মুক্তি পেল বিদায় ব্যোমকেশ-এর ট্রেলার, ছবিতে আছে একের পর এক চমক
সল্টলেকের একটি পাবে মুক্তি পেল বাংলায় চলচ্চিত্র বিদায় ব্যোমকেশের ট্রেলার।
গত কয়েক বছর ধরে বাংলা সিনেমায় চলছে ব্যোমকেশ পর্ব। আবির চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত এমনকী ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়ও ব্যোমকেশএর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। অঞ্জন দত্ত থেকে প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ অনেকেই বাজি ধরেছেন ব্যোমকেশের উপর। ব্যোমকেশের ছবির সেই তালিকায় নয়া সংযোজন 'বিদায় ব্যোমকেশ'। সম্প্রতি সল্টলেকের একটি পাবে মুক্তি পেয়েছে এই ছবির ট্রেলার। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সোহিনী সরকার, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, আবির চট্টোপাধ্যায় এবং পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য।
ব্যোমকেশের চরিত্রে আবির-কে প্রথম পর্দায় এনেছিলেন অঞ্জন দত্ত। তারপর অরিন্দম শিলের বানানো ব্যোমকেশ ছবিতেও তিনিই ছিলেন সত্য সন্ধানের দায়িত্বে। অরিন্দমের ছবিতে সোহিনী সরকার ছিলেন সত্যবতী। 'বিদায় ব্যোমকেশ' ছবিতেও তাঁদের ভূমিকা অপরিবর্তিত রেখেছেন দেবালয়। সম্ভবত এই চরিত্রে তাঁদের সঙ্গে দর্শকের পরিচিতিটাকে কাজে লাগাতে চেয়েছেন পরিচালক। তাছাড়া অনেকেরই মত, আবিরের মধ্যে যে ক্ষুড়দার বাঙালী ছাপ রয়েছে, তা ব্যোমকেশের জন্য একেবারে যথাযথ।
তবে আগের ব্যোমকেশের ছবিগুলির সঙ্গে এই ছবির মিল এতটুকুই। এর বাইরে একের পর এক চমক ও আকর্ষণে ভরা এই ছবি। প্রথমত, ব্যোমকেশের ছবি আসছে শুনলেই সবার আগে বাঙালীর প্রশ্ন থাকে কোন গল্পটা? রূপোলী পর্দায় দেখার আগে আরেকবার সেই গল্পটি ঝালিয়ে নেওয়ার একটা মানসিকতা থাকে। এ ছবিতে কিন্তু সেই সুযোগ নেই। কারণ গল্পটি শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা নয়। তাঁর চরিত্রগুলি ধার নিয়ে এ ছবির গল্প লিখেছেন পরিচালক নিজেই। অবশ্যই অত্যন্ত বড় ঝুঁকির কাজ। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলের অনুমতি নিতে হয়েছে। গল্পটি তাঁকে শোনাতে হয়েছে। তবে দেবালয় হতাশ করেননি, জানা গিয়েছে গল্প শুনে দেবালয়কে লেখক-পুত্র বাহবাই দিয়েছেন।
এবার আসা যাক ট্রেলারে। এখানেই অপেক্ষা করে আছে পরের চমক। এই গল্পকে ফেলা হয়েছে ২০১৮ সালে। তবে শার্লক-এ যেরকম শার্লক হোমস-এর আধুনীকিকরণ আমরা দেখেছি, সেরকমটা এই ছবিতে দেখা যাবে না। এখানে ব্যোমকেশ বৃদ্ধ। লাঠি নিয়ে অন্যের সাহায্য়ে কোনওরকমে হাঁটেন। এর আগে ধৃতিমানের করা ব্যোমকেশও ছিল বুড়ো, কিন্তু তা খুব একটা দরের হয়নি।
ট্রেলরের শুরুতেই দেখা যায় এক ব্যক্তি রক্ত মাখা ছুরি নিয়ে থানায় এসে বলেন তিনি একটি খুন করে ফেলেছেন। পুলিশের ফোন যায় বৃদ্ধ ব্যোমকেশের কাছে। না, রহস্য সমাধানে সত্যানন্বেষীর সাহায্য় চেয়ে নয়। ফোনে পুলিশ জানায়, ওই রক্তমাখা ছোড়া হাতের ব্যক্তি আসলে ব্যোমকেশের পুত্র, অভিমন্যু বক্সি। এই চরিত্রে আছেন জয় সেনগুপ্ত।
