সঙ্গীতশিল্পী পিলু ভট্টাচার্যের জীবনাবসান, শোকের ছায়া বাংলার বিভিন্ন মহলে
singer, death, tollywood, গায়ক, সঙ্গীত,মৃত্য়ু
প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী পিলু ভট্টাচার্য। তাঁর প্রয়াণের খবর গতরাতেই সঙ্গীতমহলের অনেকের কাছেই পৌঁছে গিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এরপর এদিন আসে তাঁর মৃত্যুর দুঃসংবাদ। পিলু ভট্টাচার্যের প্রয়াণে সঙ্গীতমহলের একাধিক শিল্পী সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের শোক জ্ঞাপন করেছেন। সঙ্গীতশিল্পী জোজো থেকে শুরু করে একাধিক তারকা এই প্রাণোচ্ছ্বল মানুষটিকে নিজের মতো করে স্মরণ করেছেন।
বাংলার বুকে আরও এক নক্ষত্রপতন। পিলু ভট্টাচার্য শুধু যে একজন সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন তা নয়, তাঁর সঙ্গে বাংলার রাজনৈতিক মহলের যোগও বেশ প্রগাঢ়। এহেন এক ব্যক্তিত্বকে হারিয়ে রীতিমতো শোকস্তব্ধ বাংলার বিভিন্ন মহল। বহু দিন ধরেই বুকে ব্যথা নিয়ে অসুস্থতার মধ্যে ছিলেন পিলু ভট্টাচার্য। রাষ্ট্রপ্রতি পুরষ্কারপ্রাপ্ত এই সঙ্গীতশিল্পী আচমকাই বৃহস্পতিবার রাতে বুকে ব্যথা অনুভব করেন। জানা গিয়েছে, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে যাওয়ার পথেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে হৃদযন্ত্র জনিত সমস্যায় বহুদিন ধরেই ভুগছিলেন পিলু ভট্টাচার্য। এরপর সেই সমস্যা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাও করান। এরপর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন। তবে তারপরও রয়ে গিয়েছিল সমস্যা।
পিলু ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক পরিচিতি বলছে, একটা সময় তিনি সুভাষ চক্রবর্তীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কার্যত বাংলার প্রাক্তন প্রয়াত এই মন্ত্রীর ঘরের লোক হয়ে উঠেছিলেন পিলু ভট্টাচার্য। বিভিন্ন বাম সভায় পিলু ভট্টাচার্যকে গান গাইতে দেখা যেত। প্যারডি গানের হাত ধরে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকেন পিলু ভট্টাচার্য। পরবর্তী সময় পাল্টে যায় বাংলার রাজনৈতিক ঘরানা। পিলু ভট্টাচার্য তখন বিজেপির দিকে যেতে থাকেন।
জানা গিয়েছে, গতরাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পিলু ভট্টাচার্যের প্রয়াণের খবর বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তা নিয়ে নিশ্চিত বার্তা আসে পিলু ভট্টাচার্যের পুত্র ঋতর্ষি ভট্টাচার্যের ফেসবুক পোস্ট থেকে। ঋতর্ষি পিলু ভট্টাচার্যের অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে লেখেন, 'আমি ঋতর্ষি ভট্টাচার্য্য, অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, আমার বাবা শ্রী পিলু ভট্টাচার্য্য আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন । তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করুন । ' এর সঙ্গেই গোটা বাংলা থেকে পিলু ভট্টাচার্যের বিভিন্ন গুণমুগ্ধরা তাঁর প্রয়াণে শোকবার্তা জানান। পিলু ভট্টাচার্যের শেষ পোস্টে রয়েছে 'মব ডান্স' এর একটি ভিডিও। যেখানে তিনি লিখেছেন, ' Ministry Of Culture, Government of India কে অশেষ ধন্যবাদ এই পাগলকে আর একটা পাগলামি কাজ Flash Mob Dance এর দায়িত্ব দেওয়ার জন্য ।'
আর চারপাঁচজন শিল্পীর মতোই কেরিয়ারের শুরুতে বেশ লড়াই করে টলিউডে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করেন পিলু ভট্টাচার্য। পরপর বহু ফিল্মে তাঁর সুরের গান হিট হয়ে যায়। তাঁর সুরে বহু অ্যালবামও আসতে থাকে। ২০০৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল পিলু ভট্টাচার্যের রাধামাধব অ্যালবামটি। সেখানে তাঁর মৌলিক গান রীতিমতো জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে। রাতারাতি হিট হয় তাঁর লেখা এই বিভিন্ন ধরনের গান। পিলু ভট্টাচার্যের প্রয়াণ সংবাদ পেয়ে সঙ্গীতশিল্পী জোজো লিখেছেন, ' পিলু এটা ঠিক হল না বন্ধু।' অন্যদিকে, রিঙ্গো নিজের পোস্টে লিখেছেন, 'সি ইউ অন দ্যা আদার সাইড মাই ফ্রেন্ড ।'
প্যারডি গানে পিলু ভট্টাচার্যের জুড়ি মেলা ভার। এককালে বাম রাজনীতিতে বিশ্বাসী পিলু ভট্টাচার্যের সঙ্গে পরবর্তীকালে গেরুয়া রাজনীতির মেলবন্ধন হয়। বহু জায়গাতেই বিজেপির হয়ে তিনি প্রচারে নামেন। এদিকে, সঙ্গীতের প্রতি নিজের অনুরাগকে রাজনৈতিক পালাবদলের মাঝেও ধরে রেখেছিলেন প্রথিতযশা এই সঙ্গীতশিল্পী। বহু ধরনের লোকগানের এপর কাজ করেছেন পিলু ভট্টাচার্য। এদিকে, বহু সূত্রের খবর, বাংলার বাম রাজনীতি থেকে দবরে সরে গেলেও সুভাষ চক্রবর্তীর পরিবারের থেকে দবরে সরে যাননি পিলু ভট্টাচার্য। গত ৩ রা অগাস্ট সুভাষ চক্রবর্তীর বাড়িতে প্রাক্তন মন্ত্রীর প্রয়াণ দিবসে পিলু ভট্টাচার্য গিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
শুধু যে গানের জগতেই পিলু ভট্টাচার্যের বিচরণ রয়েছে, তা নয়। গানের পাশাপাশি খেলাধুলো নিয়ে বেশ উৎসাহী ছিলেন পিলু ভট্টাচার্য। তিনি ক্রীড়াপ্রেমী ব্যক্তি হিসাবে রীতিমতো পরিচিত ছিলেন ঘনিষ্ঠমহলে। ২০১৯ সালে ক্রিকেটের টিম ইন্ডিয়ার জন্য বিশেষ একটি গান লিখেছিলেন পিলু ভট্টাচার্য । গানটি হিন্দিতেও গেয়েছিলেন তিনি। এরপর কলকাতা শহরে মারাদোনার প্রবেশ ঘটলে, ফুটবলের রাজপুত্রের সামনও নিজের লেখা গান গেয়েছেন এই যশস্বী গায়ক।