সত্যজিতের 'পথের পাঁচালী' ঘিরে পর্দার আড়ালের কিছু অজানা তথ্য
বাঙালি জানে 'মে দিবস'-এর পরের দিনটা 'রে (রায়) দিবস'! ১৯২১ সালের ২ রা মে, কলকাতার স্বনামধন্য রায় বংশে জন্ম হয় সুকুমার পুত্র সত্যজিতের।
বাঙালি জানে 'মে দিবস'-এর পরের দিনটা 'রে (রায়) দিবস'! ১৯২১ সালের ২ রা মে, কলকাতার স্বনামধন্য রায় বংশে জন্ম হয় সুকুমার পুত্র সত্যজিতের। প্রতিবছরই রবি-মাস (মে মাস, কারণ ৯ মে ২৫ শে বৈশাখ ) শুরু হতেই আরও একবার বাঙালি স্মরণ করে নেয় এ বাংলার অন্যতম গর্ব সত্যজিৎকে।
একজন বাঙালির ছোটবেলা যদি 'গুপি গাইন বাঘা বাইন ' দিয়ে শুরু হয় , তাহলে অবশ্যই কৈশোরে তাঁকে ছুঁয়ে গিয়েছে 'পথের পাঁচালী' ,আর তাঁর যৌবন উপভোগ করেছে 'অরণ্যের দিনরাত্রি'-কে। বাঙালির ওঠা, বসা , কথা -বলা সবের মধ্যেই তাঁর শিল্পকীর্তি জড়িয়ে। নিজের অজান্তেই বাঙালি কতবার কথোপোকথনের মধ্যেই আওড়ে ফেলে সত্যজিতের বিখ্য়াত কিছু সংলাপ। এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্মে বাঙালি জড়িয়ে গিয়েছে 'রে-ইজম'-এর সঙ্গে। এটা কারোরই অজনা নয় যে, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ' পথের পাঁচালী'-কে সেলুলয়েড বন্দি করে নিজের চলচ্চিত্র সফর শুরু করেছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সত্যজিৎ রায়। সেই ছবির সঙ্গে সত্যজিতের সম্পর্ক কতটা গভীর তা পর্দার আড়ালের কিছু ঘটনাই স্পষ্ট করে দেয়। একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেরকমই কিছু ঘটনা।
অপু বাছাই পর্ব
বিভূতিভূষণের অপুকে স্ক্রিনে ফুটিয়ে তুলতে সত্যজিৎ বেছে নিয়েছিলেন সুবীর বন্দ্যোপধ্যায়কে। যাঁর জীবনী নিয়ে পরবর্তীকালে 'অপুর পাঁচালী' ছবিটি তৈরি করেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ কাটিয়ে ফিরে আসা যাক 'সত্যজিতের অপু'-তে! ছোট্ট সুবীরকে সেই সময়ে বেছে নেওয়ার নেপথ্যে মত দিয়েছিলেন সত্যজিতের ঘরনী বিজয়া রায়।
রাজি ছিলেন না সুবীরের বাবা!
জানা যায়, ছেলেকে ফিল্মের জন্য ছেড়ে দিতে প্রথমে রাজি হননি সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা।সেই সময় তাঁকে সত্যজিৎ অনেকভাবে বুঝিয়ে ছিলেন। শোনা যায়, তিনি সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবাকে বলেছিলেন, 'আজ আপনার ছেলে আর আমাকে কেউ চেনে না, তবে আমি এমন একটা ছবি বানাবো যা বাংলা ছবির পালাবদল ঘটাবে । আর আপনার ছেলের সঙ্গে আমাকেও চিনবে বাংলা।' একসর্বভারতীয় ইংরাজি পত্রিকায় এমনই তথ্য প্রকাশিত হয়।
ছবির আর্থিক অবস্থা ঘিরে কিছু তথ্য
'পথের পাঁচালী' ছবিটি তৈরির সময়ে সত্যজিতের সামনে আর্থিক সমস্যা দেখা দেয় । সে সময় এগিয়ে আসেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। এঘটনা প্রায় সমস্ত সত্যজিৎ ভক্তের জানা। তবে অর্থ সাহায্যের জন্য বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে সত্য়জিৎ দ্বারস্থ হননি, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন যায় সত্যজিতের মায়ের এক বন্ধুর তরফে।
কোন খাতে সাহায্য করা হয় সত্যজিতের ছবিকে?
পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই সময়ে সত্যজিতের ছবির ধরণটি বুঝতে ভুল করেছিল। সরকার ভেবেছিল 'রাস্তা উন্নয়ন' সংক্রান্ত কোনও তথ্যচিত্র তৈরি করতে চলেছেন সত্যজিৎ , ফলে সেই মর্মে আর্থিক সাহায্য করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যে আর্থিক সাহায্যের ফলে কালজয়ী একটি 'মাস্টার পিস' তৈরি হয় 'পথের পাঁচালী' ছবির মাধ্যমে।
বিজয়ার গয়না বিক্রি
ছবিটি নির্মানের ক্ষেত্রে যখন চরম আর্থিক সংকট তৈরি হয়, তখন এগিয়ে আসেন সত্যজিতের স্ত্রী বিজয়া। বিজয়া নিজের গয়না বন্ধক রাখেন। ভাঙা হয় সত্যজিতের ইনসিএরেন্স পলিসি। আর সমস্ত টাকা মিলিয়ে পথ চলা শুরু করে 'পথের পাঁচালী'।
সিনেমাটোগ্রাফার সুব্রত মিত্রের ঘটনা
ছবির সিনেমাটোগ্রাফার ছিলেন সুব্রত মিত্র। একথা সকলেই জানেন। তবে সেই সময়ের সুব্রত মিত্র এক্কেবারে নতুন ছলিনে। বলা ভাো, তিনি স্টিল ফটোগ্রাফার ছিলেন। ১৬ এমএম ক্যামেরাতে কীভাবে ফিল্ম শ্যুটি করতে হয় তা ধীরে ধীরে শিখেছিলেন সুব্রত। বাকিটা ইতিহাস!
ক্যানেস-এ 'পথের পাঁচালী'
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সুপারিশে ক্যানেস ফিল্ম ফেস্টিভালে পাঠানো হয় 'পথের পাঁচালী'-কে। ছিবিটিকে বেছে নেওয়া হয় ফেস্টিভালের 'বেস্ট হিউম্যান ডক্যুমেন্ট ' হিসাবে।বিশ্বদরবারে প্রথম বার শুরু হয় ভারতীয় সমান্তরাল চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা। আশার আলো দেখানে 'রে', .. সত্যজিৎ 'রে' (রায়)।