Exclusive:মমতার দেওয়া বিশেষ টিপস থেকে টলিউড-রাজনীতি নিয়ে অকপট নুসরত
দেশ থেকে রাজ্যে ভোট-পারদ তুঙ্গে। ভোট রাজনীতির ময়দানে বাংলায় তৃণমূলের প্রার্থী তালিকার অন্যতম চমক অভিনেত্রী নুসরত জাহান।
দেশ থেকে রাজ্যে ভোট-পারদ তুঙ্গে। ভোট রাজনীতির ময়দানে বাংলায় তৃণমূলের প্রার্থী তালিকার অন্যতম চমক অভিনেত্রী নুসরত জাহান। প্রচারের ব্যাস্ত শিডিউলের মধ্যেই 'ওয়ানইন্ডিয়া বাংলার' বিশেষ সাক্ষাৎকারে একাধিক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় পাওয়া গেল বাংলা চলচ্চিত্রের গ্ল্যাম-কুইন তথা বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী নুসরত জাহানকে।
রাজনীতিতে তো আপনি নতুন,তবে অভিনয় আপনার নখদর্পণে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির অভিনেত্রী আপনি। কী মনে হচ্ছে , রাজনীতি নাকি অভিনয় কোনটা কঠিন?
রাজনীতিতে তো এই এলাম..! (একটু থেমে).. তো কোনটা বেশি কঠিন বলে তুলনা টানব না। প্রত্যেকটা কাজই সমান মূল্যবান। আচ্ছা তুমিই ধরো,.. প্রথমদিন যখন কাজ শুরু করেছিলে তখন কি বুঝেছিলে কোন আর্টিক্যালটা বেশি কঠিন বা কোনটা সোজা?! তো, প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রেই সমান গুরুত্ব থাকে। সেই হিসাবে বলতে পারো যে কোনও কাজই কঠিন নয় আবার সব কাজই কঠিন।
ইন্ডাস্ট্রির মধ্যেও তো অনেক রকমের রাজনীতির খবর উঠে আসে, সেক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে থেকে রাজনীতি আর ইন্ডাস্ট্রির মধ্যের রাজনীতির ভিতর ফারাক কতটা?
দেখো, আমি রাজনীতি মানে বুঝি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনা। মানুষকে সুস্থ জীবন দেওয়া। মানুষের ভালো করার দিকেই আমার লক্ষ্য। ইন্ডাস্ট্রিতে রাজনীতি আছে, আর রাজনীতির মধ্যেই রাজনীতি .. আমি এভাবে দেখিনা,সেদিক থেকে দেখলে সমস্ত ব্যাপারেই রাজনীতি থাকে। (মজা করে) দেখো শাশুড়ি-বউমার মধ্যেও তো রাজনীতি থাকে!..
আপনি 'পরিবর্তন' এর প্রসঙ্গ যখন তুললেনই ,তখন একটা প্রশ্ন করি,.. আপনি বসিরহাটে কী কী পরিবর্তন করতে চান?
বসিরহাটে তৃণমূলের সরকার আসার পর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কয়েক বছর আগে যখন বসিরহাট যেতাম তখন রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এখন অনেক ..অনেক ভালো হয়েছে রাস্তাঘাট। সুন্দরবনের দিকে যখন যেতাম তখন অনেকটাই খারাপ ছিল অবস্থা। বনবিবি ব্রিজ দিদি নির্মাণ করে দেওয়ার পর পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো হয়ে গিয়েছে। সময়ও এখন কম লাগে। আর যদি বলো আমাকে.. তাহলে ওখানে আরেকটা রাস্তা .. যেটা বিভিন্ন গ্রামকে বড় রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত করবে, সেটা নিয়ে আমি ভাবছি।.. (একটু থেমে) সেদিন আমি টাকি গিয়েছিলাম, সেখানে ইছামতী নদীর ঘাট আছে। আমি চাই ওই ঘাটটার সৌন্দার্যায়ন করতে।
এবার একটু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গে আসি.. যদি বলা হয়, দিদির কোনও একটা গুণ যা আপনাকে উৎসাহ দিয়েছে,তাহলে কোনটাকে বাছবেন?
