সুরের ঘরে সন্ধ্যা নামিয়ে আর উঠবেনা গানের ইন্দ্রধনু
সুরের ঘরে সন্ধ্যা নামিয়ে আর উঠবেনা গানের ইন্দ্রধনু
অবশেষে লড়াই শেষ। এগানের প্রজাপতি আর পাখায় পাখায় রঙ ছড়াবেনা। সুরের আকাশে আবার কালো অন্ধকার নামিয়ে চিরতরে বিদায় নিলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বাংলা গানের এই কিংবদন্তী শিল্পী। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার জন্য গত ২৬ জানুয়ারি তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ায় আরও ভালো চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু কাজ এলনা কোনও প্রচেষ্টা। ১৫ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে চলে গেলেন ৯০ বছর বয়সী কিংবদন্তী।
কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে
আর কোনওদিন তাঁকে কাছে পাবেনা এই বাংলা। আরও কিছু কথা সব বাকি থেকে গেল বলতে। দীর্ঘ ১৯ দিন চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তবে দিন কয়েক আগে হাসপাতাল সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছিল যে একটু সুস্থ আছেন কিংবদন্তী। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকেই ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে তাঁর। কোভিড মুক্তও হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু করোনা পরবর্তী শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন চিকিৎসকরা। ব্লাড প্রেশার কমে যাওয়ায় তাঁকে ভেসোপ্রেসার সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। সব আশঙ্কা সত্যি করে শেষ লড়াই জিততে পারলেন না গীতশ্রী।
পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান ও পরবর্তী অবস্থা
প্রসঙ্গত, জানুয়ারি মাসে তাঁকে 'পদ্মশ্রী' পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু শিল্পীকে ফোন করে সেই কথা জানানো হলে 'পদ্মশ্রী' পুরস্কার নিতে অসম্মত হন নবতিপর এই কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী। সেই সম্মান প্রত্যাখ্যান করার পর তাঁর কন্যা সংবাদমাধ্যম কে জানান যে শিল্পী ওই সম্মান নিতে চাননি। আর এই ঘটনায় তুমুল আলোড়ন হয় বাংলা শিল্পী মহলে। তারপর থেকেই শিল্পী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে খবর।
'ভাবতে পারছি না' শোক মমতার
গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে নিজের বড় দিদি হিসেবে দেখেন তিনি। একাধিকবার এই কথা বলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়। এমনকি শরীর খারাপ হওয়ার পরে প্রতি পদে পদে সঙ্গীতশিল্পীর সবরকম খেয়াল রাখেন তিনি। শুধু তাই নয়, গীতশ্রীকে ভালো চিকিৎসা দিতে মমতার তত্বাবধানেই তাঁকে উন্নত হাসপাতালে স্থানাতরিত করা হয়। আপাতত তিন দিনের সফরে উত্তরবঙ্গে গিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু এই শোক সংবাদ ফিরে তড়িঘড়ি কলকাতা ফিরে আসছেন তিনি। ইতিমধ্যেই শোক প্রকাশ করে বলেছেন, 'ভাবতে পারছি না, তাঁর মৃত্যুতে সঙ্গীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল।'
স্মৃতিতে সন্ধ্যা
১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর কলকাতার ঢাকুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করে্ণ গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ৬ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠা। পণ্ডিত সন্তোষ কুমার বসু, অধ্যাপক এ টি কান্নানের মত প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত জগতের মহীরুহদের কাছ থেকে সুর ও স্বরের তালিম নিয়েছেন তিনি। বড়ে গুলাম আলি খাঁ সাহেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছলেন। সপ্তপদী, অগ্নি পরীক্ষা, দেওয়া নেওয়া, পিতা পুত্র, জয় জয়ন্তী, নিশিপদ্ম, অ্যান্টেনি ফিরিঙ্গী' একের পর এক কালজয়ী চলচ্চিত্রে কালজয়ী গান গেয়ে বাংলার সন্ধ্যা হয়ে ওঠেন কিংবদন্তী। বাংলার মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের শ্রোতা কণ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৬৬ সালে গীতিকার শ্যামল গুপ্তর সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁদের কন্যা রয়েছেন। কর্ম জীবনে পেয়েছেন একাধিক সম্মান। লাভ করেছেন বঙ্গ বিভূষণ, 'আমাদের ছুটি ছুটি' গানের জন্য পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। এত সুর আর এত গানের মধ্যে তিনি সদা অমর হয়ে থাকবেন আপামর শ্রোতার হৃদয়ে।
আরও এক সোনালি তারা ঝরে গেল সুরের আকাশ থেকে, লতার ৯ দিন পর সুরলোকে সন্ধ্যাও