ছবি : অন্তরালেই দাহ মহানায়িকাকে, গোটা কলকাতা থামল কেওড়াতলায়
কলকাতা, ১৭ জানুয়ারি: বেল ভিউ থেকে বাড়ি হয়ে মহাশ্মশান।
মিন্টো পার্ক থেকে বালিগঞ্জ। সেখান থেকে কেওড়াতলা। দক্ষিণ কলকাতা স্তব্ধ কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেল। রাস্তার দু'ধারে, বাড়ির ছাদে থিকথিকে ভিড়। শুধু কালো-কালো মাথা। আমজনতা থেকে পুলিশ, সব্বার মুখ থমথমে। কেউ তো কেঁদেই ফেললেন। 'স্বপ্নের নায়িকা' চলে গেলেন যে!
দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক নিজেকে অন্তরালে রেখেছিলেন মহানায়িকা। শেষ ইচ্ছা ছিল, মরণের পরেও অন্তরাল বজায় রেখে শেষকৃত্য হোক। মায়ের এই ইচ্ছার কথা সকালেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান মেয়ে মুনমুন সেন। মুখ্যমন্ত্রী রাজি হন। পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে সব ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন।
বেল ভিউ থেকে যখন মহানায়িকার মরদেহ নিয়ে বেরোচ্ছে শববাহী শকট, তখন সে কী আকুতি! কালো কাচের গাড়িতে কাঠের কফিনে বন্দী সুচিত্রা সেনের মরদেহ। তবুও সেই ছবিই এক ঝলক পাওয়ার জন্য মিডিয়ার ধাক্কাধাক্কি। মিন্টো পার্ক, বালিগঞ্জ, পার্ক স্ট্রিট, ধর্মতলা চত্বরে যাঁদের অফিস, তাঁরা অনেকে কাজ ফেলে এসে ভিড় জমিয়েছেন। যদি একটু দেখা যায়! কিন্তু পুলিশ কড়া নিরাপত্তায় মরদেহ বের করে নিয়ে যায় বালিগঞ্জের বাড়িতে।
বালিগঞ্জের বাড়িতে অল্প সময়ের জন্য রাখা হয় মরদেহ। তার পর সোজা কেওড়াতলা। শ্মশানে ততক্ষণ পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রসেনজিৎ, দেব প্রমুখ হাজির। বাইরে হাজার-হাজার লোক। মহানায়িকার দেহ যখন নামানো হচ্ছে গাড়ি থেকে, তখন যেন ভিড় আর বাঁধ মানে না। পুলিশের তৈরি ব্যারিকেড সরতে শুরু করেছে মানুষের চাপে। উৎসুক জনতাকে ঠেকাতে ধেয়ে আসে পুলিশ। অধৈর্য জনতার সঙ্গে বচসা শুরু হয় পুলিশের। অবস্থা বেগতিক দেখে এগিয়ে আসেন দেব, প্রসেনজিৎ। তাঁরা মানুষের কাছে সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
চন্দন কাঠের চিতায় অগ্নিসংযোগ করার সময়ও ঘিরে রাখা হয় মহানায়িকার মরদেহ। পাছে কেউ দেখে ফেলে! মুনমুন সেন চিতায় অগ্নিসংযোগ করেন। যতক্ষণ চিতা জ্বলেছে, ততক্ষণ সবাই শোকস্তব্ধ হয়ে পুতুলবৎ দাঁড়িয়েছিলেন।
দাহকার্য শেষ হয় বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ। শীতের নিস্তেজ সূর্য তখন পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়েছে। ম্লান আলোয় ম্লানতর হয়ে উঠেছে মানুষের মুখ।
কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে...
বেলভিউ নার্সিংহোমে মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছিলেন মুনমুন সেন। শুক্রবার পিটিআই-এর তোলা ছবি।
কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে...
অন্তরালেই বিদায় নিলেন মহানায়িকা। তাঁর কফিনবন্দী দেহ রওনা দিল কেওড়াতলা মহাশ্মশানের পথে।
কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে...
কেওড়াতলা মহাশ্মশানে মহানায়িকার শেষকৃত্যে মেয়ে মুনমুন ও দুই নাতনি রিয়া-রাইমা।
কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিলে কাছে...
মাকে শেষ বিদায় জানাচ্ছেন মুনমুন সেন।
কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিলে কাছে...
ফুল দিয়ে মহানায়িকাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।