এরপর বৃদ্ধ টাক মাথা ব্যোমকেশ বক্সিকে দেখা যায় তাঁর পুত্রবধূর সঙ্গে ট্যাক্সিতে করে থানায় আসতে। ব্যোমকেশ বক্সি একজন সেলিব্রিটি গোয়েন্দা (যদিও তিনি নিজেকে সত্য়ান্ভেষী বলতেই পছন্দ করেন)। তাঁর ছেলে খুন করেছে। কাজেই ব্রেকিং-এর গন্ধে থানার বাইরে জড়ো হয় রাজ্যের মিডিয়া।
বিপর্যস্ত দেখায় ব্যোমকেশকে। এতদিন অন্যের ঘরের রহস্য সমাধান করেছেন। কিন্তু অপরাধ যখন নিজের ঘরে থাবা মেরেছে, তখন বৃদ্ধ ব্যোমকেশ দৃশ্য়তই দিশাহারা। ভেবে পান না, কীভাবে ছেলেকে বাঁচাবেন। বৃদ্ধ ব্যোমকেশকে উদ্ধার করতে আসে অজিত ও সত্যবতী। তাঁরা অবশ্য অনেক আগেই মৃত। কিন্তু ব্যোমকেশের জগতে তাঁরা আজও জীবিত। তাঁদের বাজ দিয়ে রহস্যের সমাধানের কতা তিনি ভাবতেও পারেন না। তাই সত্যবতীকে বারবার এসে জিজ্ঞেস করতে দেখা যায়, 'তুমি খোকাকে বাঁচাবে কীকরে?'
ব্যোমকেশ বলেন, কৃষ্ণ সহায় নাহলেও তাঁর কাছে সাত্যকি আছে। এখানেই ট্রেলারে প্রবেশ হয় সাত্যকি বক্সির, ব্যোমকেশের নাতি। এই চরিত্রটিতেও অভিনয় করেছেন আবির। সাত্যকির মুখের একটি সংলাপে শোনা যায় ব্যোমকেশের সেই চিরপরিচিত বক্তব্য, 'আমি সত্যিটা খুঁজে বের করতে চাইছি'। নাতিকে লাঠি করে ব্য়োমকেশের দীর্ঘদিনের শান না দেওয়া মস্তিষ্কই কী তাঁর পুত্রকে বাঁচাবে, নাকি বৃদ্ধ ব্যোমকেশ সাত্যকির হাতেই তুলে দেবে সত্যান্বেশনের ব্য়াটন, নাকি এইবার সত্যি সত্যি পরাজিত হয়ে বিদায় নিতে হবে ব্যোমকেশকে? এসব সত্য জানতে হলে ২০ জুন অবধি অপেক্ষা করতে হবে। ওইদিনই মুক্তি শ্রী ভেঙ্কেটেশ ফিল্মস প্রযোজিত 'বিদায় ব্য়োমকেশ'।
ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিচালক দেবালয় বলেন, 'আমি ব্যোমকেশকে বিদায় জানাচ্ছি না। আমার এত ভালোবাসার একটা চরিত্রকে এককথায় বিদায় জানাতে পারবও না। আসলে আমি সবসময় দেখতে চেয়েছিলাম, ব্যোমকেশ বৃদ্ধ হলে কী অবস্থায় থাকেন। আর আমাদের গোয়েন্দারা তো সবসময় অন্য জায়গায় গিয়ে রহস্যের সমাধান করেন। কিন্তু, অপরাধ যদি তার নিজের ঘরে আসে, তখন তিনি কী করবেন, এটাও আমার আগ্রহের বিষয় ছিল। সেই দুইয়ের মিশেলেই এগিয়েছে বিদায় ব্যোমকেশ।'
তবে এই ছবির চমকের এখানেই সেষ নয়। ট্রেলারে এক পুলিশ অফিসারের চরিত্রে দেখা গিয়েছে গায়ক রূপঙ্করকে। জানা গিয়েছে সেই পুলিশ অফিসার বিশেষ ভাল মানুষ নন। এই ছবি কিন্তু রূপঙ্করের জন্য নতুন দরজা খুলে দিতে পারে। অভিনয়ে থাকেলেও বিদায় ব্যোমকেশের গানে কিন্তু রূপঙ্করের গলা শোনা যাবে না। গায়ক মজা করে বলেছেন , 'এটা হয়তো বিদায় রূপঙ্কর!'
ছবির শেষ চমক সিরি। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, অ্যাপেলের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে জগত জুড়ে যে পরিচিত, সেই সিরি-ই। ছবিতে কিন্তু সিরি-রও একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। ট্রেলারেও সিরির গলা শোনা যায়। ছবিতে সিরি-র ভূমিকাটা কী, তা জানতে যেতে হবে হলে।