বিতর্কিত এনআরসি নিয়ে ‘নয়েজ অফ সাইলেন্স’ তৈরি করলেন বাঙালি পরিচালক, মুক্তি ওটিটিতে
বিতর্কিত এনআরসি নিয়ে ‘নয়েজ অফ সাইলেন্স’
করোনা আবহ ও দেশে চলা বিতর্কিত কৃষি বিল আন্দোলনের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আরও কিছুটা অস্বস্তিতে পড়বে বিজেপি শাসিত এনডিএ সরকার। সত্যি ঘটনাকে অবলম্বন করে বলিউডে প্রথমবার তৈরি হতে চলেছে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী নিবন্ধীকরণ বা এনআরসির ওপর ছবি, যার জন্য অসমের লক্ষাধিক মানুষ ভিটেছাড়া হয়েছিলেন। 'নয়েজ অফ সাইলেন্স’–এর পোস্টার অন্তত সেটাই দাবি করছে।
এনআরসি নিয়ে ছবি তৈরি
এ বছরের শেষে এই ছবি ওটিটিতে মুক্তি পাবে এবং পুরো ছবির শুটিং হয়েছে ত্রিপুরাতে, যা বলিউডে প্রথম। এই ছবির পরিচালক সইফ বৈদ্য জানিয়েছেন যে অসমের এনআরসি তালিকা থেকে যে সমস্ত মানুষকে বাদ দেওয়া হয়েছিল এবং আজও যাঁরা নিজেদের শেকড় প্রমাণ করার জন্য আপ্রাণ লড়ছেন, তাঁদের দুঃখ-দুর্দশা চিত্রিত করার একমাত্র লক্ষ্য নিয়ে এটি তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, ভারতের আসল নাগরিক ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য নাগরিকপঞ্জী সংশোধন অসম চুক্তি ১৯৮৫ গৃহীত হয়েছিল। ১৯৫১ সালের পর দেশে সবচেয়ে বড় নাগরিক সংশোধন ছিল এটি। ২০১৩ সালে এই পদ্ধতি শুরু হয়, যা ২০১৯ সালে গিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হয়, যেই তালিকা থেকে ১৯ লক্ষ মানুষকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। যারঅর্থ পুরো প্রক্রিয়াটির পরে তাদের নাগরিকত্ব হারাতে পারে যদি না তারা ‘উত্তরাধিকারের নথি' জমা না দেয় বা এ পর্যন্ত ভারতীয় বংশোদ্ভুত হওয়ার প্রামাণ্য প্রমাণ দিতে অসফল হয়।
ছবি তৈরির পরিকল্পনা মাথায় এল কীভাবে
শিলিগুলির বাসিন্দা বৈদ্য জানিয়েছেন যে তাঁর প্রাক্তন সহকারী পরিচালক, যাঁর বাবা সেনায় কাজ করতেন, তাঁদের এনআরসি থেকে বাদ দেওয়া হয়। দেশের মাটিতে জন্ম হয়েও বিদেশি তকমা এঁটে দেওয়া হয়েছে দুজনের পিঠে। এরপর তিনি এই ছবি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। পরিচালক বলেন, ‘আদিত্যকে প্রত্যেক মাসে দু'বার করে অসমে আদালতে হাজির দিতে যেতে হত। আদিত্য ও তাঁর মাকে নাগরিকপঞ্জীর খসড়া তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। যদিও তাঁর বাবা ভারতীয় সেনায় দেশের কাজ করে চলেছেন। ২০১৫ সাল থেকে দিত্য প্রত্যেক মাসে দু'বার অসম যায়। আমার মনে হয়েছে এই গল্পটি সকলের জানা দরকার।'
অধিকাংশই ত্রিপুরার অভিনেতা
সইফ বৈদ্য প্রাথমিকভাবে এই ছবির শুটিং অসমেই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সহকারি প্রযোজক জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলে তিনি তাঁর এই পরিকল্পনা রদ করেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ২৮ দিনের মাথায় শুটিং শেষ হয় এবং ত্রিপুরার প্রায় ২০ লোকেশনে এই শুটিং হয়। যার মধ্যে ছাম্বিমুড়া, উনাকোটি, দুর্গাবাড়ি চা বাগান ও আগরতলার কিছু জায়গা রয়েছে। এই ছবিতে ৫৪ জন অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে অধিকাংশই ত্রিপুরার। হৃষি রাজ, সায়ন্তিকা নাথ ও মিনাক্ষী ঘোষ মুখ্য ভূমিকা সহ ৪৪ জন অভিনেতাই ত্রিপুরার। এছাড়াও এও ছবিতে রয়েছে ফিরদৌস হাসান, অজয় কুন্দল ও পুজা ঝা, যিনি জামতারা, লক্ষ্য, বীরজারা ও মর্দানির মতো বলিউড ছবিতে অভিনয় করেছেন। অভিনেতা হৃষি রাজ জানান যে তাঁর সাফল্য এটাই যে তিনি বলিউডের হয়ে ত্রিপুরাতে কাজ করলেন। ছবিটি খুব ভালো সাড়া ফেলেছে, বড় পর্দায় মুক্তির আশা রাখলেও এই পরিস্থিতিতে ওটিটিতে মুক্তি করাতে হবে।
ছবির গল্প
‘নয়েজ অফ সাইলেন্স'র গল্প হল এক দম্পতির যাদের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় ও এক রোহিঙ্গা মুসলিম মেয়ের, যিনি তাঁর মাকে খুঁজতে ভারতে প্রবেশ করেন। বৈদ্য বলেন, ‘এই ছবির মাধ্যমে, আমি দেশবাসীকে এনআরসি ও সিএএ-এর বিষয়ে জানাতে চাই। আমি আশা রাখছি ছবিটি দর্শকদের মনের গভীরে পৌঁছাবে। পরিচালক বলেন করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে সিনেমা হলে ছবিটি মুক্তি পাবে না, তবে এক-দেড়মাসের মধ্যেই জি ফাইভ, ভুট, অ্যামাজন প্রাইম, নেটফ্লিক্সের মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে।