হম রহে ইয়া না রহে-র রেশ রেখে গানের মঞ্চেই কাটল কেকে-র জীবনের শেষ পল
'জিন্দেগি নে জিন্দেগি ভর গম দিয়ে, জিতনে মৌসম দিয়ে সব নম দিয়ে', গানের কথার সঙ্গেই অসম্ভব কাকতালীয় ভাবে মিলে যাচ্ছে প্রতিটা সময় এবং মুহূর্ত। কারণ জীবন এতটাই অনিশ্চিত এবং এর সময়কাল এতটাই ছোট যে বলা কঠিন কার জন্য কোন মুহূর্তই শেষ হবে। কেউ এই কথা জানেন না যে তাঁর জীবনের অন্তিম সময় কোনটা, ঠিক যেমন জানতে পারলেন না দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। সকলের কাছে অবশ্য তিনি কেকে নামেই পরিচিত।
শেষ কনসার্টে কেকে
মঙ্গলবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠানে গান গাইছিলেন কেকে। গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতা এসেছিলেন জনপ্রিয় গায়ক। সন্ধেবেলা গান করতে মঞ্চে ওঠেন। কিন্তু গান গাইতে গাইতে আচমকাই অসুস্থ বোধ করায় স্পট লাইট বন্ধ করতে বলেন। এরপরেই শো শেষ করে হোটেলে ফিরে যান। এবং সেখানেই তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন তাঁকে।
বলিউড সফর
একাধিকবার সাক্ষাৎকারে কেকে বলেছেন ছোটবেলা থেকেই আর ডি বর্মন এবং কিশোর কুমারের প্রভাব তাঁর মধ্যে প্রতক্ষ ভাবে ছিল। তাই সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় তখন থেকেই। এরপর একাধিক ধাপ পেরিয়ে গত দশকের শুরুর দিক থেকেই হয়ে ওঠেন বলিউডের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় গায়ক। এমনকি চলতি প্রজন্মের সবচেয়ে বহুমুখী গায়ক হিসেবে গণ্য করা হয়।
'কিছু স্মৃতি কিছু গান'
বন্ধুত্ব থেকে রোম্যান্স অথবা মন ভারাক্রান্ত, এই প্রজন্মের কাছে সবকিছুর সমাধানই ছিল কেকে-এর গান। কেকে ওরফে কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ, যাঁর গলার যাদুতে দেশবাসী মুগ্ধ। আনুষ্ঠানিক গানের তালিম না থাকলেও এক অদ্ভুত টান ছিল তাঁর গানের মধ্যে। শ্রোতারা সেই টানে নিজেদের না ভাসিয়ে থাকতে পারতেন না। আজও কেকে বলতেই মনে পড়ে যায় তাঁর গাওয়া অজস্র জনপ্রিয় গান, যার মধ্যে অন্যতম ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল। সত্যিই 'পল' বা মুহূর্তটিকে ভোলার নয়। যখন কেকে আমাদের অগণিত স্মৃতি দিয়ে গেলেন তাঁর গানের মাধ্যমে।
'ছোটি সি ইয়ে জিন্দেগি'
সালটা ১৯৯৯, সোনি মিউজিকের 'পল' অ্যালবামের সেই টাইটেল ট্র্যাক দুই দশক পেরিয়েও দেশের প্রায় প্রতিটা গান প্রিয় মানুষের কাছে প্রথম পছন্দের হয়ে রয়েছে। স্কুল কলেজের শেষ দিন হোক, কিংবা বন্ধুদের রি ইউনিয়ন, কোনও ব্যক্তিগত ছেড়ে আসা মুহূর্ত হোক কিংবা স্মৃতির পাতা হাতরে নস্টালজিয়ায় পারি জমানো, সবকিছুর সঙ্গেই যেন শত শতাংশ মিলে যায় এই গানের প্রতিটি কথা আর মন ভোলানো সুর। ঠিক যেমন এই দিন নজরুল মঞ্চে একের পর এক রঙিন ফ্ল্যাশ বাল্বের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কনসার্টের শেষ গান ধরেছিলেন কে কে, সেটিও ছিল এই গানটিই। তখনও বুঝতে পারেননি, জীবনের শেষ কনসার্টের শেষ গান হতে চলেছে এটাই। আর এরপর না ফেরার অন্য দেশেও হয়ত নিজের সুরের জাদু দিয়ে মুগ্ধ করবেন অপ্সরা কিন্নরী দের। আর দূর থেকে তাঁর লাখ লাখ ভক্তদের কানে ভেসে আসবে, 'হম র্যাহে ইয়া না র্যাহে কল, কল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল'।