শেষযাত্রায় বাংলার শেষ ম্যাটিনি আইডল, উত্তম যুগ শেষেও বাঙালি মননের ঘরে বাইরে চিরস্মরণীয় অপু
শেষযাত্রায় বাংলার শেষ ম্যাটিনি আইডল, উত্তম যুগ শেষেও বাঙালি মননের ঘরে বাইরে চিরস্মরণীয় অপু
টলিউড হোক বা বলিউড, রূপোলী পর্দার প্রথমসারির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে চলা অদৃশ্য রেষারেষি কথা প্রায়শই উড়ে এসে জুড়ে বসে পেজ-থ্রির পাতায়। যা নিয়ে বৈঠকি আড্ডা হোক বা চায়ের ঠেক, প্রায়শই বিতর্কের ঝড় ওঠে ভক্তকূলের মধ্যে। এদিকে বাংলার সিনে দুনিয়ায় উত্তম-সৌমিত্র সংঘাত নিয়ে হাজারও গল্পকথা থাকলেও মহানায়কের বিদায়ের পর সে সবই একপ্রকার স্তিমিত হয়ে যায়। অবশেষে 'মহানায়কের’ মৃত্যুর প্রায় ৩০ দশক পর চোখ বুঝলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও।
মানসপিতা সত্যজিত রায়ের সংস্পর্শে জীবনের খোলনলচে বদল
অনেকেই বলেন উত্তমকুমারের সমসাময়িক হলেও মানসপিতা সত্যজিত রায়ের সংস্পর্শে আসার পর থেকেই আমূল বদল পরিবর্তন দেখা যায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আটপৌড়ে জীবনে। পথ চলা শুরু অপুর সংসারের হাত ধরেই, তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি কৃষ্ণনগরের ঘরের ছেলেকে। অনেকেই বলেন পরবর্তীতে ৬০ বছরের অভিনয় জীবনে অনেক আগেই ছাপিয়ে গিয়েছেন উত্তম কুমারকে।
উত্তমকুমারের সঙ্গে ন’টি ছবিতে অভিনয় করেন সৌমিত্র
এদিকে ন'টি ছবিতে সৌমিত্র নিজে উত্তমকুমারের সঙ্গে কাজ করেছেন। তার মধ্যে বাঙালির মনের মণিকোঠায় ঠাঁই পেয়েছে 'ঝিন্দের বন্দী', 'স্ত্রী', 'দেবদাসের' তিনটি ছবি। প্রতিটি ছবিতেই উত্তমকুমারকে অভাবনীয় ফাইট দিয়েছেন সত্যজিতের মানসপুত্র। এমনকী বাকি ছবিগুলিতেও সৌমিত্র-উত্তমের স্কোরবোর্ড ছিল প্রায় সমানে সমানে।
উত্তমকে সর্বদাই ছাপিয়ে গেছে সৌমিত্রর ‘অ্যাকাডেমিক ইনটেলিজেন্স’
এদিকে ফিল্ম-তাত্ত্বিকেরা বরাবরই সৌমিত্রের অভিনয়কে বুদ্ধিপ্রধান আর উত্তমের অভিনয়কে আবেগপ্রধান তকমা দিয়ে এসেছেন। এমনকী উত্তম কুমারের নায়কোচিত অভিনয়ের সঙ্গে সৌমিত্রর ‘অ্যাকাডেমিক ইনটেলিজেন্স' খাপ খায়না বলেই তাদের মত। তা ছাড়া জনপ্রিয়তার বিচারে দুই সমকালীন অভিনেতার মধ্যে কে বেশি এগিয়ে তা নিয়ে বিতর্ক চললেও স্বকীয়তার বিচারে দুজনেই বাঙালীর মননে দুই ভিন্ন আসনে আজীন অধিষ্ঠিত থাকবেন সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
‘বেলাশেষেও’ অপরাজিত অপু
এদিকে সিনে বোদ্ধাদের মতে রিয়্যালিজমের মোড়কে নিজেকে 'মেথড অ্যাক্টর' বলতেই বেশি স্বস্তি পেতেন সৌমিত্র। অন্যদিকে হ্রদ, এখানে পিঞ্জর, যদুবংশ বা, অগ্নীশ্বরের মতো চলচ্চিত্রে রিয়্যালিজমকে অন্য আঙ্গিকে দেখতে চেয়েছিলেন উত্তমকুমার। তৈরি করেছিলেন নিজস্ব এক ঘরানা। সৌমিত্র কিন্তু আজীবন চেষ্টা করেও এই আলাদা একটা ধাঁচ গড়ে তুলতে পারেননি বলেই মত চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের। তাই মিনু কাফেতে তাঁর অভিনয় ভীষণভাবে আবেগধর্মী হয়েও কোথাও যেন হারিয়ে যায়। অন্যদিকে দেবদাস, ইন্দিরার মতো সিনেমায় প্রবল সম্ভাবনা জাগিয়েও কোথাও যেন ব্যর্থ সৌমিত্র। অন্যদিকে উত্তম পরবর্তী যুগে বা বলা ভালো নিজের বার্ধক্যকেই রূপোলী পর্দায় নিজের শানিত বুদ্ধিমত্তার ছাপ আর তীব্র ভাবে রাখতে শুরু করেন সৌমিত্র। যার রেশ তার ‘বেলাশেষেও' অমলীন।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে বাংলায় টুইট মোদীর, শোক প্রকাশ রাষ্ট্রপতি থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতার