নায়িকা মেয়ের মৃত্যু রহস্য আজও অধরা, ২৫ বছরের শোক বুকে নিয়েই নিঃশ্বাস ত্যাগ মা-এর
চাঁদনি ছবির পর ঋষি কাপুরের সঙ্গে শ্রীদেবীর জুটিকেই সিনেমাপ্রেমীরা শাশ্বত বলে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু, দিব্যা এসে সেই মিথকে যেন ধাক্কা দিয়েছিলেন।
মিতা ভারতী। গত পঁচিশ বছরে এই নামটা কে কতবার শুনেছেন তা স্মরণ করে বলার সাহস দেখাবেন না। কারণ, অধিকাংশ মানুষের কাছে মিতা ভারতীর নামটা পরিচিত নয়। কিন্তু, তাঁদের স্মরণে যদি এনে দেওয়া যায় ২৫ বছর আগের এক ঘটনা তাহলে অনেকেরই সুবিধা হবে।
১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের পাঁচ তলা থেকে নিচে পড়ে গিয়েছিলেন এক উঠতি এবং প্রতিভাবান নায়িকা। পাঁচই এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়। তখন তাঁর মাত্র ১৯ বছর বয়স। সেই নায়িকার নাম ছিল দিব্যা ভারতী। মিতা ভারতী দিব্য়া ভারতীর মা। মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গেই একই অ্য়াপার্টমেন্টে থাকতেন মিতা। ঘটনার সময় মিতা সেদিন কোথায় ছিলেন তা প্রকাশ্যে কখনও জানা যায়নি।
ঊনিশ বছরের মেয়ের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি মিতা ভারতী। এরপর থেকেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। ভারতী পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনেরা দিব্যার মৃত্যু নিয়ে সেভাবে কোনওদিনই মুখ খোলেনি। তবে, মাঝে-মধ্যেই জানা যেত মিতা ভারতীর মানসিক অবস্থার কথা। মেয়েকে হারিয়ে তিনি সুস্থ নেই এবং মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন সেই খবর মাঝে-মাঝেই প্রকাশ্যে এসেছে।
কয়েক বছর ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছিলেন মিতা। গত শুক্রবার মেয়ের মৃত্যুর রহস্যকে বুকে নিয়ে তিনিও বিদায় নিয়েছেন। বলতে গেলে মিতা ভারতীর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে দিব্যা ভারতীর অধ্য়ায়ের একপ্রকার অবসানই হল। দিব্যা ভারতীর তুতো বোন বলিউড অভিনেত্রী কায়ানাত আরোরা জানিয়েছেন মিতা ভারতীর মৃত্যুর পর যাবতীয় পরলৌকিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জামাই সাজিদ নাদিওয়ালার তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে প্রার্থনা অনুষ্ঠানও।
দিব্যা ভারতীর বাবা ওমপ্রকাশ এখন আশি বছরের বৃদ্ধ। সম্প্রতি তাঁর জন্মদিনও পালন করা হয়। সাজিদ নাকি তাঁর বর্তমান স্ত্রী ওয়ার্ধা-কে নিয়ে সেই অনুষ্ঠানে যোগও দিয়েছিলেন। কায়ানাত জানিয়েছেন দিব্যার মৃত্যুর পর থেকেই শ্বশুর, শাশুড়ির যাবতীয় ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সাজিদ। আজ পর্যন্ত সাজিদ নাকি দিব্যার বাবা-মা-এর দেখভালে কোথাও কসুর রাখেননি।
মাত্র ১৬ বছর বয়সেই বলিউডে এসেছিলেন দিব্যা ভারতী। অবশ্য দিব্যা যে ঈশ্বরপ্রদত্ত অভিনয়ের অধিকারী তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মাত্র ১৩ বছর বয়সেই। সে সময় বলিউডে নাম লেখানোরও চেষ্টা করেছিলেন দিব্যা। ভাল গান গাইতে পারতেন। একটা প্লে-ব্যাকের সময়ই বলিউডের তাবড় সব প্রযোজক এবং পরিচালকদের নজরে পড়ে যান দিব্যা। তবে, বলিউডে ব্রেক পেতে দেরি হওয়ায় দিব্যা তেলেগু ছবিতে নেমে পড়েছিলেন। প্রথম ছবি থেকেই দক্ষিণ ঝড় তুলে দিয়েছিলেন তেরো বছরের দিব্যা। ১৯৯২ সালে বলিউডে আবির্ভাবেই একসঙ্গে একাধিক ছবিতে সাইন করেন। ১৯৯২থেকে ৯৩-এটাই ছিল বলিউডে দিব্যার কেরিয়ার স্প্য়ান। কিন্তু, তারমধ্যে তিনি অভিনয় করেছিলেন ঋষি কাপুর, শাহরুখ খান, গোবিন্দা, সানি দেওল-দের মতো নায়কদের বিপরীতে।
চাঁদনি ছবির পর ঋষি কাপুরের সঙ্গে শ্রীদেবীর জুটিকেই সিনেমাপ্রেমীরা শাশ্বত বলে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু, দিব্যা এসে সেই মিথকে যেন ধাক্কা দিয়েছিলেন। বলিউডে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল যে দিব্যার আবির্ভাবে এখন অন্ধকারে ঢাকা পড়ছে 'চাঁদনি' শ্রীদেবী। এমনকী, দিব্যাকে তাঁদের ছবিতে সাইন করাতে প্রযোজক-পরিচালকদের লাইন পড়ে গিয়েছিল। শ্রীদেবী যেন আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছিলেন বাতিলের খাতায়।
এমনই এক অবিশ্বাস্য কেরিয়ারের সূচনাতেই এসেছিল মর্মান্তিক সংবাদ। নিজের অ্যাপার্টমেন্টের পাঁচতলার জানলা গলে নিচের টেরেসে পড়েছিলেন দিব্যা। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা কোমায় থাকার পর মৃত্যু হয়। দিব্যার মৃত্যুতে উঠে আসে আত্মহত্যা তত্ত্ব। বলা হয়েছিল মাত্র ১৯-এ একের পর এক চোখ ধাঁধানো সাফলে উচ্চাকাঙ্খি হয়ে উঠেছিলেন দিব্যা। মানসিক উৎকন্ঠায় মাদক সেবন ও অ্যালকোহলে আসক্তি তৈরি হয়েছিল। নেশার ঘোরেই নাকি জানলা থেকে লাফ দিয়েছিলেন তিনি। যদিও, কেউ কেউ আবার দিব্য়ার মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যা বলেও ঠাওরেছিলেন। অভিযোগ করা হয়েছিল মুম্বই বিস্ফোরণের সঙ্গে নাম জড়ানো দিব্যার প্রযোজক স্বামী সাজিদ নাদিওয়ালা খুন করেছেন দিব্যাকে। মাফিয়া ওয়ার্ল্ডের বহু গোপন কথাই নাকি জেনে ফেলেছিলেন তিনি। তাই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
দিব্যার মৃত্যু আত্মহত্যা না খুন তা আজও ঠিক হয়নি। আনসলভড মিস্ট্রি হিসাবেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দিব্য়ার ফাইল। আর মেয়ের সেই আনসলভড মিস্ট্রির শোক বুকে নিয়ে ২৫ বছরের যন্ত্রণার নিরসন ঘটিয়ে চলে গেলেন মিতা ভারতী।