'মহানায়ক' হয়ে ওঠার 'উত্তম' রূপকথা, এই আজানা ঘটনাগুলি যার পরতে পরতে মিশে
তাঁর চোখ কখনও কথা বলে শিশুর সারল্যে, আবার রোম্যান্টিসিজমে ওই চোখের চাউনিই চরম মায়াবী হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। তিনি উত্তম কুমার। বাঙালির মহানায়ক।
তাঁর চোখ কখনও কথা বলে শিশুর সারল্যে, আবার রোম্যান্টিসিজমে ওই চোখের চাউনিই চরম মায়াবী হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। তিনি উত্তম কুমার। বাঙালির মহানায়ক। কলকাতার ছাপোষা বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তিত্ব বাংলা সিনেমায় লিখে গিয়েছেন এক রূপকথা। লিখেছেন অরুণ কুমার থেকে উত্তম কুমার হয়ে ওঠার কাহিনি। এই কাহিনি রূপকথার মহানায়ক হয়ে ওঠার গল্প বলে। এই রূপকথার কিছু অচেনা দিক একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
'উত্তম' যুগ
সেভাবে দেখতে গেলে বাংলা চলচ্চিত্রে 'উত্তম' যুগের সূচনা ১৯৫২ সালে । ছবি 'বসু পরিবার'। সেখানে নায়ক নন, উত্তম ছিলেন পার্শ্ব চরিত্রে । তবুও তাঁর অভিনয় নজর কাড়তে শুরু করে সকলের। কিন্তু এই প্রশংসা আর সাফল্যের মুখ দেখার আগের সময়টায় অস্বাভাবিক লড়াই করতে হয়েছিল উত্তমকে।
[আরও পড়ুন:কতটা চড়াই উতরাই পেরিয়ে তিনি 'সুপ্রিয়া দেবী' হয়েছেন , কী বা ছিল তাঁর আসল নাম]
শুরুর দিকের গল্প
১৯৪৭ সালে হিন্দি চলচ্চিত্র 'মায়াডোর' -এ সুযোগ পেয়েছিলেন উত্তম। তবে তা 'এক্সট্রা আর্টিস্ট'-এর জন্য। তখনও অরুণ কুমার 'উত্তম' হয়ে ওঠেননি। এরপর ১৯৪৮ সালে 'দৃষ্টিদান' ছবিতে এক অল্প বসয়ী চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। পরের ছবি ১৯৪৯ এর 'কামনা'। ছবির সুপার ফ্লপ। পর পর আরও কছু ছবি চলল না। তকমা লাগল 'ফ্লপস্টার'-এর।
ফ্লপস্টার-এর লড়াই
চরম প্রতিকূলতার মধ্যে সুযোগ এল 'মর্যাদা' ছবিতে অভিনয়ের। অরুণ থেকে হলেন অরূপ কুমার। কিন্তু তাতেও কাজ হল না। এরপর পাহাড়ি সান্যালের পরামর্শে নাম পাল্টে হল উত্তম কুমার। এরপর মুক্তি পেল ১৯৫১ সালের ছবি 'সঞ্জীবনী'। সে ছবিও ফ্লপ। কিন্তু তারপরই আসে 'বসু পরিবার'।
শুরু সাফল্যের
এরপর উত্তমকুমারের কেরিয়ারে এসেছে 'সাড়ে ৭৪'। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন সুচিত্রা। আর ফিরে তাকাতে হয়নি বাঙালির শ্রেষ্ঠ ম্য়াটিনি আইডলকে। এক বছরে এসেছিল ১৪ টি ছবির সুযোগ। ৩৩ বছরে বাংলা হিন্দি মিলিয়ে প্রায় ২৫০ এর বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। মায়া মুখোপাধ্যায় থেকে , কাবেরী গুপ্ত, ভারতী দেবী, সন্ধ্যারানী, সুচিত্রা, সাবিত্রী, সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে ততদিনে একের পর এক ব্লক বাস্টার ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
বাঙালির 'নায়ক'
'আই উইল গো টু দ্য টপ... দ্য টপ.. দ্য টপ' , বাঙালিক আবেগকে উস্কানোর জন্য় উত্তমের 'নায়ক ' ছবির এই সংলাপই যথেষ্ট ছিল। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত , উত্তম-শর্নিলা অভিনীত এই সংলাপ যেন আদ্যোপান্ত 'নায়ক' উত্তম কুমারকে বর্ণনা করে।
এই পথ যদি না শেষ হয়
১৯২৬ সালে ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্ম হয় উত্তম কুমারের। অভাব অনটনের সংসারে জীবনে খুব চটজলদিই রোজগারে বেড়িয়ে পড়তে হয় উত্তমকে। মাসে ৭৫ টাকা বেতনের প্রথম চাকরিতে সংসার চলে যাচ্ছিল। ততক্ষণে উত্তমের জীবনে এসেছেন গৌরী দেবী। এরপর থিয়েটার অনুরাগী উত্তমের ফিল্ম কেরিয়ার শুরু হয়। অভিনয়ের প্রতি অনুরাগ শেষ দিনেও , 'ওগো বধূ সুন্দরী' ছবির সেটে তাঁকে আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে ছিল। এরপর ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই সকলকে ছেড়ে চলে যান উত্তম। থেমে যায় রূপকথার সেই পথ চলা।