আর্থিক তছরুপ মামলার মাস্টারমাইন্ড সুকেশের স্ত্রী লীনা, প্রকাশ ইডির চার্জশিটে
২০০ কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণার মামলায় ইডি ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে কনম্যান সুকেশ চন্দ্রশেখরের স্ত্রী লীনা মারিয়া পলকে। লীনা একজন মালায়লাম অভিনেত্রী এবং সে সুজিত সরকারের 'মাদ্রাজ ক্যাফে’তে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিল। ইডি ইতিমধ্যেই এই দম্পতির বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠন করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, অভিনেত্রী লীনা মারিয়া আসলে কনওম্যান, তার স্বামী যে প্রতাররণা চক্র চালাতো তার মাস্টরমাইন্ড ও ষড়যন্ত্র করত এই লীনাই।
চার্জশিটে বলা হয়েছে যে লীনা মারিয়ার সামনে প্রমাণ রাখার পরও সে সব লেনদেন সংক্রান্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং চন্দ্রশেখরের গ্রেপ্তারের খবর জানার পর লীনা তার সঙ্গে থাকা সব প্রমাণ মুছে দিয়েছে। তবে লীনা মারিয়া পলের হুমকির পরই ইডির কাছে মুখ খোলে সহ–অভিযুক্ত অরুণ মুত্থু, আনন্দ মূর্তি ও জগদীশ। প্রঙ্গত, শুক্রবার, সুকেশ চন্দ্রশেখর তার সহযোগী পিঙ্কি ইরানির সঙ্গে মুখোমুখি হয়, এই পিঙ্কি তাকে তিহার জেলে অভিনেত্রী জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
ইডির প্রথম চার্জশিটের রিপোর্ট অনুযায়ী, পিঙ্কি জ্যাকলিনের জন্য দামি উপহার বাছাই করত এবং চন্দ্রশেখর যখন সেই উপহারের টাকা প্রদান করে দিত তখন পিঙ্কি গিফ্ট সেন্টার থেকে উপহার সংগ্রহ করে তা অভিনেত্রীর কাছে পৌঁছে দিয়ে আসত। তদন্তকারী এজেন্সি আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার পরই পিঙ্কি ইরানির সঙ্গে চন্দ্রশেখরের মুখোমুখি করায়। ইডি হেফাজতে রয়েছে পিঙ্কি। তদন্তে সহায়তা করার জন্য পিঙ্কিকে ডেকে পাঠানোর পরই ইডি তাকে গ্রেফতার করে।
পিঙ্কি ও সুকেশকে ইডি একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছে। ইডি জানতে চেয়েছে যে সুকেশকে পিঙ্কি এই অপরাধ সংঘটিত করার জন্য কীভাবে সহায়তা করত? সূত্রের খবর, সুকেশ ও পিঙ্কিকে ৫০টি প্রশ্ন করা হয় যার মধ্যে খুব কম অসংলগ্নতা রয়েছে তাদের দু’জনের বয়ানে। সম্প্রতি অর্থ তছরূপ মামলায় সুকেশ চন্দ্রশেখর ও তার স্ত্রী লীনা মারিয়া পলকে গ্রেফতার করেছে ইডি। এই সুকেশ জেলে বসেই প্রতারণা কাণ্ড চালাচ্ছিল। র্যানব্যাক্সির কর্ণধার শিবিন্দর ও মালবিন্দর সিংয়ের জামিনের ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের স্ত্রীয়েদের কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে এই দম্পতি এখন দিল্লি পুলিশের হেফাজতে তিহার জেলে রয়েছে। এফআইআরে শিবিন্দর সিংয়ের স্ত্রী অদিতি সিং চন্দ্রশেখরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে সে অদিতি সিংয়ের স্বামী শিবিন্দর সিংকে জামিনে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিক সরকারি কর্মকর্তাদের ছদ্মবেশে ফোন করে এবং তাঁর থেকে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। চন্দ্রশেখর এবং লীনা মারিয়ার বিরুদ্ধেও ভুয়ো সংস্থা ব্যবহার করে বিদেশে অর্থ জমা করার অভিযোগ রয়েছে।
চন্দ্রশেখরের মামলাটি প্রকাশ্যে আসে যখন অভিনেত্রী জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ ও নোরা ফতেহির সঙ্গে সুকেশের যোগসূত্র সামনে চলে আসে। এজেন্সির চার্জশিটে বলা হয়েছে এই দুই বলি ডিভাই সুকেশের কাছ থেকে মূল্যবান উপহার পেয়েছেন। জ্যাকলিন ইডিকে জানিয়েছেন যে কনম্যান শেখর রত্না ভেলের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং সুকেশ নিজেকে সান টিভির কর্ণধার বলে পরিচয় দেয়। চার্জশিটে সুকেশ দাবি করেছে যে জ্যাকলিন তার বন্ধু হয় এবং সে তাঁকে একাধিক উপহার ও নামী ব্র্যান্ডের পোশাক কিনে দিয়েছে। ইডিকে সুকেশ তার জেরায় বলেছে, 'আমি জ্যাকলিনকে ১৫টি কানের দুল, পাঁচটি বার্কিন ব্যাগ ও ওয়াইএসএল, গুচি সহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের ব্যাগ, কার্টিয়ারের চুড়ি ও টিফানি ব্রেসলেট উপহারে দিয়েছি। এই গয়না ও কানের দুলগুলিতে হিরে বসানো এবং সব মিলিয়ে প্রায় ৭ কোটির উপহার হবে।’