শি
হ্যাজ
মেনি...তবে
আমার
সবচেয়ে
যেটা
ভালোলাগে,
দিদি
ভীষণভাবে
মানুষের
দুঃখ
বুঝতে
পারেন।
গরীব
মানুষের
বেদনা,চাহিদা
দিদি
ঠিক
বুঝে
নেন
এবং
সেদিকে
নজর
রাখেন।
এটা
কিন্তু
অন্যান্য
রাজনীতিবিদের
মধ্যে
সহজে
দেখা
যায়না।
মানুষের
মন
ছুঁয়ে
নেওয়ার
মতো
ক্ষমতা
রাখেন
মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও 'দিদি' হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কোন পার্থক্যগুলো আপনি দেখেছেন?
আজকে দিদি দিদির মতো আছেন বলেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে উঠতে পেরেছেন। শি ইজ অ্যা ফাইটার! আমার যখন আঠেরো বছর বয়স ছিল,তখন না আমি ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলাম,.. রাজনীতি তো দূরের কথা, কিন্তু মাই ফার্স্ট ভোট ওয়েন্ট টু হার! একজন মহিলা এত সাংঘাতিক লড়াই করেছেন জীবনে, দিদির ওই লড়াইটা দেখে আমি খুব উৎসাহী হয়ে পড়েছিলাম।
সাম্প্রতিককালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা ভিডিও প্রচারে বলেন যে আপনি প্রার্থী হতে চাননি,উনি আপনাকে প্রার্থী করেছেন। কারণ আপনি সকলকে নিয়ে চলার ক্ষমতা রাখেন। কী বলবেন?
দিদি একদমই ঠিক বলেছেন, শি জাজড মি কারেক্টলি! আমার কারোর সঙ্গে কোনও দিন শত্রুতা হয়নি। আমার ব্যবহার নিয়ে কেউ কোনওদিনই আঙুল তুলতে পারবে না। দিদি যখন সম্প্রীতির বার্তা দেন তখন এটাই বলেন যে একসঙ্গে যেন সকলকে নিয়ে চলতে পারি। আর আমিও সেটাই ফলো করতে পারি।
ভোটযুদ্ধে ট্রোলকে হাতিয়ার বানিয়ে রাজনীতি চলছে, যার শিকার আপনি ও মিমি চক্রবর্তীও.. এই ট্রোলকে কিভাবে নিচ্ছেন?
দেখো,আমরা ট্রোলর নিয়ে মাথা ঘামাইনা। আমরা পাবলিক ফিগার.. লোকজন তো আমাদের ওপরেই নজর রাখবে। প্রার্থী তালিকায় যখন নাম বের হয়, তখন আমাদের নিকে নজর পড়ে সকলের। এটা নিয়ে যত বেশি মাথা ঘামাবেন তত বেশি নেগেটিভিটিকে অ্যালাও করা হয়। আমি এসব নিয়ে ভাবি না। মিমির কথাও বলতে পারি, ও এটা নিয়ে ভাবে না। আমাদের নিয়ে এত মিথ্যে গসিপ লেখা হয়.. এগুলো মানুষকে আর অ্যাট্র্যাক্স করে না!
রাজনৈতিক ট্রোল কি ভোটব্যাঙ্কে একটু হলেও প্রভাব ফেলতে পারে?
একদমই না! দেখো.. বাংলার মানুষ কেউ বোকা নন। এঁরা রাজনীতি সচেতন। আশপাশের পরিবেশে কী হচ্ছে সকলেই বোঝেন।
ফিল্মের চেনা কেরিয়ারর বাইরে ভোটপ্রচারের সঙ্গে রোজের রুটিন কিভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন?
দেখো, এত রোদে প্রচার,পরিশ্রম.. সব কিছু মধ্যে ক্লান্তি কেটে যাচ্ছে মানুষের সঙ্গে মিশে। দর্শককে এত কাছ থেকে কখনও তো দেখিনি। এতদিন শো করেছি ,দূর থেকে দেখেছি সকলকে। এবার তাঁদের সঙ্গে মিশছি, কথা বলছি,.. আবদারও তাঁদের কিছু থাকে।.. দেখো আমাদের গ্রাম বাংলার মানুষ এত সাদামাটা যে তাঁদের চাহিদা খুব বেশি নেই। .. অল্প চাহিদা!.. সেই চাহিদা মেটানোর নিয়ে আলোচনা, তাঁদের আশীর্বাদ পাওয়া বড় ব্যাপার।.. রোদে পোড়া বা সারাদিনেরল ক্লান্তি সবকিছুই কম্পেনসেট করে দেয় এই ভালোবাসা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একমঞ্চে দাঁড়িয়ে ভোটের প্রচার, কীরকম অনুভূতি ছিল সেদিন?
ভীষণ গর্ববোধ হচ্ছিল। উত্তরবঙ্গে দিদির সঙ্গে একা গিয়ে বক্তব্য রেখেছি, আমি কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে। এটা খুবই ভালো লাগে যে,দিদি সেই বিশ্বাসটা আমার ওপর রেখেছেন।
প্রার্থী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে কী কী স্পেশ্যাল টিপস পেয়েছেন?
পরামর্শ এটাই ছিল সৎভাবে কাজ করতে হবে। আন্তরিকভাবে মানুষের জন্য কাজ করতেই তিনি বলেছিলেন বারবার। উনি বলেছেন, বহু অনুরোধ আসবে, বহু আবদার আসবে , পরামর্শ আসবে, তবে মন থেকে যেটা চাইবে সেটাই করবে।
ভোট প্রচার নিয়ে কোনও স্পেশ্যাল গেমপ্ল্যান?
সেরকম কিছু নয়। তবে ৭টা বিধানসভা আমার অঞ্চলে। সেটা অল্প সময়ে কিভাবে কভার করব সেটা ছক কষে নিয়েছিলাম। ব্লক, পঞ্চায়েত হিসাবে ছক কষেছিলাম। প্রচারটা আমি পার্সোনাল লেভেল -এ রাখতে চেয়েছি প্রফেশনাল নয়।
ভোট প্রচারের ফিট থাকার মন্ত্র কী?
বাড়িতে ফিট থাকার জন্য যা খাই বাইরেও তাইই খাচ্ছি। আমরাদের যখন খাবার আয়োজন হয়,আমার গোটা টিম একই খাবার খাই। আমার জন্য কোনও স্পেশ্যাল খাবার অর্ডার করাই না। শুধু এই দিনগুলোর জন্য নয়, যাঁরা আমাকে চেনেন তাঁরা সকলেই জানেন শ্যুটিং এর সেট-এও আমি একই। যেটা প্রোডাকশনে রান্না হয় সেটাই খাই..
সবার সঙ্গে মিশে গিয়ে...?
(হেসে ফেলে) আমার পছন্দ গো.. ওটাই আমার পছন্দ। ওই খাবারটা খেলে মনে হয়, পেটটাও ভরেছে, মনটাও ভরেছে। আমি ভালোবাসি ওটা। আসলে আমি হেলদি খেতে খুব একটা ভালোও বাসিনা ( একটু হালকা মেজাজে)।.. এক্সট্রার মধ্যে যেটা ক্যারি করি যেহেতু গরম আছে ,তাই ইলেক্ট্রল জল।
এবার একটু আপনার ফিল্ম কেরিয়ারের প্রসঙ্গে আসছি.. নুসরত জাহান আবার শ্যুটিং ফ্লোরে কবে আসছেন?
আই অ্যাম প্ল্যানিং ফর পূজা রিলিজ। এমনি কয়েকটা গল্প রয়েছে। এখনও দেখিনি। ভোট পর্ব মিটলে তারপর হবে।
অনেক ধন্যবাদ এত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সময় দেওয়ার জন্য...
ধন্যবাদ।
(ছবি সৌজন্য: নুসরত জাহানের ফেসবুক পেজ)