধিকাংশ জায়গায় সিনেমা হল খুলে গিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ও ছবি মুক্তি পেতে কিছুটা সময় এখনও লাগবে। বিশ্বের বহু জায়গায় ভ্যাকসিন প্রদান শুরু হয়ে গিয়েছে এবং মানুষের ভেতর থেকে আতঙ্ক অনেকটাই দূরে চলে গিয়েছে। রাধে, সূর্যবংশ, ৮৩ এবং জয়েশভাই জোয়ারদার মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এই ছবিগুলি দর্শকদের টানতে সহায়তা করবে বলে মনে করছে।
ফিরে দেখা ২০২০: ১২ মাসে ১২টি খবর, যা বদলে দিয়েছে দেশের ভাগ্য