প্রথম প্রয়াণবার্ষিকীতে ভারাক্রান্ত মনে স্মরণ ঋতুপর্ণ ঘোষকে
গত বছর ৩০ মে রাতে ঘুমেই চির ঘুমে ঢলে পড়েন এই প্রতিভাশালী চলচ্চিত্র পরিচালক। খবর ছড়াতে ভিড় ভেঙে পড়েছিল তাঁর দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে। যখন প্রয়াত হন, তখন বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর। সত্যজিৎ রায়ের পর বাংলা ছবির জগতে যে ক'জন মুষ্টিমেয় পরিচালক দাপিয়ে বেরিয়েছেন, তাঁদের অন্যতম হলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনো শেষ করে কিছুদিন বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। কপি রাইটার পদে কাজ করতেন। সেটা গত শতাব্দীর আটের দশক। 'বঙ্গ জীবনের অঙ্গ বোরোলিন' কিংবা 'ম্যাঙ্গো ফ্রুটি ফ্রেশ অ্যান্ড জুসি', এই বিখ্যাত বিজ্ঞাপনগুলি তাঁরই তৈরি। ১৯৯০ সালে তিনি সিনেমা তৈরির দিকে ঝোঁকেন। তখন অবশ্য তথ্যচিত্র নিয়ে মাতামাতি করতেন।
তাঁর পরিচালনায় তৈরি প্রথম পুরোদস্তুর চলচ্চিত্র হল 'হীরের আংটি', শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে। ১৯৯২ সালে এটি মুক্তি পায়। দ্বিতীয় ছবি, 'উনিশে এপ্রিল' সারা দেশের নজর কেড়ে নেয়। অপর্ণা সেন, দেবশ্রী রায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে অভিনীত এই ছবি জিতেছিল জাতীয় পুরস্কার। পরের ছবি 'দহন' মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। এটিও পুরস্কার পেয়েছিল।
ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত অন্যান্য বিখ্যাত ছবিগুলি হল 'বাড়িওয়ালি', 'অসুখ', 'উৎসব', 'তিতলি', 'শুভ মহুরত', 'চোখের বালি', 'রেইনকোট', 'অন্তর মহল', 'খেলা', 'সব চরিত্র কাল্পনিক', 'আবহমান' ইত্যাদি। এর মধ্যে কতগুলি ছবি পুরস্কৃতও হয়েছে। মৃত্যুর আগে তাঁর দ্বারা পরিচালিত শেষ ছবি হল 'সত্যান্বেষী'।
পরিচালনার পাশাপাশি তিনি অভিনয় করতেও ভালোবাসতেন। ওড়িয়া ছবি 'কথা দেইথিলি মা কু'-তে তিনি অভিনয় করেন। এ ছাড়া 'আর একটি প্রেমের গল্প', 'মেমোরিজ ইন মার্চ', 'চিত্রাঙ্গদা' ইত্যাদি সিনেমাতেও অভিনয়-প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন।
লেখালিখি করতেও ভালোবাসতেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। 'আনন্দলোক' এবং 'সংবাদ প্রতিদিন' পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।